হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর নানা প্রস্তুতি ও আয়োজনের মাধ্যমে বছরব্যাপী বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদ্যাপিত হবে। জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ইউনেস্কোর সাথে বিশ্বব্যাপী একযোগে ‘মুজিববর্ষ’ পালন হবে। এই জন্মশতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে এই ব্লগ ‘My All Garbage’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও কৃতিত্ব এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর বিশেষ অবদান, ভূমিকা ও অংশগ্রহণ নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন।
এক নজরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
নাম : শেখ মুজিবুর রহমান (নাম রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর নানা শেখ আব্দুল মজিদ। ‘মুজিব’ শব্দের অর্থ উত্তরদাতা)
ডাক নাম : খোকা।
উপাধি : বঙ্গবন্ধু। জনসাধারণের কাছে পরিচিত শেখ সাহেব, শেখ মুজিব হিসেবে। এলাকার মানুষ ডাকতেন মিয়া ভাই।
পিতা : শেখ লুৎফর রহমান (গোপালগঞ্জ দেওয়ানি আদালতের সেরেস্তাদার ছিলেন)।
মাতা : সায়েরা খাতুন।
পূর্ব পুরুষ : ইরাকের বাগদাদের হাসনপুর থেকে এসেছিলেন।
জন্ম : ১৭ মার্চ ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ (রাত ৮টায়); ২০ চৈত্র ১৩২৭ বঙ্গাব্দ (বুধবার)।
জন্মস্থান : গোপালগঞ্জ জেলার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গীপাড়ায়।
স্ত্রী : শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব (ডাক নাম : রেণু)।
বিবাহ : ১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সে। [‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের তথ্য মতে ১২/১৩ বছর বয়সে]
পুত্র-কন্যা : দুই কন্যা এবং তিন পুত্র। কন্যাদ্বয়- শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। পুত্রদ্বয় : শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল।
মৃত্যু : ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫; ২৯ শ্রাবণ ১৩৮২ বঙ্গাব্দ।
ভাই-বোন : ৪ বোন ও ২ ভাই (তিনিসহ)।
ছোটভাই : শেখ আবু নাসের।
বড় বোন : ফাতেমা বেগম।
মেজবোন : আছিয়া বেগম।
সেজবোন : আমেনা বেগম।
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা জীবন
১৯২৭ : সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা এম.ই.স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন।
১৯২৯ : নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ সীতানাথ একাডেমিতে (বর্তমান নাম গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল) তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন।
১৯৩৪-৩৬ : বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন। চার বছর পড়তে পারেননি। ১৯৩৯ সালে তার চোখে ‘গ্লকোমা’ নামক রোগ এবং একটি চোখের অপারেশন হয়। তখন তিনি গৃহশিক্ষকের কাছে পড়েন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী কাজী আব্দুল হামিদ ছিলেন তার গৃহশিক্ষক।
১৯৩৭ : গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ মিশনারি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন।
১৯৩৮ : ১৬ জানুয়ারি বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে এলে তার সঙ্গে শেখ মুবিবুর রহমানের পরিচয় হয়।
১৯৩৮ : সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি পতিবাদ সভা করার দুঃসাহসের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম কারাবরণ করেন।
১৯৪২ : অসুস্থতার কারণে একটু বেশি বছর বয়সে এন্ট্রাস (প্রবেশিকা) পাস করেন এবং কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ) ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। শেখ মুজিবুর রহমান এ সময়ে কলেজের বেকার হোস্টেলের ২৩ ও ২৪ নম্বর রুমে থাকতেন।
১৯৪৭ : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এ বছরের শেষ দিকে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গণতান্ত্রিক যুব কর্মীদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৪৮ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।
বঙ্গবন্ধুর সংসার জীবন
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৩৮ সালে আঠারো বছর বয়সে ফজিলাতুননেছার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বলে তথ্য পাওয়া গেলেও অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি উল্লেখ করেছেন বিয়ের সময় তার বয়স ১২/১৩ বছর। এই দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যাদ্বয় হলেন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। পুত্রদের নাম – শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল। তিন পুত্রই ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
রত্নগর্ভা বেগম ফজিলাতুননেছা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী ফজিলাতুননেছা রেণু ৮ আগস্ট, ১৯৩০ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শেখ জহুরুল হক ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জ্ঞাতি সম্পর্কিত চাচা এবং কৃষিজীবী। মাতা হোসনে আরা বেগম। দুই বোনের মধ্যে তিনি ছোট ছিলেন। মাত্র তিন বছর বয়সে পিতৃহীন হওয়ায় পিতামহ শেখ আবুল কাশেশ চাচাত ভাই শেখ আবদুল হামিদের নাতি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে দেন। পাঁচ বছর বয়সে মাতৃহীন হওয়ায় শেখ মুজিবের মা সায়েরা খাতুন তাকে ঘরে তুলে নেন এবং নিজের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে শিক্ষা-দীক্ষা ও গৃহকর্মে বড় করে তোলেন। প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন গৃহশিক্ষক ও বাড়ির কাছের স্কুলে। তিনি শৈশব থেকেই শেখ মুজিবের কর্মকাণ্ড ও চিন্তাভাবনার একান্ত সঙ্গী হয়ে ওঠেন।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দিতে যাবার পূর্বে ফজিলাতুননেছা স্বামী শেখ মুজিবকে শুধু বলেছিলেন, ‘তোমার সামনে জনগণ, পেছনে গুলি; তোমার হৃদয় যা চাইবে তুমি তাই বলবে আজ’। একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সৈন্যরা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়, আর এদিকে বেগম ফজিলাতুননেছা সন্তানদের নিয়ে ১৮টি বাড়িতে আত্মগোপনের পর গ্রেপ্তার হন এবং ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত দুঃসহ বন্দিজীবন যাপন করেন। শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের উপযুক্ত ও আদর্শ স্ত্রী হিসেবে শুধু নয়, একজন সাহসী ও সর্বংসহা বাঙালি নারী হিসেবে ফজিলাতুননেছা রেণু বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে মাতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত। তিনি একজন রাষ্ট্রনেতার স্ত্রী হয়েও অত্যন্ত সরল সাধারণ জীবনযাপন করতেন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন (১৯৩৯-১৯৭৫)
১৯৩৯ : গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ মিশনারি স্কুলে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সভা করার কারণে বঙ্গবন্ধু কারাবরণ করেন।
১৯৪৩ : সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং মুসিলম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৪৪ : কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদান করেন। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন। এ বছরই ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের সম্পাদক নিযুক্ত হন।
১৯৪৬ : বিনা প্রতিদ্ধন্দ্বিতায় ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন
১৯৪৮ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪ জানুয়ারি মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন গণপরিষদ অধিবেশনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে শেখ মুজিবুর রহমান তার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট আহ্বানকালে শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন।
১৯৪৯ : ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং জেলে থাকা অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান দলের যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫০ : ১ জানুয়ারি এই আন্দোলনের কারণে মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন।
১৯৫২ : ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র সমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ অনেকে শহীদ হন। শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানা থেকে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলি বর্ষণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং জেলখানায় একটানা ১৩ দিন অনশন অব্যাহত রাখেন। টানা অনশনে অসুস্থ হলে তাকে স্বাস্থ্যগত কারণে মুক্তি দেওয়া হয়।
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন
১৯৫৩ : ১৬ নভেম্বর প্রাদেশিক আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রথম সাধারণ নির্বাচনে সব বিরোধী দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।
১৯৫৪ : ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনে বিজয়ী হয়। ২ এপ্রিল যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। ১৪ মে শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় বয়ঃকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৫ মে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৫৫ : ৫ জন শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানে জনসভা থেকে পূর্বপাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে ২১ দফা ঘোষণা করা হয়। ২১-২৩ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ অধিবেশনে ধর্মনিরপেক্ষতা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দ প্রত্যাহার করে নতুন নামকরণ করা হয় ‘আওয়ামী লীগ’। শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৬ : ১৬ ডিসেম্বর শেখ মুজিবুর রহমান কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন।
১৯৫৭ : সংগঠনকে সুসংগঠিত করার উদ্দেশ্যে ৩০ মে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মুজিবুর রহমান মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান নেতা
১৯৬১ : সামরিক শাসন ও আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমান গোপন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য বিশিষ্ট ছাত্র নেতৃবৃন্দ দ্বারা ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামে একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৬২ : ৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। ২ জুন চার বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটলে ১৮ জুন শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি লাভ করেন।
১৯৬৪ : ৫ মার্চ এবং ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। তার নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিরোধী ‘দাঙ্গা প্রতিরোধ’ কমিটি গঠিত হয়। ২৬ জুলাই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সম্মিলিত বিরোধী দল COP (কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি) গঠিত হয়।
ছয় দফা দাবি উত্থাপন
১৯৬৬ : ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের জাতীয় সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করেন। প্রস্তাবিত ৬ দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। ১ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফা গৃহীত হয়।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
১৯৬৮ : ৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর আসামী করে মোট ৩৫ জন বাঙালি সামরিক অফিসার, সেনা সদস্য ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। ১৭ জানুয়ারি তাকে পূর্ববর্তী একটি মামলায় খালাস করা হয় এবং ১৮ জানুয়ারি তাকে আবার জেলগেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২৮ জানুয়ারি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে লিখিত বিবৃতি দেন। এই বিবৃতি পড়ে শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি ও তার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ছাত্র সমাজ ছয় দফার সমর্থনে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করে। ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামীদের বিচার কার্য শুরু হয়।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও বঙ্গবন্ধু উপাধি
১৯৬৯ : ৩০ জানুয়ারি উদ্ভূত পরিস্থিতি ঠেকাতে আলোচনার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব দেয় পাকিস্তানি জান্তা সরকার। কিন্তু তিনি সে প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে মামলার অন্যতম আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হককে নির্মমভাবে হত্যা করা হলে বিক্ষুদ্ধ জনতা বাধভাঙ্গা বন্যার মতো রাস্তায় নেমে আসে। ২২ ফেব্রুয়ারি জনগণের অব্যাহত চাপের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য’ শিরোনামে মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্য আসামীদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এখানেই ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ তাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ৫ ডিসেম্বর শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ববাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’।
১৯৭০ এর নির্বাচন
১৯৭০ : ১৯৫৮ সালের পর ১ জানুয়ারি ১৯৭০ সালে প্রথম রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ এবং ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টি আসনের মধ্যে ৩০৫টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
স্বাধীনতা ঘোষণা
১৯৭১ : ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক যুগান্তকারী ভাষণে ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম”। ১৬ মার্চ বিস্ফোরোন্মখ বাংলাদেশে আসেন ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার দীর্ঘ আলোচনা শুরু হয়। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫১তম জন্মদিন। এই দিন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা থেকে ফিরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন ‘এ দেশে জন্ম দিনই বা কি আর মৃত্যু দিনই বা কী? আমার জনগণই আমার জীবন।’ ২৫ মার্চ পৃথিবীর ইতিহাসে এক নৃশংসতম কালো রাত্রি। রাত সাড়ে এগারোটায় শুরু হয় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ বা ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। ২৪ মার্চ মধ্য রাত শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে (১.২০ মি.) প্রেফতার হওয়ার পূর্বে ১২.২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাবার্তা ওয়ারলেস যোগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীকে প্রেরণ করেন। চট্টগ্রাম বেতার থেকে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর বাণী স্বকণ্ঠে প্রচার করেন।
বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল (১৯৭২-১৯৭৫)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে প্রথম সরকারের মাত্র সাড়ে তিন বছরের সংক্ষিপ্ত সময়টুকু নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। শূন্য থেকে শুরু করে তার সরকার যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটি দেশের অগণিত সমস্যাকে মোকাবিলা করতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং জাতিগঠন কার্যক্রম শুরু হয়। আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন, যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের জনরোষ থেকে রক্ষা করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো লক্ষ লক্ষ ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করা এবং আরো অনেক সমস্যার সমাধান তার সরকারের সামনে সুবিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এতসব সমস্যা সত্ত্বেও শেখ মুজিব একটি নতুন শাসনতন্ত্র প্রণয়নে এখনই দ্বিধাগ্রস্ত হননি এবং সে কাজটি তিনি দশ মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করেন। স্বাধীনতার তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় মিত্রবাহিনী প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা হয়। পনেরো মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় (৭ মার্চ, ১৯৭৩)। একশত চল্লিশটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির পথনির্দেশনা নির্ধারণ করেন : ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়।’ বাস্তবিকপক্ষে মুজিব সরকার গুরুত্বপূর্ণ সকল ক্ষেত্রে মৌলিক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সূচনা করেন।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড (১৫ আগস্ট, ১৯৭৫)
১৫ আগস্ট ১৯৭৫, ২৯ শ্রাবণ ১৩৮২ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার। শ্রাবণের শেষ দিন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে হঠাৎ সামরিক জিপ, ট্যাংক ও ট্রাকের ছোটাছুটি শোনা গেল। তারপর গুলি আর শুলি, শুধু গুলির শব্দ। রেডিওতে মেজর ডালিম কর্কশ কণ্ঠে বিকৃত বাংলায় ঘোষণা করল : ‘শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। দেশে সামরিক আইন জারি করা হয়েছে।’ প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটি প্রথমে ঘিরে ফেলা হয়। গেটের রক্ষীরা প্রতিরোধ করতে উদ্যত হলে তাদের থামানো হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল আহমেদ খবর পেয়ে ৩২ নম্বর রোডের বাসায় আসার পথে তাকে রাস্তার ওপর গুলি করে হত্যা করা হয়। বড় ছেলে শেখ কামাল ঘুমভাঙ্গা চোখ নিয়ে নিচে নেমে এলে তাকে অফিস ঘরের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু সিঁড়িতে এলে তাকেও গুলি করা হয়। বঙ্গবন্ধু পড়ে গেলেন সিঁড়িতেই। বেগম মুজিব চলে এসেছিলেন তার পেছন পেছন, বঙ্গবন্ধু তাকে ভেতরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু খুনিরা বঙ্গবন্ধুর লাশ টপকে ভেতরে ঢুকে শোবার ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা বেগম মুজিবকে গুলি করে হত্যা করে।
ঢাকায় বিকেলের মধ্যে খবর ছড়িয়ে গেল যে, বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা এবং জামালের স্ত্রী রোজী বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে নিহত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার এক কন্যা বেবী, এক পুত্র আরিফ, নাতি বাবু ও ভ্রাতুষ্পুত্রকে হত্যা করা হয়। বাড়ির কয়েকজন কাজের লোক ও পুলিশকেও ঘাতকরা হত্যা করে। তার স্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সেজ বোন আমেনা বেগম ও মেয়ে বুলেটবিদ্ধ হন। তাদের হাসপাতলে নেওয়া হয়। ধানমন্ডিতে শেখ মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ঘরে ঢুকে গুলি করে মারা হয়। [সূত্র : বঙ্গবন্ধু কোষ]
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় ও বিচার
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২নং নিজ বাড়িতে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার দীর্ঘ ২১ বছর পর দায়ের করা হয় মামলা। ১৯৯৮ সালে বিচারিক আদালত ১৫ আসামির ফাঁসির রায় দেন। পরিশেষে হাইকোর্টের বিচার শেষে ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্বতিক্রমে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে এই মামলার চূড়ান্ত রায় প্রদান করেন।
উল্লেখযোগ্য ঘটনাক্রম :
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা।
২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫ : এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে খন্দকার মোশতাক সরকার ইমডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে।
১২ আগস্ট, ১৯৯৬ : বিশেষ ক্ষমতা আইনে কর্নেল ফারুকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
২ অক্টোবর, ১৯৯৬ : হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রিসেপসনিস্ট কাম রেসিডেন্ট পিএ আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় ২৪ আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
১২ নভেম্বর, ১৯৯৬ : আওয়ামী লীগ সরকার সংসদে দায়মুক্তি অধ্যাদেশটি বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করে।
১৫ জানুয়ারি, ১৯৯৭ : তদন্ত শেষে পুলিশ ২৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭ : পলাতক আসামিদের নামে গেজেট নোটিশ জরি হয়।
১ মার্চ, ১৯৯৭ : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পালে বিশেষ এজলাস গঠন করে এই মামলার বিচারক করা হয় কাজী গোলাম রসুলকে। রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ পিপি হন সিরাজুল হক।
১২ মার্চ, ১৯৯৭ : চার আসামি মারা যাওয়ায় ২০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকায় দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু হয়।
৭ এপ্রিল, ১৯৯৭ : একই আদালত ২০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
৮ নভেম্বর, ১৯৯৮ : দেড়শ কার্যদিবস শুনানির পর ঢাকার দায়রা জজ গোলাম রসুল ২০ আসামির মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এ দিনই ব্যাংকক থেকে আসামি বজলুল হুদাকে দেশে ফেরত আনা হয়।
ওই রায়ের পর এর বিরুদ্ধে কারাবন্দি চার আসামি অবসরপ্রাপ্ত মেজর বজলুল হুদা, বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ হাইকোর্টে আপিল করেন।
৩০ মার্চ, ২০০০ : ডেথ রেফারেন্স ও আপিল হাইকোর্টের শুনানির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
১০ এপ্রিল, ২০০০ : এই মামলা শুনতে এক বেঞ্চের বিব্রতবোধ প্রকাশ করে।
২৪ এপ্রিল, ২০০০ : অপর এক বেঞ্চের বিব্রতবোধ।
২৮ জুন, ২০০০ : হাইকোর্টের বিচারপতিরা কয়েক দফা বিব্রত হওয়ার পর ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়।
১৪ ডিসেম্বর, ২০০০ : ৬৩ কার্যদিবস শুনানি শেষে হাইকোর্ট এ মামলায় বিভক্ত রায় দেন। বিচারপতি মো. রুহুল আমি ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। অপর বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ১৫ আসামির ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন।
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০০১ : হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিমের আদালতে মামলার শুনানি শুরু।
৩০ এপ্রিল, ২০০১ : তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ১২ আসামির মধ্যে পরে ওই বছরই কারাবন্দি চার আসামি আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন।
১৩ মার্চ, ২০০৭ : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি ল্যান্সার একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হন।
১৮ জুন, ২০০৭ : ল্যান্সার এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
২৪ জুন, ২০০৮ : ল্যান্সার মহিউদ্দিন জেল আপিল করেন।
২ আগস্ট, ২০০৭ : হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের দায়ের করা লিভ টু আপিলের ওপর শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করা হয়।
৭ আগস্ট ২০০৭ : বিচারপতি তাফাজ্জল ইসলাম, বিচারপতি জয়নাল আবেদীন ও বিচারপতি মো. হাসান আমিনের আপিল বিভাগের বেঞ্চ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ শুরু করেন।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৭ : আপিল বিভাগ ২৫ কার্যদিবস শুনানি গ্রহণ করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ (লিভ মঞ্জুর) করেন।
৩০ অক্টোবর, ২০০৭ : পেপারবুক তৈরি করে জমা দিতে আসামি পক্ষের শেষ সময়। তারা পেপারবুক ও যুক্তির সংক্ষিপ্তসার আদালতে জমা দেন।
২৩ আগস্ট, ২০০৯ : রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তির সংক্ষিপ্তসার আপিল বিভাগে জমা দেওয়া হয়।
২৪ আগস্ট, ২০০৯ : আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল শুনানির জন্য ৫ অক্টোবর তারিখ ধার্য করে দেন।
৪ অক্টোবর, ২০০৯ : মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে একটি বেঞ্চ গঠন করা হয়।
৫ অক্টোবর, ২০০৯ : আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে চূড়ান্ত আপিল শুনানি শুরু হয়। ২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর, ২৯ দিনের শুনানির পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওইদিন (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতিকে দায়মুক্ত করা হয়।
রায় কার্যকর : ২০১০ সালের ২৮ জানুয়রি বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয় তারা হলেন- লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহম্মেদ (আর্টিলারি) ও লে. কর্নেল একেএম মহিউদ্দিন আহম্মেদ (ল্যান্সার)। এছাড়াও এখনো ১২ জনের মধ্যে ছয়জন বিদেশে পালিয়ে রয়েছে। পলাতকরা হলেন কর্নেল খন্দকার আব্দুর রশিদ, লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল এএম রাশেদ চৌধুরী, রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, লে. কর্নেল এসএইচ নূর চৌধুরী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আব্দুল মাজেদ।
উপাধি/অন্য নাম | নাম/উপাধি দাতা | সময় | প্রেক্ষাপট |
---|---|---|---|
মুজিব (উত্তরদাতা) | শেখ আব্দুল মজিদ (বঙ্গবন্ধুর নানা) | মার্চ ১৯২০ | বঙ্গবন্ধুর জন্মের পর তার নানা এ নামটি রাখেন। |
খোকা | বাবা-মা | শৈশবকাল | বাবা-মা আদর করে ডাকতেন ‘খোকা’ বলে। |
জাতির জনক | শাজাহান সিরাজ (ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক) | ৩ মার্চ, ১৯৭১ | পল্টন ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত জনসভায় গঠিত বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ইশতেহারে ‘জাতির জনক’ হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়। |
বিগ গার্ড | জেনারেল রাও ফরমান আলী এবং জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা (অপারেশন সার্চলাইটের নীল নকশা প্রস্তুতকারী) |
২০ মার্চ, ১৯৭১ (সার্চলাইট পরিকল্পনা অনুমোদনের দিন) |
২৫ মার্চ মধ্যরাতে (১২.২০ মি.) বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার অভিযানের Code Name এটি। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর ওয়্যারলেসে সেনা সদর দপ্তরে জানানো হয় – ‘Big Bird in the cage’ |
রাজনীতির কবি (Poet of Politics) | লোরেন জেঙ্কিন্স | ৫ এপ্রিল, ১৯৭১ | মার্কিন সাপ্তাহিক নিউজ উইক এর বঙ্গবন্ধুর ওপর ‘Civil war in Pakistan’ শিরোনামে করা কভার স্টোরিতে কাকে Poet of Politics হিসেবে অভিহিত করা হয়। |
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি | বিবিসি বাংলা | ২৬ মার্চ, ২০০৪ | বিবিসি বাংলা সার্ভিসের শ্রোতা জরিপে নির্বাচিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০ বাঙালির তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৪ এপ্রিল, ২০০৪ ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’ হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। |
অসমাপ্ত আত্মজীবনী
২০০৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা আকস্মিকভাবে তার কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলি ছিল অতি পুরোনো, পাতাগুলো জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পস্ট। সেই খাতায় শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সম্পাদনায় এই আত্মজীবনীমূলক লেখাকে গ্রন্থে রূপান্তরিত করা হয়। বইটিতে আত্মজীবনী লেখার প্রেক্ষাপট, লেখকের বংশ পরিচয়, জন্ম, শৈশব, স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনের পাশাপশি সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দর্ভিক্ষ, বিহার ও কলকাতার দাঙ্গা, দেশভাগ, কলকাতাকেন্দ্রিক প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগের রাজনীতি, দেশ বিভাগের পরবর্তী সময় থেকে ১৯৫৫ সাল অবধি পূর্ব বাংলার রাজনীতি, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের অপশাসন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন, আদমজীর দাঙ্গা, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক শাসন ও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে বিস্তৃত বিবরণ এবং এসব বিষয়ে লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে। আছে লেখকের কারাজীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সর্বোপরি সর্বংসহন সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুননেছার কথা, যিনি তার রাজনৈতিক জীবনে সহায়ক শক্তি হিসেবে সকল দুঃসময়ে অবিচল পাশে ছিলেন। একই সঙ্গে লেখকের চীন, ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান ভ্রমণের বর্ণনাও বইটিকে বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। কারাগারে বসে লেখা বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী অসমাপ্ত হলেও একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিকের আত্মজীবনী রচনার ক্ষেত্রে এ গ্রন্থ একটি উজ্জ্বল মাইলফলক। তার আত্মজীবনী শুধু এক রাজনীতিকের স্মৃতিকথা নয়, উপমহাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের এক অনন্য স্মৃতিভাণ্ডার। বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে শত শত বই রচিত হয়েছে, কিন্তু ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র সঙ্গে অন্য কোনো বইয়ের তুলনা হয় না। তারই সুযোগ্য আত্মজা শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৮ জুন, ২০১২ প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৩২৯ পৃষ্ঠার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং তার ৩২৩ পৃষ্ঠার ইংরেজি অনুবাদ THE UNFINISHED MEMOIRS । বাংলা মূল বই এবং তার ইংরেজি অনুবাদ উল্লেখযোগ্য দুটি কারণে : তাহলো বইটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছয় পৃষ্ঠার একটি ভূমিকায় সমৃদ্ধ এবং ভাষান্তরটি যথার্থই প্রশংসনীয়। মূল বাংলা এবং তার ইংরেজি অনুবাদ দুটিরই মুদ্রণ এবং প্রকাশনা সৌকার্য নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক মানের। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বাঙালির ও বাংলার সংগ্রামমুখর ইতিহাসের একটি অসাধারণ প্রামাণ্য দলিল, বাঙালির জীবনে যা অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।
অন্য ভাষায় অসমাপ্ত আত্মজীবনী
ভাষা | অনুবাদক | মোড়ক উন্মোচন |
---|---|---|
ইংরেজি | ড. ফকরুল আলম (বাংলাদেশ) | ১৮ জুন, ২০১২ |
উর্দু | ইয়াওয়ার আমান | ২০১৩ |
জাপানি | কাজুহিরো ওয়াতানাবে | ২ আগস্ট, ২০১৫ |
চীনা | চাই শি | ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ |
আরবি | মোহাম্মদ দিবাজাহ (ফিলিস্তিন) | ২০১৬ |
ফরাসি | ফ্রান্স ভট্টাচার্য | ২৬ মার্চ, ২০১৭ |
হিন্দি | প্রেম কাপুর | ৮ এপ্রিল, ২০১৭ |
তুর্কি | আতাতুর্ক সংস্কৃতি ও গবেষণা কেন্দ্র | ২৭ মার্চ, ২০১৮ |
নেপালি | অর্জুন বাহাদুর থাপা ও মহেশ পৌড়েল | ৮ অক্টোবর, ২০১৮ |
স্পেন | বেঞ্জামিন ক্লার্ক | ১১ অক্টোবর, ২০১৮ |
অসমিয়া | সৌমেন ভারতীয়া ও জুরি শর্মা | ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ |
রুশ | ভিতালি ভি নাওমকিন | অক্টোবর, ২০১৯ |
কারাগারের রোজনামচা
১৭ মার্চ, ২০১৭ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীর দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘কারাগারের রোজনামচা’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়। বইটির নামকরণ করেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। বইটিতে বঙ্গবন্ধুর ১৯৬৬-১৯৬৮ সাল পর্যন্ত কারাগারে অবস্থানকালের স্মৃতি স্থান পায়। ৩৩২ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থের প্রকাশক বাংলা একাডেমি। শিল্পী রাসেল কান্তি দাশ অঙ্কিত বাঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি অবলম্বনে গ্রন্থের প্রচ্ছদ ও নকশা করেন তারিক সুজাত। ইংরেজি এবং অসমিয়া ভাষাও গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। এর ইংরেজি নাম PRISON DIARIES । আর ইংরেজি অনুবাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী নিয়ে প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ হলো ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। বঙ্গবন্ধুর চীন সফর ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নিয়ে আত্মজীবনীর আরো দুটি গ্রন্থ প্রকাশ করা হবে।
মুজিবনগর সরকারের গঠন ও কার্যাবলি
১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে এ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে এবং অধ্যাপক এম ইউসুফ আলী স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
- মুজিবনগর সরকার বা গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় – ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল।
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র জারি করা হয়- ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল।
- বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছিল- কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার ভবেরপাড়া গ্রামে (বর্তমান মুজিবনগর)।
- মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাজধানীর নাম- মুজিবনগর (১৭ এপ্রিল – ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত)
- মুজিবনগর সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে – ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১; মেহেরপুর বৈদ্যনাথতলার (পরবর্তীতে মুজিবনগর) আমবাগানে।
- আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করেন- অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম; ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১।
- প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ক্যাম্প বা অফিস ছিল – ভারতের কলকাতাস্থ ৮ নম্বর থিয়েটার রোডে।
- মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
- রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন- সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
- মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন- তাজউদ্দীন আহমদ।
- অস্থায়ী সরকারের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন- অধ্যাপক এম ইউসুফ আলী।
- অস্থায়ী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিল- ৮ জন।
- সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয- ৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১।
- সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদে রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে- ৫টি।
এক নজরে বাংলাদেশের প্রথম সরকার (মুজিবনগর সরকার)
গঠন : ১০ এপ্রিল, ১৯৭১।শপথ গ্রহণ : ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১।
অস্থায়ী সচিবালয় ও ক্যাম্প অফিস : ৮নং থিয়েটার রোড, কলকাতা।
রাষ্ট্রপতি : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি)।
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি : সৈয়দ নজরুল ইসলাম (উপ-রাষ্ট্রপতি)।
প্রধানমন্ত্রী : তাজউদ্দীন আহমদ।
অর্থমন্ত্রী : এম. মনসুর আলী।
স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী : এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান।
পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী : খন্দকার মোশতাক আহমেদ।
প্রধান সেনাপতি : কর্নেল (অব.) এম এ জি ওসমানী এম এন এ।
চিফ অব স্টাফ : কর্নেল (অব.) আব্দুর রব, এম এন এ।
বিমানবাহিনী প্রধান : গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ.কে. খন্দকার।
সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ
নাম | পদবি | পরিচিতি |
---|---|---|
১. আব্দুল হামিদ খান ভাসানী | চেয়ারম্যান | সভাপতি, ন্যাপ ভাসানী |
২. তাজউদ্দীন আহমদ | প্রধানমন্ত্রী | পদাধিকারবলে |
৩. মণি সিং | সদস্য | সভাপতি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি |
৪. অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ | সদস্য | সভাপতি, ন্যাপ মোজাফ্ফর |
৫. মনোরঞ্জন ধর | সদস্য | সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেস |
৬. খন্দকার মোশতাক আহমেদ | সদস্য | পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পদাধিকারবলে |
৭. আওয়ামী লীগ মনোনীত ২ জন | সদস্য | --- |
অসহযোগ আন্দোলন ১৯৭১
অসহযোগ আন্দোলন – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ১৯৭১ সালের ২ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে তাই অসহযোগ আন্দোলন নামে পরিচিত। হরতাল, অবরোধ, কল কারখানা বন্ধ, অফিস আদালত বন্ধ প্রভৃতি কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে অসহযোগ আন্দোলন পালিত হয়েছিল।
- ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছিল – ২ মার্চ।
- ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন শেষ হয়েছিল – ২৫ মার্চ।
- অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতেই ২ মার্চ ছাত্রসংগঠনগুলো যে পরিষদ গঠন করেছিল – স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
- ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন – ১ মার্চ, ১৯৭১।
- অধিবেশন স্থগিতকরণের প্রতিবাদে ঢাকায় ও সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল পালিত হয় যথাক্রমে – ২ মার্চ ও ৩ মার্চ।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে প্রথমবারের মত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয় – ২ মার্চ।
- ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে ‘স্বাধীনতা ইশতেহার’ ঘোষণা করে – ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি – সঙ্গীতটি পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত হয় – ৩ মার্চ, ১৯৭১।
- বঙ্গবন্ধু ‘রেসকোর্স ময়দানে’ ঐতিহাসিক ভাষণ দেন – ৭ মার্চ।
- অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম ছয়দিনে সরকারি প্রেসনোট অনুযায়ী হতাহতের সংখ্যা ছিল – ১৭২ জন নিহত এবং ৩৫৮ জন আহত।
- ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে – ২৩ মার্চ।
- স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয় – অসহযোগ আন্দোলন।
- ‘লোকটি এবং তার দল পাকিস্তানের শত্রু, এবার তারা শাস্তি এড়াতে পারবে না’ উক্তিটি করেছিল – জেনারেল ইয়াহিয়া খান।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক ঘোষণা করা হয় – ৩ মার্চ।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ
ভাষণকাল : ৭ মার্চ, ১৯৭১।
ভাষণ শুরু : বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে।
স্থান : রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান), রমনা, ঢাকা।
মোট সময় : ১৮ মিনিট, মতান্তরে ১৯ মিনিট।
শব্দ সংখ্যা : ১১০৮টি।
চিত্র ধারণকারী : পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়ের এমএনএ।
রেকর্ডকারী : এএইচ খন্দকার।
ভাষণে দাবি ছিল : ৪টি।
প্রথম লাইন : ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
শেষ লাইন : এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।
ইউনেস্কো ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য ঘোষণা করে – ৩০ অক্টোবর, ২০১৭।
ভাষণটি অনূদিত হয় – ১২টি ভাষায়।
৭ মার্চ ভাষণ প্রদানকালে যে আন্দোলন চলছিল – অসহযোগ আন্দোলন।
অসহযোগ আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছিল – ৭ মার্চ ভাষণের পর।
অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় – ৭ মার্চ ভাষণে।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ সংবিধানের যে তফসিলে অন্তর্ভুক্ত – পঞ্চম তফসিলে।
স্বাধীনতা ঘোষণা
ষষ্ঠ তফসিল
[ ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ]
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা।
ইহাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।
শেখ মুজিবুর রহমান
২৬ মার্চ, ১৯৭১
স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের শুরু – ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত বারোটার পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
স্বাধীনতার ঘোষক – জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি হয় – ১০ এপ্রিল, ১৯৭১।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানে সংযোজন হয় – পঞ্চদশ সংশোধনীতে।
আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন – অধ্যাপক ইউসুফ আলী।
২৬ মার্চ অপরাহ্ন ২টা ৩০ মিনিটে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদন – আব্দুল হান্নান।
২৭ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কুলুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করেন – মেজর জিয়াউর রহমান।
আরো দেখুন :
magnificent
ReplyDelete১৯৫২ হবে
ReplyDeleteসংশোধন করা হয়েছে। ধন্যবাদ, হেল্প করার জন্য।
Delete