সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্ট বিভাগের মধ্যে পার্থক্য

সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও অবস্থান অত্যন্ত মর্যাদাশীল। বিচার বিভাগ আইনের অনুশাসনকে অক্ষুন্ন করে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের গঠন কাঠামো স্তরভিত্তিক। সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। হাইকোর্ট বিভাগ সুপ্রিমকোর্টের একটি বিভাগ। 

বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “সুপ্রিম কোর্ট নামে বাংলাদেশের একটি সর্বোচ্চ আদালত থাকিবে এবং আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ লইয়া তাহা গঠিত হইবে।” সুতরাং এতে স্পষ্টত বোঝা যায় যে, সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্ট ও হাই কোর্ট বিভাগের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান এবং হাইকোর্ট বিভাগ সুপ্রিম কোর্টের একটি বিভাগ মাত্র। 

সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে যে, প্রধান বিচারপতি এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি ও আপীল বিভাগে নিযুক্ত বিচারকগণ আপীল বিভাগে আসন গ্রহণ করবেন। অন্যান্য বিচারকগণ হাইকোর্ট বিভাগে আসন গ্রহণ করবেন। এ থেকে বোঝা যায় সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকদের মর্যাদারও পার্থক্য রয়েছে। 

সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের ১ দফা অনুসারে, সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়, ডিক্রি, আদেশ বা দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল শুনানী ও তা নিষ্পত্তি বিধান করতে পারে। সংবিধান অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ সংবিধান বিরোধী বিধি-বিধানকে অবৈধ ও বিধি বহির্ভূত ঘোষণা করতে পারে। অন্যদিকে হাইকোর্ট বিভাগ কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে তার বা জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট অধিকার রক্ষার বিধান জারি করতে পারে। 

প্রধান বিচারপতি নিয়োগ: সংবিধান অনুসারে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি একজন অতীব সম্মানীয় ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকগণ বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন। সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ প্রদান করেন। রাষ্ট্রপতিই প্রধান বিচারপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান। রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে বাধ্য নন। 

পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট। উভয়ের মধ্যে মর্যাদার দিক দিয়ে সামান্য পার্থক্য থাকলেও প্রকৃত প্রস্তাবে এরা অবিচ্ছেদ্য। এরা বিচার ব্যবস্থা সর্বোচ্চ স্তরের দুইটি দিক মাত্র।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post