বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন - ক


ক-অক্ষর গোমাংশ (বর্ণজ্ঞানহীন ব্যক্তি) – না জানে লেখাপড়া, না আছে বুদ্ধি - ছেলেটা একেবারে ক-অক্ষর গোমাংশ।

কচু বনের কালাচাঁদ (অপদার্থ) – পড়াশুনার নাম নেই, পোশাকের কি ঘটা। এমন কচুবনের কালাচাঁদ আর দেখিনি বাবা।

কথায় চিঁড়ে ভিজে না (ফাঁকা আওয়াজে কাজ হয় না) – লোকের উপকার করতে গেলে শুধু কথায় চিঁড়ে ভিজে না, কাজ দেখানো চাই।

কলুর বলদ (নির্বিকারে পরিশ্রম করা) – সে না বুঝে-সুজে কেবল কলুর বলদের মতো খেটে মরে।

কল্কে পাওয়া (পাত্তা পাওয়া) – কেমন ভাই নতুন জামাই, বিয়ে করতে যাবার সময় আমাদের নাকি নিয়ে যাবে, এখন দেখছি তোমার কল্কে পাওয়াই ভার হলো।

কপাল কাটা (অদৃষ্ট মন্দ হওয়া) – বিধবার একমাত্র পুত্রের মৃত্যুতে তার কপাল কেটেছে।

কাজির বিচার (গোঁজামিল দিয়ে বিচার) – আরে ভাই, বিবাদ তো মিটেই গেল, এ যে কাজির বিচার।

কাজের কাজি (উপযুক্ত ব্যক্তি) – ইউনিয়ন পরিষদ ঘঠিত হলো, কিন্তু কাজের কাজি কেউ নেই।

কুড়ের বাদশা (ভয়ানক কুড়ে) – তুমি দেখছি একটা কুড়ের বাদশা, খেয়েদেয়ে গল্প ফাঁদলে সংসার চলবে কি করে?

কংস মামা (নির্মম আত্মীয়) – কংস মামার হাত থেকে উদ্ধার না পেলে আর বাঁচার উপায় নেই, জীবন যায় যায়।

কানাকড়ি (কপর্দক) – লোকটি পকেটে হাত দিয়ে দেখল যে, তার কানাকড়িও নেই।

কাকভুষণ্ডী (দীর্ঘজীবী) – আমার দাদা প্রায় ১২০ বছর বেঁচে কাকভুষণ্ডী হয়েছিলেন। / বৃদ্ধের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি সবই গেল, কিন্তু সে এখনও কাকভুষণ্ডী হয়ে বেঁচে রইল।

কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়া (ব্যথার ওপরে ব্যথা দেওয়া) – যথাসর্বস্ব খুইয়ে সে শোকাতুর; তার ওপর ভর্ৎসনা করে তার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিও না।

কাঁচা বাঁশে ঘুণ ধরা (অল্প বয়সে বিগড়ানো) – শিশুকাল থেকে ছেলেদের দিকে নজর না রাখলে কাঁচা বাঁশে ঘুণ ধরবে।

কাঁচা হাত (অপক্ব) – লোকটির লেখা ভালো নয়, দেখেই মনে হয় কাঁচা হাতের লেখা।

কেঁচো দিয়ে কাতলা ধরা (তুচ্ছ বস্তুর সাহায্যে অসম্ভব বিষয়কে করায়ত্ত করা) – আরে মুন্সীর ছেলেটা বিয়ে করেছে জজের মেয়ে, এ দেখছি কেঁচো দিয়ে কাতলা ধরলে।

কাঁচা পয়সা (নগদ প্রচুর উপার্জন) – ভালো ডাক্তার হতে পারলে কাঁচা পয়সার অভাব নেই।

কেতাদুরস্ত (পরিপাটি) – ওহে বাপু শুধু কেতাদুরস্ত হলেই চলবে না, কিছু বিদ্যাও থাকতে হবে।

কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা (শত্রু দ্বারা শত্রু নাশ) – আসাদ আমার বিরুদ্ধে গিয়ে কি করবে, তার অস্তরঙ্গ বন্ধুকে আমি তার বিরুদ্ধে লাগিয়েছ, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে জানি।

কেঁচো খুঁড়তে সাপ (তুচ্ছ বিষয় থেকে গুরুতর বিষয়ের উদ্ভব) – বাতেনের চুরির সামান্য ব্যাপারটা সন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ বিমল তালুকদারের সক্রিয়তা বুঝতে পারলো -এ যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হলো।

কপাল ফেরা (অবস্থার উন্নতি) – কন্ট্রাকটরদের যুগ রে ভাই! তারা অল্প দিনের মধ্যেই কপাল ফেরাতে জানে।

কানে খাটো (যে কম শুনতে পায়) – তুমি জানো না ও যে কানে খাটো, চেঁচিয়ে না বললে শুনবে না।

কূপমণ্ডুক (সীমাবদ্ধ জ্ঞান) – ছাত্রীরা অতি শান্তশিষ্ট ও মিতভাষিণী, যদিও কূপমণ্ডুক।

কেউকেটা (সর্বেসর্বা) – স্থানীয় এমপি সাহেব একজন কেউকেটা লোক, তাকে ধরলে স্কুলের কাজটা হতে পারে।

কত ধানে কত চাল (অভিজ্ঞতা অর্জন) – বাপের টাকায় হোটেলে থেকে নবাবী করছে; যখন নিজে রোজগার করে সংসার চালাতে হবে তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল।

কান ভারী করা (কুপরামর্শ দান) – মাতৃহীন কন্যার বিরুদ্ধে বিমাতা স্বামীর কান ভারী করল।

কান খাড়া করা (সতর্ক হওয়া) – ঝোপের ধারে বাঘের গর্জন শুনে শিকারী কান খাড়া করল।

কথার কথা (প্রসঙ্গত যা বলা যায়) – আমি যা বললাম তা কেবল কথার কথা, আসলে কি ঘটবে, বলা যায় না।

কাঁঠালের আমসত্ত্ব (অসম্ভব বস্তু) – তোমার সেদিনকার আষাঢ়ে গল্পটা কাঁঠালের আমসত্ত্বের মতোই আমাদের কাছে উপভোগ্য হয়েছিল।

কেঁচেগণ্ডুষ (পুনরায় শুরু) – কবিতার সরলার্থটি কেঁচেগণ্ডুষ করে লিখ।

কেবলা হাকিম (অনভিজ্ঞ) – ওর মতো কেবলা হাকিম দিয়ে কোনো কাজ হবে না, অন্য চেষ্টা করুন।

কুল কাঠের আগুন (তীব্র জ্বালা) – পুত্রশোকাতুর পিতা একমাত্র পুত্রের মৃত্যুতে অস্তরে কুল কাঠের আগুণ অনুভব করছে।

কোণঠাসা করা (উপেক্ষা করা) – ব্যাপারটা সম্পূর্ণ মীমাংসার পূর্বে তাকে কোণঠাসা করে কোনো লাভ হবে না।

কুনো ব্যাঙ (সীমিত জ্ঞান) – কুসংস্কারের বশীভূত হলে মানুষ মাত্রেই কুনো ব্যাঙ হয়ে পড়ে, স্বাধীন চিন্তাশক্তি লোপ পায়।

কালে ভদ্রে (কদাচিৎ) – কালে ভদ্রে দেখা সাক্ষাৎ হলে আন্তরিকতা জন্মাতে পারে না।

এক কথার মানুষ (উচিত বক্তা) – আমি বাপু এক কথার মানুষ, ঠিক সময়ে টাকা দেব, দেখে নিও।

কংসমামার আদর (নকল আদর/কৃত্রিম ভালোবাসা/ভালোবাসার ভান করে ক্ষতি করা) – এক কসাই ব্যাটার প্রশংসা তো কংসমামার আদর-খুব সাবধান।

কচকচি, কচকচানি (তর্ক-বিতর্ক/বাদ-প্রতিবাদ) – আমি বাপু সহজ কথা ভালোবাসি, তোমাদের কচকচি আমার সয় না।

কচুকাটা করা (কেটে টুকরো টুকরো করা) – একা সে শত্রুসৈন্যকে কচুকাটা করে ফিরে এল।

কটু কাটব্য (তিরস্কার/গালাগালি) – রেগে গিয়ে ওকে অযথা অনেক কটু কাটব্য করে ফেলেছি।

কলজের জোর (অত্যধিক সাহস/বুকের পাটা) – এই ভয়ঙ্কর রাতে একা এতটা পথ যাওয়া? তার কলজের জোর আছে বলতে হবে।

কলা দেখানো (ফাঁকি দেওয়া) – তুমি তাকে এত যত্ন আত্তি করলে আর সে কলা দেখিয়ে চলে গেল?

কলি ফেরানো (দেয়ালে চুনকাম করা) – বছরান্তে অন্তত একবার বাড়ির দেয়ালে কলি ফেরানো উচিত।

কাবু করা (দুর্বল করে ফেলা/শক্তিহীন করা) – ঠাণ্ডা আমাকে কাবু করতে পারবে না।

কিম্ভূত কিমাকার (অদ্ভূতদর্শন ও কদাকার/অদ্ভূত ও কুৎসিত) – লোকটার কিম্ভূত কিমাকার চেহারা আর বিচিত্র বেশবাস দেখে একটু হকচকিয়ে যেতে হয় বই কি।

কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড (হৈ হৈ ব্যাপার/তুমুল হট্টগোল) – গোলমাল শুনে রাস্তায় বেরিয়ে দেখি এক কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড বেধে গেছে।

কুদরত রাখা (শক্তি ধরা, ক্ষমতা রাখা) – সে শরীরে যথেষ্ট কুদরত রাখে।

কুনকি হাতি (যে পোষা হস্তিনী বন্য হাতি ধরতে সাহায্য করে/কৌশলে অন্যকে বশে রাখে) – রহমান সাহেব ব্যবসায় ফায়দা নেয়ার জন্য স্ত্রীকে কুনকি হাতি বানিয়েছেন।

কুবেরের ভাণ্ডার, কুবেরের ধন (অফুরন্ত ভাণ্ডার, অফুরন্ত ঐশ্বর্য) – ঘরে কি কুবেরের ভাণ্ডার রয়েছে যে, সারা জীবন তোমরা বসে বসে খাবে?

কুম্ভীরাশ্রু (লোকদেখানো কান্না/নকল সমবেদনা/কপট অশ্রু) – তার কুম্ভীরাশ্রু দেখে কেউ ভুলবে না।

কুরুক্ষেত্রে-কাণ্ড (প্রলয়ংকর ব্যাপার/প্রচণ্ড যুদ্ধ/তুমুল ঝগড়া বা মারামারি) – তুমি যে রকম ব্যবহার আমাদের সঙ্গে করেছ, তাতে আর কোনো বাপ হলে কুরুক্ষেত্র কাণ্ড হয়ে যেত।

কুসুম-কুসুম (অল্প গরম) – কুসুম-কুসুম জলে স্নান করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

কৃষ্ণের জীব (দুর্বল ও অসহায় প্রাণী) – ওকে আর মেরো না, এবারকার মতো ছেড়ে দাও -শত হলেও কৃষ্ণের জীব!

ক্যাবলা-হাকিম (অনভিজ্ঞ ও বোকা হাকিম বা বিচারক) – ক্যাবলা হাকিম আবার উলটো রায় দিয়ে না বসেন।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post