বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন - ধ, ন


ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির (ধার্মিক) – ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির আর কি, সারাজীবন মিথ্যার বেসাতি করলো, আজ কিনা সে সত্য কথা বলছে।

ধরি মাছ না ছুঁই পানি (কৌশলে কার্যসিদ্ধি) – ধরি মাছ না ছুঁই পানি গোছের কাজ হেডমাস্টার সাহেবের অপছন্দ, কেননা খাঁটি মানুষ তিনি।

ধকল সওয়া (ধাক্কা সামলানো) – পাশের বাড়ির হিমু তো যক্ষ্মারোগী, তার রোগের শরীরে আর কত ধকল সয়?

ধামাধরা (তোষামোদ করা) – অপরের ধামা ধরে যাদের দুমুঠো অন্নের সংস্থান করতে হয়, তাদের জীবনের আর কি মূল্য?

ধরাকে সরা জ্ঞান করা (কাউকে গ্রাহ্য না করা) – এখন কাঁচা বয়স, মোটা টাকা যোগাড় করছে, ধরাকে সরা জ্ঞান করবে বৈ কি!

ধর্মের ঢাক আপনি বাজে (পাপ গোপন না থাকা) – দারোগা সাহেবের ঘুষ খাওয়ার কথা প্রকাশ পেলে সবাই বলাবলি করতে লাগল, ধর্মের ঢাক আপনি বেজেছে।

ধর্মের ষাঁড় (ব্যঙ্গর্থে, স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তি) – বাপ মরেছে তবু সংসারের কোনো চিন্তা নেই ওর, ও যেন এক ধর্মের ষাঁড়।

ধড়ে প্রাণ আসা (স্বস্তি পাওয়া) – বাড়ি পৌঁছে সবাইকে সুস্থ দেখে ধড়ে প্রাণ এলো।

ধড়িবাজ (ধুর্ত ও ফন্দিবাজ) – ধড়িবাজ বলেই সে ওটা বাগিয়ে নিতে পেরেছে।

ধনকুবের (অত্যন্ত ধনী ব্যক্তি) – মল্লিকরা ছিল ধনকুবের কিন্তু একটি পয়সা দিয়ে কাউকে কখনো সাহায্য করেনি।

ধরাবাঁধা (নির্দিষ্ট) – এ বিষয়ে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই।

ধান ভানতে শিবের গীত (সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা) – কেমন আছ জানতে চেয়েই তো মুশকিল হলো দেখছি। তুমি যে এখন ধান ভানতে শিবের গীত আরম্ভ করলে।

ধানাই পানাই (আবোল তাবোল কথা) – ধানাই পানাই বাদ দিয়ে আসল কথাটি বল।

ধাপ্পা দেয়া (ঠকানো) – লোকটি যে আমাকে এভাবে ধাপ্পা দিবে তা ভাবিনি।

ধুন্ধুমার (তুমুল কাণ্ড) – কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরের ভেতর ধুন্ধুমার বেধে গেল।

ধোপার ভাঁড়ার (প্রচুর জিনিসপত্র যা ব্যবহার করা যাবে না) – আমি তো কেবল এই ধোপার ভাঁড়ার পাহারা দিচ্ছি।

ধোপা টেকা (নানা বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়ে টিকে যাওয়া) – যত টাকা দিয়েই কিনে থাকো, এ জিনিস ধোপে টিকবে না।

ধ্যাড়ানো (কাজ পণ্ড করা) – তুমি এমন ধ্যাড়াবে জানলে তোমাকে এ দায়িত্ব দিতামই না।


নিমরাজি (প্রায় রাজি) – প্রসঙ্গটা হলো বিবাহের, এখানে নিমরাজি হওয়ার অবকাশ আছে কি?

নিজের চরকায় তেল দেয়া (অন্যের কাজে মাথা না ঘামিয়ে নিজের কাজে মন দেয়া) – ও তো বড়লোকের ছেলে, ওর দিকে নজর না দিয়ে তুমি নিজের চরকায় তেল দাও।

নিসপিস করা (উসখুস করা) – ছাত্রটিকে মারার জন্য শিক্ষকের হাত নিসপিস করছে।

নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ (নিজের ক্ষতি করে পরের ক্ষতিসাধন) – নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতেই তিনি আনন্দ পান।

নিজের কোলে ঝোল টানা (চরম স্বার্থপরতা) – কেমন করে তুমি পরের দুঃখ বুঝবে, তুমি তো সবসময় নিজের কোলে ঝোল টানতেই ব্যস্ত থাক।

নাম কাটা সেপাই (কর্মচ্যুত ব্যক্তি) – জামিল সাহেবকে মানী লোক বলছ, সে তো এখন নাম কাটা সেপাই, আড্ডা দেয়া ও তাস খোদাই তার কাজ।

নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো (একেবারে কিছু না থাকার চেয়ে অল্প কিছু থাকা ভালো) – একেবারে সংসার ফাঁকা, কারুর ছেলে নিয়ে মানুষ করো না, তবু তো নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।

নাম ডুবানো (সম্মান বিসর্জন) – বাপের নাম ডুবিয়ো না, এবার তোমাকে পাস করতেই হবে।

নাই দেয়া (আদর দেয়া) – বানরকে নাই দিলে ঘাড়ে চড়ে।

ননীর পুতুল (শ্রমবিমুখ, কোমল দেহ) – আহা, রোদের আঁচ সয় না, যেন ননীর পুতুল।

নরক গুলজার (পাপীদের সমাবেশে আসর সরগরম) – ইসরাইলি সৈন্যরা প্যালেস্টাইনের উদ্বাস্তু নরনারীর ওপর মেশিনগানের গুলি চালিয়ে নরক গুলজার করে তুলেছে।

নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো (নিশ্চিত থাকা) – নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছ, পরীক্ষা এসে গেল যে।

নজর লাগা (অশুভ দৃষ্টিতে পড়া) – ছেলেটি দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে, নিশ্চয়ই ওর ওপর সৎ মায়ের নজর লেগেছে।

নয়ছয় (ছড়াছড়ি) – খাটের ওপর জামাগুলো নয়ছয় হয়ে পড়ে রয়েছে।

নেই আঁকড়া (নাছোড়বান্দা) – তুমি দেখছি জোঁকের মতো আমার গায়ে লেগে রয়েছে, এত বলছি ছাড়ো কিন্তু ছাড়বে না, তুমি একটি নেই আঁকড়া লোক।

নেক নজরে পড়া (সুদৃষ্টিতে পড়া) – প্রিন্সিপালের নেক নজরে পড়তে পারলেই হলো, রফিক সাহেবকে আর পায় কে?

নদীকূলে বাস (ভয়ের জায়গায় অবস্থান) – নদীকূলে বাস, ভাবনা বার মাস।

নকড়া-ছকড়া (তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা) – যারা তোমাকে নকড়া-ছকড়া করে তাদের কাছে তুমি বারে বারে কেন যাও?

নখদর্পণে থাকা (পুঙ্খানুপঙ্খভাবে আয়ত্তে থাকা) – এই শহরের সবকিছু আমার নখদর্পণে।

নজর কাড়া (দৃষ্টি আকর্ষণ করা) – অল্পদিনের মধ্যেই ছেলেটির খেলা সকলের নজর কেড়েছে।

নট নড়ন-চড়ন (স্থির) – আমার তখন একেবারে নট নড়ন-চড়ন অবস্থা।

নবমীর পাঁঠা (প্রাণভয়ে ভীত ব্যক্তি) – ডাকাত দেখেই সে নবমীর পাঁঠার মতো কাঁপতে লাগল।

নবাবি চাল (অতিরিক্ত বিলাসিতা) – অমন নবাবি চালে চললে ফতুর হতে আর বেশি দিন লাগবে না।

নয়নের মণি (পরম আদরের পাত্র) – নাতিটি তার নয়নের মণি, তাকে কাছছাড়া করেন না এক দণ্ডের জন্যও।

নিমকহারাম (অকৃতজ্ঞ) – আমার নিন্দে করবে? এমন নিমকহারাম সে হতে পারে না।

নিরানব্বুইয়ের ধাক্কা (সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি) – এমনই তার নিরানব্বুইয়ের ধাক্কা যে সে প্রাণে ধরে টাকা খরচ করতে পারছে না।

নোলা বাড়ানো (লোভ করা) – খাবার দেখলেই অমন করে নোলা বাড়াও কেন?

নোকতা লাগানো (দোষ ধরা) – আমায় নোকতা না লাগিয়ে নিজের কাজে মন দাও।

ন্যাকা সাজা (না বোঝার ভান করা) – তোমাকে আর ন্যাকা সাজতে হবে না, তোমার জারিজুরি ধরা পড়ে গেছে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post