↬ বিজ্ঞান প্রদর্শনী
ভূমিকা :
‘আজিকার এ বিজ্ঞান মেলা
শুভ প্রভাতের করেছে সূচনা,
বিজ্ঞানের পূর্ণ বিকাশ
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা
বিজ্ঞানের বিশাল মাত্রা
বিজ্ঞান মেলা তব ঝলক মাত্র।’
একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতির লালনভূমি হিসেবে বাংলাদেশ অতি প্রাচীনকাল থেকেই সুপরিচিত। মৌসুমি জলবায়ু আর উর্বর রদ্বীপীয় পাললিক ভূমিসমৃদ্ধ ভারতীয় উপমহাদেশের এ অঞ্চলে বিজ্ঞান ও ললিতকলার বিকাশ ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রমে আমাদের দেশে বিজ্ঞানের ক্রম উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বলা বাহুল্য যে, আজকের বিশ্ব বিজ্ঞানের দানে সমৃদ্ধ। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে বিজ্ঞানের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সমগ্র পৃথিবীতে মানুষ আলোর গতিতে চলছে। অবিশ্বাস্য রূপে জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। মানচিত্রে ঘটেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সুতরাং মানবজীবনে বিজ্ঞান চর্চা, বিজ্ঞান পঠন-পাঠন ও এর একটি বিশেষ অর্ন্তভুক্তি বিজ্ঞান প্রদর্শনী বা বিজ্ঞান মেলা আজকের দিনে শিক্ষার একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিজ্ঞান মেলা কী? : আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী বা মেলার আয়োজন করা হয়। একুশে বই মেলা, বাণিজ্য মেলা, শিল্প মেলা, গ্রাম্য মেলা ইত্যাদি। কিছু কিছু মেলা যেমন সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়েছে, তেমনি কিছু কিছু মেলা শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের পথে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। এরূপ একটি মেলা হল ‘বিজ্ঞান মেলা’ বা ‘বিজ্ঞান প্রদর্শনী’। বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয় নির্দিষ্ট কতকগুলো লক্ষ বা উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে। বিজ্ঞানের আবিষ্কার, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি এবং বিজ্ঞানের বিষ্ময়কর আবিষ্কারগুলো জনসাধারণকে ও শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনী শক্তিকে এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় উৎসাহিত করাই বিজ্ঞান মেলার প্রধান লক্ষ্য। বিজ্ঞানীদের অবদানেই বর্তমানে বিশ্ব খুব ছোট হয়ে এসেছে। বিশ্বের সকল মানুষ যেন এখন এক বৃহত্তম পরিবার। পরস্পর সহযোগিতা, ভাব-বিনিময় ও মানুষের সার্বিক মঙ্গল আকাঙ্ক্ষায় বিজ্ঞানের অবদানকে আজ লাগাতেই বিজ্ঞান প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রথম দিকে উন্নত দেশগুলো বিজ্ঞান প্রদর্শনীর আয়োজন করত। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই বিজ্ঞান প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বিজ্ঞান মেলার উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য :
১। স্থানীয়ভাবে বিজ্ঞান মেলার উদ্দেশ্য হল দেশের তরুণ সমাজকে বিজ্ঞানমুখী করা ও তাদের মেধার যথার্থ স্বীকৃতি দিয়ে নব-নব আবিষ্কারে উদ্বুদ্ধ করা এবং শ্রেষ্ঠ অবদানের সুযোগ করে দেওয়া। আর এখনো বিশ্বব্যাপী এ প্রদর্শনী বা প্রতিযোগিতা হলে তথায় আমাদের বিজ্ঞানীদের যথার্থ স্থান করে দেওয়া। সেই সাথে জনসাধারণও যাতে বিজ্ঞান-মনস্ক হয়, তার ব্যবস্থা করা।
২। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া এবং স্বনীর্ভরতা অর্জন করা।
৩। বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞানের উন্নয়ন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তার করা।
৪। বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখা।
৫। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা এবং শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণসহ দেশের গবেষণা ও উন্নয়ন কাঠামোতে অবদান রাখে।
বিজ্ঞান মেলা প্রদর্শনী : ইংরেজ শাসনামলে ও পাক আমলে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করত। সেই সূত্র ধরেই বাংলাদেশের লব্ধপ্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, বিজ্ঞান শিক্ষক, উদ্যোগী ছাত্র প্রতিনিধি ও ক্লাবসমূহের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এবং সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একটি শক্তিশালী বিজ্ঞান কমিটি গড়ে উঠেছে। এ কমিটি গত কয়েক বছর ধরেই দেশের প্রশাসনের নিম্ন স্তর থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় বা জাতীয়ভিত্তিক বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করে আসছে। বিজ্ঞান মেলা সাধারণত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে থানা পর্যায় থেকে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে শুরু হয়ে জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে উত্তরণের পর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি কেন্দ্রীয় বা জাতীয়ভিত্তিক পর্বে ঢাকায় এসে পরিসমাপ্তি লাভ করে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ও স্বীকৃত বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্যরা প্রথমে থানা পর্যায়ে আয়োজিত বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে। তরুণ-তরুণীরা নিজ নিজ মেধা ও সাধনাভিত্তিক আবিষ্কারসমূহ প্রদর্শনী কেন্দ্রে উপস্থাপন করে। নির্ধারিত সময়ের জন্য সেগুলো সর্বসাধারণের দর্শনার্থে উন্মুক্ত থাকে। দর্শনার্থীর প্রশ্ন মোতাবেক আবিষ্কারক বা আবিষ্কারক দল তাদের নিজ নিজ আবিষ্কারের কলা-কৌশল, উপকারিতা ও প্রয়োগ বিষয়ে বুঝিয়ে বলে। প্রদর্শন-পূর্বের শেষে শুরু হয় প্রদর্শনীর পরীক্ষাপর্ব। এই পরীক্ষাপর্বে থাকেন স্থানীয় প্রখ্যাত বিজ্ঞানীগণ। তাঁরা একমত হয়ে প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের পুরস্কৃত করেন ও ঊর্ধ্বতন স্তরে প্রতিযোগিতার অনুমতি দেন।
প্রদর্শনীর ত্রুটি-বিচ্যুতি : স্বীকার করতে হবে যে, আয়োজন সংগঠন, নির্দেশনা, আর্থিক সহায়তা ও আবিষ্কারগুলোর সংরক্ষণের কোন সুব্যবস্থা না থাকায় অনেক মূল্যবান আবিষ্কার মাঝ পথে হারিয়ে যায়, অথবা ক্রমিক ধারায় সাধনার সূত্র থেকে বঞ্চিত হয়। এটি সত্যই দুঃখজনক। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে আগত প্রতিযোগীদের আহার, বাসস্থানের কষ্ট ও যথাযথভাবে প্রজেক্ট উপস্থাপনের অসুবিধাও পরিলক্ষিত হয়।
বিজ্ঞান প্রদর্শনীর উন্নতির উপায় : এ কথাও ঠিক যে, আমাদের মত অনুন্নত দেশে সবকিছু রাতারাতি আশা করা অবাস্তব। বিজ্ঞান প্রদর্শনীর মাধ্যমে যে জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে, তাকে ধরে রাখাই হবে উন্নতির প্রধান উপায়। সুখের কথা, সরকার প্রতি বছরই এক্ষেত্রে অনুদান বাড়িয়ে তরুণদের উৎসাহিত করছেন ও আবিষ্কারগুলো ক্লাবভিত্তিক সংরক্ষণের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। স্বীকার করতেই হবে যে, আমাদের মত অনুন্নত দেশের হাজারো অসুবিধা সত্ত্বেও তরুণদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও পরিশ্রম এবং বড়দের সুপরামর্শ ও সহযোগিতাই আমাদের চলার পথের একমাত্র পাথেয়। তবে বিজ্ঞান মেলাকে আরও আকর্ষণীয় ও উন্নত করার ক্ষেত্রে সরকারে ভূমিকার কোন বিকল্প নেই। বিজ্ঞান মেলাকে উন্নত করার ক্ষেত্রে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে সর্বাগ্রে।
উপসংহার : বিজ্ঞান প্রদর্শনীয় উদ্দেশ্যসমূহ সফল করে তোলার জন্য সরকারি ও ব্যাক্তিগত উদ্যোগসহ সকলের আন্তরিক সহযোগীতার প্রয়োজন। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। কাজেই বিজ্ঞান প্রদর্শনীর আয়োজন করা হলে জনসাধারণের কল্যাণ সাধিত হবে এবং আমাদের দেশেও বিজ্ঞানের নব নব ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারবে। ফলে দেশ ও জাতির অনেক কল্যাণ সাধিত হবে নিঃসন্দেহে। কাজেই আমাদের দেশে বিজ্ঞানের বহুল প্রচলনের জন্য বিজ্ঞান মেলার প্রসার ও উন্নয়ন অত্যাবশ্যক।
this is very useful essay..
ReplyDeleteখুব ভালো। ধন্যবাদ।
ReplyDeleteThank you
ReplyDelete