মার্চের দিনগুলি

বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন - চ, ছ, জ


চাটিবাটি গুটান (বাস্তুত্যাগ করা) – চাটিবাটি গুটিয়ে চলে যাচ্ছ যাও, বলে রাখলাম সেখানে না খেয়ে মরতে হবে।

চক্ষু চড়ক গাছ (বিস্ময়ে হতবুদ্ধি) – চোখের সামনে এমন একটা ভৌতিক কাণ্ড দেখে আমার চক্ষু চড়ক গাছ হলো।

চশমখোর (লজ্জাহীন) – তোমার মতো চশমখোর লোক ভূ-মণ্ডলে বিরল।

চূড়ার ওপর ময়ূর পাখা (ভালোর ওপর ভালো) – করিম সাহেবের জামাতা যেমন সুদর্শন তেমনি বিদ্বান, যেন চূড়ার ওপর ময়ূর পাখা।

চিনির বলদ (যে খাটে অথচ ভোগ করতে পারে না) – ক্যাশিয়ার সাহেব যে চিনির বলদ, হাজার হাজার টাকার হিসাব রাখেন, কিন্তু একটি পয়সাও নেয়ার অধিকার নেই।

চাচা আপন প্রাণ বাঁচা (সর্বাগ্রে নিজের জীবন রক্ষা করা) – বিগত স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মীয়-কুটুম ছেড়ে অনেকে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা বলে চলে যায়।

চুল পাকানো (অভিজ্ঞতা অর্জন) – মাস্টারি করে চুল পাকালাম, তুমি এসেছো ভুল ধরতে।

চক্ষুদান করা (চুরি) – পকেটমার আমার কলমটা চক্ষুদান করে নিয়ে গেল।

চর্বিত চর্বণ (পুনরাবৃত্তি) – আধুনিক লেখকরা অনেক লেখাতেই আজকাল চর্বিত চর্বণ করেন।

চিচিং ফাঁক (গুপ্ত মন্ত্র প্রকাশ) – হেড মাস্টারকে না জানিয়ে মিটিং কর আর যাই কর চিচিং ফাঁক তোমাদের হবে।

চোখের বালি (চক্ষুশূল) – সতীনের মেয়েটি নতুন বৌয়ের যেন চোখের বালি, একেবারে দেখতে পারে না ওকে।

চোখে ধূলি দেয়া (প্রতারণা করা) – আমার চোখে ধূলি দিতে চাও, এতখানি বুদ্ধি তোমার কখনও হয়নি।

চোরের মায়ের কান্না (যে বেদনা কাউকেও জানানো যায় না) – ছেলেকে কোনোদিন সদুপদেশ দাওনি, পরিণামে তোমাকে চোরের মায়ের কান্না কাঁদতেই হবে।

চোরাবালি (প্রচ্ছন্ন আকর্ষণ) – প্রলোভনের চোরাবালিতে সে নষ্ট হলো।

চোখে অন্ধকার দেখা (নিরাশ হওয়া) – ব্যাংক ফেল হওয়ায় রহমান চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল।

চোখ পাকান (ক্রোধ দেখানো) – তোমার চোখ পাকান দেখে আমি ভয় করি মনে করো না।

চোখের মাথা খাওয়া (কানা বা অন্ধ) – তুমি কি চোখের মাথা খেয়েছ যে, ভূগোল আনতে গিয়ে ইতিহাস এনেছ।

চিনির পুতুল (যে অল্প পরিশ্রমে ভেঙে পড়ে) – ভালোভাবে পরিশ্রম কর, এরূপ চিনির পুতুল হয়ে থাকলে শেষে মুশকিলে পড়তে হবে।

চোখে ধোঁয়া দেখা (হতভম্ব হওয়া) – মামলা-মকদ্দমায় হেরে তালুকদার সাহেব চোখে ধোঁয়া দেখতে লাগলেন।

চোখের চামড়া (নির্লজ্জ) – লোকটা সুদখোর, চোখের চামড়া নেই, কাজেই সুদ চাইতে দ্বিধা করল না।

চোখের নেশা (মোহ) – কি চোখের নেশায় তাকে পেয়ে বসেছে, এ নেশা কি সহজে কাটবে?

চোখে সরষে ফুল দেখা (হতবুদ্ধি) – প্রশ্নপত্র কিছুই কমন আসেনি দেখে ছাত্রটি চোখে সরষে ফুল দেখছে।

চিটিংবাজি করা (ঠকানো, প্রতারণা করা) – আমার সঙ্গে চিটিংবাজি করলে তার ফল হাতে হাতে পাবে।

চিৎপটাং (চিৎ হয়ে পড়ে গেছে এমন) – ছোট্ট এক ধাক্কায় একেবারে চিৎপটাং হয়ে পড়ে গেলে?

চুনোপুঁটি (সামান্য লোক/গুরুত্বহীন বা কম ধরের লোক) – চুনোপুঁটিদের হয়রানি না করে বড় বড় চোরাকারবারিদের কাছে যাও।

চুপসানে, চুপসে যাওয়া (সংকুচিত হওয়া) – ধমক খেয়ে ছেলেটা খুবই চুপসে গেলো।

চুলোয় যাওয়া (অধঃপাতে যাওয়া, উচ্ছন্নে যাওয়া) – চুলোয় যাক অমন চাকরি।

চোখ-কান খুলে রাখা (সজাগ ও সতর্ক থাকা) – একটু চোখ কান-খুলে রেখো, তাহলেই সব টের পাবে।

চোখ ছানাবড়া হওয়া (বিস্ময়ে চোখ গোল হয়ে যাওয়া) – এত বড় মাছ দেখে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।

চোখ টাটানো (অন্যের সাফল্য, সমৃদ্ধি প্রভৃতিতে ঈর্ষান্বিত হওয়া) – আমার বাড়ি-গাড়ি দেখে এদের নিশ্চয় চোখ টাটাচ্ছে।

চোখ ফোটা (ভুল বা অস্পষ্ট ধারণা দূর হওয়া/প্রকৃত ব্যাপারে জানতে বা বুঝতে পারা) – এতদিনে আমার চোখ ফুটল।

চোখ বুলানো (অগভীরভাবে বা ভাসা-ভাসাভাবে দেখা বা পড়া) – কাগজপত্রগুলোর ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ো।

চোরের মায়ের বড় গলা (অসৎ লোকের হম্বিতম্বি/যে যত মন্দ বা অসৎ তার তত গলাবাজি) – নিজে অবৈধ কামাই করে অন্যের কামাইয়ের সমালোচনা করছ, এ যে দেখি চোরের মায়ের বড় গলা।

চ্যাটাং চ্যাটাং কথা (বড় বড় কথা/রূঢ়ভাবে বলা বড় বড় কথা) – কাজের বেলায় নেই, মুখে কেবল চ্যাটাং চ্যাটাং কথা।


ছ’কড়া ন’কড়া (সস্তা) – যুদ্ধের বাজার ছিল আগুন, কিন্তু এখন মাছ-মাংস ছ’কড়া ন’কড়া দরে বিক্রি হচ্ছে।

ছক্কা-পাঞ্জা করা (বড় বড় কথা বলা) – পেটে তো বিদ্যা নেই, তা আবার ছক্কা-পাঞ্জা করছো?

ছিনিমিনি খেলা (অপব্যয় করা) – বড়লোকের ছেলে, তাই টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে বাধে না?

ছিচ্কাঁদুনে (অল্পতেই কাঁদে এমন) – পারভীনের মতো ছিচ্কাদুনে মেয়ে এ সংসারে বিরল।

ছুঁচ হয়ে ঢোকে, ফাল হয়ে বেরোয় (সামান্য রূপে প্রবেশ, পরে বড় অনিষ্ট সাধন করে প্রস্থান) – ওকে তোমার কাজ দিয়ে কি ভালো করলে? ও তো ছুঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরুবে।

ছেঁড়া চুলে খোঁপা বাঁধা (বৃথা চেষ্টা) – যৎসামান্যই আয় সংসারে, তাই ছেঁড়া চুলে খোঁপা বাঁধা চলে না, এজন্য ওকে চাকরিতে দিয়েছি।

ছেলের হাতের মোয়া (অতি সহজ ব্যাপার) – পরীক্ষায় পাস করতে হলে রীতিমতো পরিশ্রম করতে হয়, এ ছেলের হাতের মোয়া নয়।

ছা-পোষা (পোষ্যভারাক্রান্ত) – ছা-পোষা কেরানি আমি, আমার কি এত শখ করলে সাজে?

ছাই ফেলতে ভাঙা কুলা (সামান্য কাজের জন্য নিযুক্ত অপদার্থ পাত্র) – বড় সাহেবের ছেলেকে স্কুলে আনা-নেয়ার জন্য বৃদ্ধ আলম খাঁ নিযুক্ত হওয়ায় ছাই ফেলতে ভাঙা কুলোরই ব্যবস্থা হলো।

ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করা (ঘৃণিতকে দণ্ড দিতে গেলে নিজেরই হাত গন্ধ হয়) – এ দাগী চোরকে পুলিশের হাতে না দিয়ে স্বহস্তে শিক্ষা দিলে শুধু ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করাই হবে।

ছড়ি ঘুরানো (বিরক্তিকর ভাবে সর্দারি করা) – সবার ওপরে ছড়ি ঘোরাতে তিনি খুবই দক্ষ।

ছারখার করা (নষ্ট করা, ধ্বংস করা) – রিনার সৎ মা তাদের সোনার সংসারটাকে ছারখার করে দিল।

ছিঁচকে চোর (যে চোর ছোটখাটো জিনিস চুরি করে) – ছিঁচকে চোরের উপদ্রব খুব বেড়েছে।

ছিটকে পড়া (দূরে চলে যাওয়া) – চাকরির সূত্রে এক-একজন এক-একদিকে ছিটকে পড়েছে।

ছিটে-ফোঁটা, ছিটা-ফোঁটা (অল্প পরিমাণ, যৎসামান্য জিনিস) – সবাই নেয়ার পর আমার জন্য রইল ছিটে-ফোঁটা।

ছুঁচিবাই (কেউ ছুঁলেই শুচিতা নষ্ট হবে এই ভাবনার বাড়াবাড়ি বা বাতিক) – বুড়ির ছুঁচিবাইয়ের জন্য সবাই তাকে এড়িয়ে চলে।

ছেঁড়া কথা (বাজে কথা/অর্থহীন বা অসার কথা) – তোমার ঐ ছেঁড়া কথায় আমি ভুলব না।


জগদ্দল পাথর (গুরুভার) – সে আমার ওপর দায়িত্বের জগদ্দল পাথর চাপিয়ে নিশ্চিত হয়ে আছে।

জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ (উভয় সংকট) – একদিকে মাতৃআজ্ঞা লঙ্ঘনের ফলে উদ্ভূত পাপ অন্যদিকে মাতৃআজ্ঞা অমান্য করার জন্য পিতৃ আদেশ, কোন দিকে যাবে ওর জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘের মতো অবস্থা।

জগাখিচুড়ি (বিশৃঙ্খলা) বাক্সের মধ্যে বই-পত্তর কাগজ সব জগাখিচুড়ি করে রেখেছ।

জিব কাটা (লজ্জায় দাঁত দিয়ে জিহ্বা চেপে ধরা) – বিয়ের অনুষ্ঠানে বরের পিতা সবার সামনে যৌতুকের টাকার কথা উল্লেখ করায় বর জিব কাটলো।

জাহান্নামে যাওয়া (গোল্লায় যাওয়া) – টাকা চুরি করে এখন ভালোমানুষী দেখানো হচ্ছে, জাহান্নামে যাও তুমি।

জলাঞ্জলি দেয়া (অপব্যয় করা) – শেয়ার মার্কেটে তুমি এত টাকা জলাঞ্জলি দিলে হে বাপু!

জট পাকানো (জটিলতা সৃষ্টি করা/জটিলতা সৃষ্টি হওয়া) – এ মামলার নিষ্পত্তি সহজে হবে না-সব জট পাকিয়ে গেছে।

জম্পেশ করে (খুব করে/ভালো করে) – দড়ির ফাঁসে হাত-পা তার জম্পেশ করে বাঁধা হয়ে গেছে।

জাত খাওয়া (জাতিভ্রষ্ট করা/জাতি নষ্ট করা) – সে কি আমার জাত খাওয়ার কম চেষ্টা করেছে?

জান কবুল (প্রাণপণ চেষ্টা) – সম্মান বাঁচার জন্য জান কবুল করব।

জুতো খাওয়া (অপমানিত হওয়া/বেকুব বনে যাওয়া) – ওদের ঝগড়া থামাতে গিয়ে নিজেই জুতো খেয়ে ফিরে এসেছি।

জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ (ছোটবড় সব রকমের কাজ) – জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই ঐ একজনকেই করতে হয়।

জুয়াচুরি, জোচ্চরি (লোক ঠকানো) – ইদানিং কিছু প্রতিষ্ঠান সস্তায় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী দেয়ার নাম করে জুয়াচুরি শুরু করেছে।

জের টানা (আগের পৃষ্ঠার হিসাব পরের পৃষ্ঠায় নিয়ে যাওয়া) – আপনার কথার জের টেনেই আমি কিছু বলতে চাই।

জেলঘুঘু (যে ব্যক্তি বারবার জেল খাটে) – ও তো একটা আস্ত জেলঘুঘু কতবার যে জেল খেটেছে তার ঠিক নেই।

জোঁকের মুখে নুন পড়া (দম্ভকারী বা আস্ফালনকারীকে থামিয়ে বা চুপসে দিতে পারে এমন কথা বলা) – তার একটি কথাতেই জোঁকের মুখে নুন পড়ল, সব বক্তৃতা বন্ধ হয়ে গেল।

জো-হুকুম, জো-হুজুর (তোষামোদকারী) – তার চারদিকে এখন জো-হুকুমের দল জুটেছে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post