সাধারণ জ্ঞান : ইতিহাসে অন্যান্য স্মরণীয় যুদ্ধ

ইতিহাসে অন্যান্য স্মরণীয় যুদ্ধ 


কলিঙ্গ যুদ্ধ : ২৬১ খ্রীস্ট পূর্বাব্দে সম্রাট অশোক কলিঙ্গের রাজাকে পরাজিত করেন। 

বদরের যুদ্ধ : ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে মক্কার বদর নামক স্থানে মুসলিম বাহিনী ও মক্কার পৌত্তলিকদের মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে ৭০ জন কাফের নিহত ও ৭০ জন বন্দী হয়। মুসলমানদের পক্ষে ১৩ জন শহীদ হন। মুসলমানরা এ যুদ্ধ জয়ী হন। 

উহুদের যুদ্ধ : ৬২৫ খ্রিস্টাব্দে মদিনার উহুদ প্রান্তরে মক্কার পৌত্তলিক ও মুসলমানদের মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে মুসলমানরা জয়ী হন। 

খন্দকের যুদ্ধ : ৬২৭ খ্রিস্টাব্দে মুসলমান ও কুরাইশদের মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। 

তাবুকের যুদ্ধ : ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে মুসলমান ও রোমান বাহিনীর মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। 

তরাইনের প্রথম যুদ্ধ : ১১৯১ খ্রিস্টাব্দে পৃথ্বিরাজ চৌহান এবং মুহাম্মদ ঘোরীর মধ্যে তরাইনের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘোরী পরাজিত হয়। 

তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ : ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে পৃথ্বিরাজ চৌহান এবং মুহাম্মদ ঘোরীর মধ্যে এই যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুহাম্মদ ঘোরী জয় লাভ করে। 

ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ : ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে যিশুখ্রিস্টের জন্মভূমি জেরুজালেম মুসলমানদের করতলগত হলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টানরা ১০৯৫ – ১২৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আটটি ক্রুসেড ঘোষণা করে। যা ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ নামে পরিচিত। 

শতবর্ষের যুদ্ধ : ইংরেজ ও ফরাসীদের মধ্যে ১৩৩৮ – ১৪৫৩ সাল পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলে। ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড ফ্রান্সের সেনাপতির দায়িত্ব নিলে তাঁর বীরত্বের মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধ পরিসমাপ্তি ঘটে। 

পানিপথের প্রথম যুদ্ধ : ১৫২৬ সালে বাবর ও ইব্রাহীম লৌদির মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধের মাধ্যমে বাবর ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। 

পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ : ১৫৫৬ সালে বৈরাম খান ও হিমুর মধ্যে এ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এ যুদ্ধে বৈরাম খান জয়ী হন। 

পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ : ১৭৬১ সালে আহমেদ শাহ আবদালী ও মারাঠাদের মধ্যে এ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এ যুদ্ধে মারাঠারা পরাজিত হয়। 

হলদিঘাটের যুদ্ধ : ১৫৭৬ সালে হলদিঘাট নামক স্থানে আকবরের সেনাপতি মান সিং এবং রানা প্রতাপ সিংহের মধ্যে যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে রানা প্রতাপ সিং পরাজিত হয়। 

পলাশীর যুদ্ধ : ১৭৫৭ সালে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উ-দৌল্লার সাথে ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভের মধ্যে এ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার মধ্যদিয়ে সিরাজ-উ-দৌল্লা পরাজিত হন এবং ভারতে ব্রিটিশ রাজ্য স্থাপনের পথ সুগম হয়। 

বক্সারের যুদ্ধ : ১৭৬৪ সালে ইংরেজদের সাথে মীর জাফর, সুজা-উ-দৌল্লা ও দ্বিতীয় শাহ আলম এর সম্মিলিত বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ইংরেজরা জয়ী হয়ে ভারতবর্ষে রাজশক্তি প্রতিষ্ঠা করে। 

আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম : ১৭৭৬ – ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত জজ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম চলে। আমেরিকা ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। 

ট্রাপালগার যুদ্ধ : ১৮০৫ সালে এ যুদ্ধে ইংরেজ নৌ-সেনাপতি লর্ড নেলসন এর নেতৃত্বে ফরাসী ও স্পেনের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে। ফলে নেপোলিয়নের ইংল্যান্ড আক্রমণের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। 

ওয়াটারলুর যুদ্ধ : ১৮১৫ সালে ফ্রান্সের সেনাপতি নেপোলিয়নের সাথে ব্রিটিশ সেনাতি ডিউক অব ওয়েলিংটন এর ওয়াটারলু যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে নেপোলিয়ন পরাজিত হয় এবং তাঁকে সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসন দেয়া হয়। 

ফরাসী বিপ্লব : ১৭৮৯ সালে ১৪ জুলাই বাস্তিল দূর্গ আক্রমণের মধ্য দিয়ে ফরাসী বিপ্লব শুরু হয়। রুশো, ভলতেয়ার তাঁদের লিখনির মাধ্যমে ফরাসী বিপ্লবকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। ফরাসী বিপ্লবের শ্লোগান ছিল স্বাধীনতা, সমতা ও ভ্রাতৃত্ব। 

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ : ১৮৫৪ – ১৮৫৬ পর্যন্ত ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও তুরস্কের যৌথ বাহিনীর সাথে রাশিয়ার এ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এ যুদ্ধে রাশিয়া পরাজিত হয়। 

সিপাহী বিপ্লব : ১৮৫৭ সালে ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দেশীয় সিপাহীদের জাতীয় অভ্যুত্থান ঘটে। ইংরেজরা কঠোরভাবে এ বিপ্লব দমন করে। 

আমেরিকার গৃহযুদ্ধ : ১৮৬১ – ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি সাউদান স্টেটস ও নর্দান ফেডারেল স্টেটস এর মধ্যে গৃহযুদ্ধ সংগঠিত হয়। এ সময় ১৮৬৩ সালে আব্রাহাম লিংকন দাস প্রথা বিলোপ করেন। যুদ্ধে উত্তরে রাজ্যগুলো জয়ী হয়। এটি গেটিসবার্গ যুদ্ধ নামে পরিচিত। 

প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ : ১৮৯৪-৯৫ সালে কোরিয়ার প্রশ্নে জাপানের সঙ্গে চীনের এ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। যুদ্ধে জাপান জয়ী হয়ে ফরমোজা ও কোরিয়া হস্তগত করে। 

দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ : ১৯৩১-৩৩ সালে মাঞ্চুরিয়াকে কেন্দ্র করে এ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। যুদ্ধে জাপান জয়ী হয়ে মাঞ্চুরিয়াকে মাঞ্চুকুয়ো নামে একটি রাজ্য স্থাপন করে। 

রুশ-জাপান যুদ্ধ : ১৯০৪-১৯০৫ সালে জাপান ও রাশিয়ার মধ্যে এ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এ যুদ্ধে জাপান রাশিয়াকে পরাজিত করে। 

কোরিয়া যুদ্ধ : ১৯৫০-১৯৫৩ সালে এ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ১৯৪৫ সালে উত্তর কোরিয়ায় রুশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সৈন্য দল প্রবেশ করে ৩৮ অক্ষরেখা বরাবর কোরিয়াকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করে নেয়। ১৯৫০ সালে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোারিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে। এ যুদ্ধে উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য সহযোগিতা দান করে। 

আরব-ইসরাইাল যুদ্ধ : এ পর্যন্ত আরব-ইসরাইল ৪টি যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ১৯৪৮ প্রথম আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়। ১৯৫৬ সালে মিশর কর্তৃক সুয়েজখাল জাতীয়করণ করাকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় আরব-ইসরাইল যুদ্ধ বাঁধে। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড ইসরাইলকে সমর্থন করে। রাশিয়ার হুমকিতে ইসরাইল যুদ্ধ বিরতি মেনে নেয়। ১৯৬৭ সালে তৃতীয় আরব ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইল জেরুজালেমের বিরাট অংশ, সিনাই, পশ্চিম তীর ও গাঁজাসহ সিরিয়ার মালভূমি দখল করে নেয়। এ যুদ্ধ ৬দিন স্থায়ী ছিল। ১৯৭৩ সালে চতুর্থ আরব ইসরাইল যুদ্ধে মিশর সিনাই পূর্নদখল করে। এ যুদ্ধ ১৮ দিন স্থায়ী ছিল। 

ভিয়েতনাম যুদ্ধ : উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের মধ্যে ১৯৫৬ সালে এ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামের পক্ষে এবং রাশিয়া ও চীন উত্তর ভিয়েতনামের পক্ষে অবতীর্ণ হয়। এ যুদ্ধে উত্তর ভিয়েতনামের জয় হয়। ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে এক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে। 

পাক-ভারত যুদ্ধ : ১৯৬৫ সালে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ১৯৬৬ সালে তাসখন্দ চুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। 

ইরাক-ইরান যুদ্ধ : শাত-ইল-আরবের জলধারাকে নিয়ে ইরাক ও ইরানের মধ্যে ১৯৮০-১৯৮৮ পর্যন্ত যুদ্ধ সংগঠিত হয়। জাতিসংঘের যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবে যুদ্ধ বন্ধ হয় এবং ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৮ সালে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ : ২ আগস্ট ১৯৯০ সালে ইরাক কুয়েতকে দখল করে তার ১৯তম রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করে। ফলে ১ জানুয়ারি ১৯৯১ বহুজাতিক বাহিনী ইরাকের উপর হামলা চালায় এবং ইরাক কুয়েত ছাড়তে বাধ্য হয়। ৫ মার্চ ১৯৯১ ইরাক জাতিসংঘের সকল শর্ত মেনে নিয়ে কুয়েত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে এবং যুদ্ধের অবসান ঘটে। 

ইরাক যুদ্ধ : ২০ মার্চ, ২০০৩ সালে ঈঙ্গ মার্কিন বাহিনী এবং ইরাকের মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের উপর পারমানবিক অস্ত্র তৈরির অভিযোগ এনে ঈঙ্গ মার্কিন বাহিনী ইরাকের উপর আক্রমণ করে এবং তারা জয় লাভ করে। ১ জানুয়ারি ২০০৭ সালে সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসির রায় দেয়া হয়। ১৮ ডিসেম্বর ২০১১ ইরাক যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। 

আফগানিস্তান যুদ্ধ : ৭ অক্টোবর, ২০০১ সালে আমেরিকা এবং তালেবান বাহিনীর মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। ওসামা বিন লাদেন কর্তৃক আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংস এবং জঙ্গী কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ এনে এ যুদ্ধ পরিচালনা করে। ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানের এবোটাবাদে আমেরিকার বিমান হামলায় নিহত হন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‍যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। ১ জানুয়ারি ২০১৫ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা সদস্য প্রত্যাহার করে নেন। 
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post