বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন - ঝ, ট, ঠ, ড, ঢ, ত


ঝাঁকের কই (এক দলের লোক) – মওলানা ইয়াহিয়া বৃথাই হতভাগ্যদের জন্য অর্থব্যয় করেছেন, দুদিন বাদেই দেখা যাবে যে ঝাঁকের কই ঝাঁকেই ফিরছে।

ঝিকে মেরে বৌকে শিখান (আভাসে শিক্ষা) – ভদ্রলোক ঝিকে মেরে তার আধুনিকা বৌকে শেখাতে চেষ্টা করলেন।

ঝোপ বুঝে কোপ মারা (অবস্থা বুঝে সুযোগ গ্রহণ) – এ শহরে কোনো ভালো হোটেল না থাকায় আজিজ সাহেব ঝোপ বুঝে কোপ মেরে বহু টাকা উপার্জন করলেন।

ঝালাপালা (কর্ণপীড়া) – উঃ, তুমি এত কথা বল যে, কান ঝালাপালা হয়ে যায়।

ঝরাপাতা (গুরুত্বহীন ও বাতিল হয়ে যাওয়া লোক) – আমরা ঝরাপাতার দল, হাওয়া আমাদের কখনো-বা একত্র জড় করে, কখনো-বা ছড়িয়ে দেয়।

ঝলসা-কানা (রোদে বা বীব্র আলোকে চোখ ধাঁধিয়ে গেছে এমন লোক) – সারাদিন রোদে ঘুরেছ বলেই ঝলসা-কানা হয়েছ।

ঝাল ঝাড়া (কড়া কথা বলে পুরনো আক্রোশ মেটানো) – সেদিন তাকে বাগে পেয়ে ভালো করে মনের ঝাল ঝেড়েছি।

ঝিঙেফুল ফোটা (সন্ধ্যা হওয়া) – দিন পেরিয়ে ঝিঙে ফুল ফুটলো, এখনও ছেলেটা ঘরে ফিরল না।

ঝোলে অম্বলে এক করা (দুটি জিনিস মিশিয়ে ফেলা) – এক এক করে বলো। ঝোলে অম্বলে এক করে ফেলো না।


টাকার গরম (ধনের অহঙ্কার) – টাকার গরমে চৌধুরী সাহেবের কাছে কথা ছোঁয়ানো যায় না।

টিম টিম করা (ক্ষীণভাবে অস্তিত্ব বজায় রাখা) – খান সাহেবের একমাত্র নাতিটি বর্তমান, সেই এখন টিম টিম করে জ্বলছে।

টোপ ফেলা (প্রলোভন দেখানো) – ডাক্তার সাহেব চতুর লোক, মেয়ে বিয়ে দিতে ঠিক জায়গায় টোপ ফেলেছেন।

টাকার কুমির (অনেক টাকার মালিক) – টাকার কুমির নওয়াব সাহেব সেদিন মারা গেলেন।

টাল সামলানো (বিপদ সামলানো) – অনেক কষ্টে টাল সামলিয়েছি, আর কি আমি বখরায় ব্যবসা করি।

টক্কর দেয়া (পাল্লা দেয়া) – সামান্য কেরানি হয়ে বড় সাহেবের সঙ্গে টক্কর দিতে যেও না।

টইটম্বুর (ভরপুর) – বর্ষাকালে নদী, খাল, বিল পানিতে ভরে গেছে, ক্ষেতগুলো পর্যন্ত পানিতে টইটম্বুর।

টীকা ভাষ্য (দীর্ঘ আলোচনা) – প্রত্যেকটি বিষয়ে টীকা ভাষ্যের প্রয়োজন কি, এতেই চলবে।

টাকা ওড়ানো (টাকার অপব্যয় করা) – বাবার মৃত্যুর পর ছেলেটা দুহাতে টাকা ওড়াতে লাগল।

টানাপড়েন (দুই বিপরীত ব্যাপারের টান) – দুই পক্ষের টানাপড়েনে আমার তো প্রাণ যায়।

টুকনি হাত করা (নিঃস্ব হওয়া) – শেষে কি আমাকে টুকনি হাত করতে হবে না কি?

টু পাইস কামানো, টু পাইস রোজগার করা (পয়সাকড়ি রোজগার করা) – ছেলেটা শহরে গিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা করে বেশ টু পাইস কামাচ্ছে।


ঠেলার নাম বাবাজী (চাপে পড়ে কাবু হওয়া) – আবুল তবে না বলেছিলে দেনা শোধ করবে না -কেমন, দিতে হল তো, ঠেলার নাম বাবাজী।

ঠাট বজায় রাখা (চাল বজায় রাখা) – আজকালকার দিনে ঠাট বজায় রাখতে প্রাণ যায়।

ঠোঁটকাটা (স্পষ্ট বক্তা) – আচ্ছা ঠোঁটকাটা লোক তো তুমি, তার মুখের ওপর অতগুলো কথা বললে।

ঠাণ্ডা লড়াই (গোপনে বিরোধিতা) – আমেরিকা বহুদিন ধরে রাশিয়ার সঙ্গে ঠাণ্ডা লড়াই করেছে।

ঠাওর করা (বুঝতে পারা/অনুভব করা) – অন্ধকারে কিছুই যে ঠাওর করতে পারি না।

ঠাঁই-ঠাঁই (পৃথক/আলাদা/আলাদা আলাদা ভাবে) – ভাই ভাই ঠাঁই-ঠাঁই।

ঠাটঠমক (হাবভাব, চালচলন) – বড়লোকের বাড়ির ঠাটঠমকই আলাদা।

ঠারে-ঠোরে (ইশারায়, ইঙ্গিতে) – সে ঠারে ঠোরে অনেক কিছু বুজিয়ে দিল।

ঠেক খাওয়া (বাধা পাওয়া) – টাকার অভাবে খুব ঠেক খেয়ে গেছি ভাই।

ঠেলামারা কথা (বিদ্রূপপূর্ণ কথা, খোঁচা দেয়া কথা) – তার ঠেলামারা কথা শুনলে গা জ্বলে যায়।

ঠোঁট ওলটানো (বড়াই করা/গর্ব প্রকাশ করা) – ও এত যে ঠোঁট ওলটায়, ওর কি এমন গুণ আছে?


ডুবে ডুবে পানি খাওয়া (গোপনে কুকাজ করা) – বাইরে সে বেশ ভালো কিন্তু ডুবে ডুবে পানি খায়।

ডাকাবুকো (দুরন্ত) – কি হে বাপু, ডাকাবুকো খান সাহেবের ছেলে তুমি, এমন বোকা।

ডান হাতের ব্যাপার (আহার, ভোজন) – একটু অপেক্ষা কর ভাই, আমি চট করে ডান হাতের ব্যাপারটা সেরে নিই।

ডঙ্কা মারা (সগর্বে ঘোষণা করা, বড় গলায় প্রচার করা) – এ কথা আমি ডঙ্কা মেরে বলে যাব।

ডাইনির কোলে ছেলে সঁপা (ভক্ষককেই রক্ষণের দায়িত্ব দেয়া) – ঐ মেয়েটা তো আস্ত চোর। ওকে চালের বস্তা পাহারা দিতে বলা তো ডাইনির কোলে ছেলে সঁপা।

ডাগর-ডোগর (বয়সে এবং চেহারায় বেশ বড়সড়) – ছেলেটি তো বেশ ডাগর-ডোগর হয়ে উঠেছে।


ঢিমে তেতালা (মৃদুগতি) – জলদি করো, ঢিমে তেতালায় কাজ করলে সব পণ্ড হবে।

ঢাক ঢাক গুড় গুড় (কপটতা) – কোর্টে সাক্ষ্য দেবো তো ঢাক ঢাক গুড় গুড় করতে পারবো না, সত্য কথা বলব।

ঢাকের বায়া (অকেজো) – আমিনুল একাই কাজটি করেছে, তার বন্ধু আমিন ঢাকের বায়া।

ঢাকের কাঠি (তোষামুদে) – কেরানি সাহেব বড় সাহেবের ঢাকের কাঠি, যা বলবে সে তাই শুনবে।

ঢলাঢলি (কেলেঙ্কারি) – স্কুল-কলেজের সহশিক্ষা যদি ঢলাঢলির সৃষ্টি করে তা হলে অবশ্য পরিত্যাজ্য।

ঢং করা (ন্যাকামি করা) – খেয়ে নে, আর ঢং করতে হবে না।

ঢুলুঢুলু (তন্দ্রালুতা) – ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু হয়ে এসেছে।

ঢেঁকি অবতার (নিষ্কর্মা ও নির্বোধ লোক) – এমন ঢেঁকি অবতারের খাওয়া জুটবে কি করে?


তাসের ঘর (ক্ষণস্থায়ী) – এ সংসার তাসের ঘর, কি নিয়ে আমরা এখানে বড়াই করি।

তাক লাগা (আশ্চর্য হওয়া) – আট বছরের ছেলে জহির ওস্তাদি গান গেয়ে সভাস্থ সকল লোককে তাক লাগিয়ে দিল।

তিলকে তাল করা (অতিরিক্ত করা) – ওর স্বভাবই হলো তিলকে তাল করা, ওর কথায় কোনো গুরুত্ব দেবেন না।

তেলে বেগুণে জ্বলে ওঠা (ক্রুদ্ধ হওয়া) – ছাত্রের ঔদ্ধত্যপূর্ণ উত্তর শুনে শিক্ষক তেলে বেগুণে জ্বলে উঠলেন।

তালপাতার সেপাই (কৃশকায়) – এই নাকি স্বাস্থ্য, যুদ্ধে যেতে চায় এ তো তালপাতার সেপাই।

তামার বিষ (অর্থের কুপ্রভাব) – মানুষকে মানুষ বলে গ্রাহ্য কর না, তোমাকে তামার বিষে পেয়েছে বুঝি?

তাল সামলানো (শেষ রক্ষা) – বুঝে সুঝে কাজ কর, শেষে তাল সামলানো দায় হবে, বুঝলে?

তুষের আগুণ (দগ্ধকারী দুঃখ) – পুত্রশোকে পিতার বুকে তুষের আগুন ধিকিধিকি জ্বলছে।

তুলসী বনের বাঘ (ভণ্ড) – লোকটা মুখে বক্তৃতাও দেয়, মসজিদে নামাজও পড়ে, কিন্তু আসলে তুলসী বনের বাঘ।

তেলা মাথায় তেল দেয়া (যার আছে তাকে আরো দেয়া) – দুনিয়ার সবাই তেলা মাথায় তেল দেয়, গরিবের কেউ নেই।

তেল বাড়া (অহঙ্কার) – তোল খুব তেল বেড়েছে দেখছি।

ত্রাহি ত্রাহি (পরিত্রাণ কর বলে চিৎকার) – নদীতে প্রবল ঝড়ের দাপটে পড়ে নৌকারোহীগণ ত্রাহি ত্রাহি ডাক ছাড়ল।

ত-খরচ (বাজে খরচ) – হাতে আছে তা-খরচের জন্য সামান্য কিছু টাকা।

তটস্থ হওয়া (বিচলিত হওয়া) – জমিদারের ভয়ে প্রজারা তটস্থ হয়ে থাকে।

তড়িঘড়ি (ব্যস্তসমস্ত) – খবর পেয়েই সবাই তড়িঘড়ি ছুটে গেল।

তর না সওয়া (দেরি করতে না চাওয়া) – তোমার যে একেবারেই তর সইছে না, একটু অপেক্ষা করতেই হবে।

তরবেতর (নানারকম) – দোকানে তরবেতর জামাকাপড় সাজানো রয়েছে।

তর্জন-গর্জন (শাসানি) – রোজ রাতে বাড়ি ফিরে লোকটা বউয়ের ওপর তর্জন-গর্জন শুরু করে দেয়।

তাথৈ তাথৈ নাচা (আনন্দে উদ্বেল হওয়া) – সাহেবের প্রশংসা শুনে সে দুহাত তুলে তাথৈ তাথৈ নাচছে।

তালগাছের আড়াই হাত (কোনো কাজের শেষ ও সবচেয়ে কঠিন অংশ) – প্রথমটা ভালোয় ভালোয় উতরে গেল, এখনও তাল গাছের আড়াই হাত বাকি।

তিড়িং বিড়িং (অস্থিরভাবে লাফালাফি) – এত তিড়িং বিড়িং না করে একটু শান্ত হয়ে বসো।

তুরকি নাচ, তুরকি নাচন (নাজেহাল ও অস্থির অবস্থা) – আমার কথা না শুনে তখন ওকে অতগুলো টাকা দিয়ে দিলে – এখন কেন তুরকি নাচ নাচছো?

তেল-নুন-লকড়ি (খাদ্য বা খাদ্যের উপকরণ) – সব কিছুর আগে আমাদের ভাবতে হয় তেল-নুন-লকড়ির সংস্থানের কথা।

ত্রিশঙ্কু অবস্থা, ত্রিশঙ্কুর দশা (কোনো দিকেই যাওয়া যাচ্ছে না এমন অবস্থা) – দুই কর্তার দুই বিপরীত আদেশের ফলে আমার এখন ত্রিশঙ্কু অবস্থা।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post