জমি সংক্রান্ত বিষয়টি ভালোভাবে জানতে গেলে কতকগুলি বিশেষ শব্দ জানা প্রয়োজন। কোন সার্ভে (মাপ-জোক), রাইটস (স্বত্ব-লিপি), রেকটি ফিকেশন অভ রাইটস স্বত্ব, ২.৪৭ জোত,সার্চিং রিপোর্টকে বাংলাতে বলা যেতে পারে অনুসন্ধান জনিত নিদির্ষ্ট জমির বর্তমান অবস্থা।
সার্টিফায়েড কপি মানে সরকারী ভাবে পাওয়া প্রতিলিপি, শতক মানে ভূমি রাজস্ব সম্পর্কযুক্ত খতিয়ানে উল্লিখিত ক্ষুদ্রতম এলাকাগত মাপের এককটিকে বলা হয় শতক।
১ একর = ১০০ শতক।
১ শতক– ৪০.৪৭ বর্গমিটার = ৪৩.৬ বর্গফুট।
রেকর্ড অভ রাইট্সের আরেক নাম হল পরচা প্রভৃতি।
মিউটেশনের বাংলা অর্থ পরিবর্তন। মৌজা কথাটি জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে সব সময় ব্যবহৃত হয়। এর অর্থ হল – স্বাভাবিক অর্থে মৌজা = একটি গ্রাম। প্লট মানে খতিয়ানের কোনও একটি অংশ। এখানে যথাসময়ে শব্দগুলিকে ভালভাবে বিশ্লেষণ করা হবে।
১। ভূমি জরিপ কাকে বলে?
ইংরেজি Survey শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে জরিপ। জরিপ শব্দ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হলেও ভূমি জরিপ বলতে বোঝায় মৌজা ভিত্তিক নকশা (Map) প্রলয়ন ও ভূমির মালিকানা সম্পর্কিত ভূমি রেকর্ড যা খতিয়ান প্রস্তুত কার্য প্রণালীতে বুঝায়। জরিপের সময় পুরাতন তৈরীকৃত নকশা ও রেকর্ড সংশোধন করে ভূমি বা জমির শ্রেণীর পরিবর্তনের সাথে মিল রেখে এবং মালিকানার পরিবর্তনের ধারাবাহিকতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে হালকরণ (Up-to-date) করে মৌজার নকশা ও রেকর্ড তৈরী করা হয়।
২। ভূমি জরিপের উদ্দেশ্য কি?
প্রতিটি ভূমির মালিকের অধিকার রয়েছে তার ভূমি বা জমির অবস্থান, আয়তন ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং মালিকানার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ১৮৭৫ সালে Survey Act এবং ১৯৫৭ সালে Technical Rules অনুযায়ী ভূমির জরিপ করা হয়। ভূমি জরিপের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভূমির পরিধি ও পরিমাপ এবং অবস্থান সম্বলিত একটি পূর্ণাঙ্গ নকশা (Map) তৈরী করা যাতে একজন ভূমি মালিক সহজেই তার ভূমি বা জমি সম্পর্কে অবগত হতে পারেন। শহর, গ্রাম ও থানায় ভিন্ন ভিন্ন অনুপাতে ধরা হয়। শহরে ৩২" × ৬৪" বা ৮০ = ১ মাইল, গ্রামে ১৬" = ১ মাইল এবং থানায় ৪" = মাইল অনুপাতে নকশা (Map) প্রস্তুত করা হয়।
৩। ভূমি জরিপের শ্রেণী বিভাগ কয়টি?
ভূমি জরিপকে ২(দুই) শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যথা -
(ক) সার্বিক বা ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ (Major or Cadastral Survey)
(খ) দিয়ারা বা আংশিক জরিপ (Diara or Minor Settlement)
(ক) সার্বিক বা ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ (Major or Cadastral Survey) : সার্বিক বা ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে সি এস নামে আমাদের নিকট ব্যাপকভাবে পরিচিত। বাংলাদেশ প্রথমে জেলাওয়ারী ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভেকে প্রথম ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভের সাথে পার্থক্য করার জন্য রিভিশনাল সেটেলমেন্ট অপারেশন (Revisional Settlement Operation) বা আর. এস. নামে আখ্যায়িত করা হয়। কোন ভূমি বা জমি রাজস্ব ইউনিটের সমস্ত এলাকার (জেলা) নকশা এবং রেকর্ড প্রস্তুত করার জন্য যে জরিপ কার্য পরিচালনা করা হয় তাকে সার্বিক বা ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ বলে।
(খ) দিয়ারা বা আংশিক জরিপ (Diara or Minor Settlement) : একটি জেলায় সম্পূর্ণভাবে এই জরিপ করা হয় না বলে একে আংশিক (Minor) জরিপ বলা হয়। সাধারণত নদী বা সাগপ থেকে জেগে উঠা চর (সিকস্তি/পয়স্তি) জরিপ করার ক্ষেত্রে এই জরিপ কার্য পরিচালিত হয়। সম্ভবত দরিয়া শব্দ থেকেই দিয়ারা শব্দের উৎপত্তি। দরিয়া থেকে চর বা জমি জেগে উঠা জরিপ সংক্রান্ত হওয়ায় এই জরিপটি দিয়ারা জরিপ নামেও ব্যাপকভাবে পরিচিত।
৪। সি. এস. জরিপ কাকে বলে?
ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভেকে সংক্ষিপ্তভাবে সি. এস. জরিপ বলে। দেশের সমস্ত ভূমি বা জমির উপর বিশদভাবে নকশা প্রণয়ন এবং সেখানে প্রত্যেক মালিকের জন্য একটি দাগ নম্বর করে খতিয়ান তৈরী করাকে সি. এস. বা ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ বলে। বঙ্গীয় প্রজাতন্ত্র আইনের ১০ম অধ্যায়ের বিধান অনুযায়ী এই সি. এস. জরিপ করা হয়।
৫। আর. এস. জরিপ কাকে বলে?
রিভিশনাল সেটেলমেন্ট (Rivisional Settlement) কে সংক্ষিপ্ত ভাবে আর. এস. জরিপ বলা হয়। B. T. Act. ১৮৮৫ এবং Survey Act ১৯৭৫ সালের বিধান অনুযায়ী ১৮৮৯ হতে ১৯৪০ মধ্যবর্তী সময়ে সি. এস. বা ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ পরিচালিত হয়। সি. এস. জরিপ সমাপ্তির পর কিছু কিছু জেলায় এই জরিপ সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী আর. এস. বা Rivisional Settlement পরিচালিত হয়। এটাই আর. এস. জরিপ।
৬। আর. এস. জরিপের আবশ্যক কি?
ভূমির বা জমির নকশা ও রেকর্ড যদি যথাযথ না থাকে তাহলে একজন ভূমির মালিক ও সরকারী কর্মকান্ডে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। তাই আর. এস. বা সংশোধনী জরিপের আবশ্যক অপরিসীম। নিচে Up-to-date জরিপের আবশ্যকতার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো -
(১) বিভিন্ন মৌজার সরকারী খাস জমি চিহ্নিত করণ ও তার পরিমাণ নির্ণয়।
(২) ভূমিহীনদের মধ্যে সরকারী খাসজমি বন্টনের লক্ষ্যে খাসজমি চিহ্নিত করণের জন্য আর. এস. বা সংশোধিত জরিপ প্রয়োজন।
(৩) ভূমি সংস্কার অধ্যাদেশ অনুযায়ী বর্গাদার চিহ্নিত করার জন্য সংশোধিত জরিপ প্রয়োজন।
(৪) পরিবারের জন্য জমির উর্ধ্বসীমা আইন কার্যকর করার জন্য সংশোধিত জরিপ আবশ্যক।
(৫) ভূমি উন্নয়ন কর ধার্য ও আদায় করার জন্য আর. এস. জরিপ প্রয়োজন।
(৬) ভূমি উন্নয়ন প্রশাসকের সহযোগীতার জন্য এই জরিপ প্রয়োজন।
(৭) ফ্যামিলি বা পরিবার ভিত্তিক ভূমির মালিকানা নির্ণয় করার জন্য আর. এস. জরিপ Up-to-date রাখা প্রয়োজন।
ভূমি জরিপ চলাকালে ভূমি মালিকদের করণীয় কি?
ভূমি মালিকের জন্য ভূমি বা জমি জরিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোন ভূমি মালিক যদি ভূমি জরিপ কর্মকান্ডকে অবহেলা করেন তাহলে তাকে চরমমূল্য দিতে হতে পারে। জমি জরিপের সময় জমির মালিকানার ভিত্তি জমি রেকর্ড অর্থাৎ খতিয়ান তথা স্বত্বলিপি তৈরী করা হয়। এই রেকর্ডে জমির খাজনা প্রদান, কোন সংস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ, জমি বিক্রয় ইত্যাদির ক্ষেত্রে এই খতিয়ান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সাধারণত কোন এলাকা বা জমি জরিপ শুরু হওয়ার আগে ভূমি প্রশাসন বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অত্র এলাকার জনগণকে অবহিত করেন। তারপর পূর্ব ঘোষিত নির্দিষ্ট সীমানা দেখিয়ে নকশা প্রস্তুতিতে সহায়তা করবেন। যখন খানাপুরি অথবা খানাপুরি কাম বুঝরতে কাজ আমিন শুরু করবেন তখন ভূমি মালিকগণ ভূমি মালিকানা সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র অর্থাৎ আগের রেকর্ড পর্চা বা দলিল দস্তাবেজ নিয়ে মালিক বা তার অভিজ্ঞ প্রতিনিধি মাঠে হাজির থেকে জরিপকারীর নিকট উপস্থাপন করে যথাযথভাবে নাম রেকর্ড করে নিবেন। এক্ষেত্রে সাবেক রেকর্ডের মালিকের যদি মৃত্যু হয় তার উত্তরাধিকারগণ তাদের নাম ও ঠিকানা বর্ণনা করে নতুন করে নাম রেকর্ডভুক্ত করতে আমিনকে সাহায্য করবেন।
জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ -
যদি কোন ব্যক্তির সাথে আপনার জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকে তাহলে প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদিত নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে ডিসপিউট (DISPUTE) দিতে হবে। এই ডিসপিউট দেওয়ার পর একজন কানুনগো উভয় পক্ষের শুনানীর মাধ্যমে এবং দলিল দস্তাবেজ পর্যালোচনা করে তার রায় দিবেন। এই রায় যার অনুকূলে যাবে আমিন তার নাম জরিপের সময় রেকর্ডভুক্ত করবেন।
তসদিকের সময় করণীয় -
খানাপুরী বুঝরত কর্মসূচী শেষ হওয়ার পর একজন তসদিক অফিসারের নেতৃত্বে মৌজা রেকর্ড ২৮ বিধি মোতাবেক তসদিক করা হয়। এই তসদিক অনুষ্ঠিত হওয়ায় কর্মসূচী প্রশাসন সাধারণ নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেন। তসদিকের সময় একজন ভূমি বা জমি মালিকের করণীয় হচ্ছে -
আপনার জমির মালিকানা সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র, দলিল দস্তাবেজ (যেমন – পূর্ববর্তী রেকর্ডের পর্চা অথবা ক্রয়সূত্রে মালিকানার ক্ষেত্রে দলিলপত্র, খাজনার রশিদ ইত্যাদি) তসদিক অফিসারের সামনে উপস্থাপন করে যথাযথভাবে তসদিক সম্পন্ন করে নিতে হবে। এই সময় খসড়া পর্চা প্রয়োজন মতো সংশোধন করে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যদি মাঠে প্রস্তুতকৃত রেকর্ডে কোন ভুল বা ত্রুটি লক্ষণীয় হয় অর্থাৎ যদি কোন আসল মালিকের নাম বাদ পরে বা জালিয়াতির মাধ্যমে কোন অবৈধ ব্যক্তির নাম খতিয়ানে লেখা হয়ে থাকে অথবা অন্য কোন ভুল পরিলক্ষিত হয় তাহলে তা সাথে সাথে তসদিক অফিসারের দৃষ্টিগোচরে আনতে হবে। তারপর তসদিক অফিসার উক্ত ত্রুটি পর্যালোচনা করে রেকর্ড সংশোধন করে দিবেন।
রেকর্ডের খসড়া প্রকশনার পর করণীয়
২৯ বিধি অনুযায়ী তসদিক শেষ হওয়ার পর ভূমি রেকর্ডের খসড়া প্রকাশিত হয় যা ভূমি মালিক বা তার প্রতিনিধিদের পর্যবেক্ষণের জন্য ৩০(ত্রিশ) কার্য দিবস খোলা রাখা হয়। এই খসড়া রেকর্ডে যদি কোন ভুল বা ত্রুটি লক্ষ্য করেন তাহলে ৩০ ধারায় আপত্তি কেস দাখিল করতে হবে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, জমি জরিপের সময় কিছু অসাধু ব্যক্তি আবির্ভূত হয়, দালাল নামে চিহ্নিত এই ব্যক্তিগণ আপনার ভূমির জরিপ কর্মকান্ড সহজভাবে করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপনাকে প্রতারিত করতে পারে। এক্ষেত্রে ঐসব অনাকাঙ্খিত ব্যক্তিদের এড়িয়ে নিজে অথবা আপনার বিশ্বস্ত প্রতিনিধিকে দিয়ে জরিপের কর্মকান্ড সমাধান করাই ভাল।
৩০ ধারা আপত্তি কেস দাখিলের পর কেস শুনানীর সময় আপনার আপত্তির স্বপক্ষে দলিল দস্তাবেজ এবং সাক্ষীদের উপস্থিত করতে হবে। এই আপত্তি কেসের রায় যার বিপক্ষে যাবে তিনি প্রয়োজন মনে করলে ৩০ দিনের মধ্যে আইন অনুযায়ী দায়ের করতে পারেন। এক্ষেত্রেও আপীল দায়েরকারীকে তার দাবির স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সাক্ষী কোর্টে হাজির করতে হবে।
ভূমি মালিকদের মুদ্রিত রেকর্ড চূড়ান্ত (Final) প্রকাশনার সময় পুনরায় পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া হয়। সরকারী নির্ধারিত মূল্যে ভূমি মালিকগণ ইচ্ছা করলে মুদ্রিত খতিয়ানের কপি ও নক্সা ক্রয় করতে পারেন। মুদ্রিত রেকর্ড পর্যবেক্ষণের সময় যদি আপনি কোনরূপ গাণিতিক, করণিক, মুদ্রণজনিত ভুল অথবা কোনরূপ জালিয়তি লক্ষ্য করেন তাহলে সেটেলমেন্ট অফিসে ৫৩৩/৫৩৪ ধারায় তা সংশোধনের জন্য দরখাস্ত পেশ করবেন। আপনার দরখাস্ত পাওয়ার পর সেটেলমেন্ট অফিসার তদন্ত করবেন এবং কোনবূপ ভুলের প্রমাণ পেলে তিনি গেজেট বিজ্ঞপ্তির জারীর পূর্বে বিধি মোতাবেক সংশোধন করবেন। এছাড়া রেকর্ড সংক্রান্ত কোনরূপ সমস্যা দেখা দিলে বিষয়টি সাথে সাথে সেটেলমেন্ট অফিসারের দৃষ্টিগোচরে আনবেন।
বদর সম্পর্কিত ভূমি বা জমির জরিপ কর্মকান্ডে কারিগরী (Technical) কার্যক্রমে বদর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন জরিপ কর্মীর বদর বিষয়ে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এছাড়া ভূমি মালিকদেরকেও তসদিক, আপত্তি ও আপীল পর্যায়ে বদরের আবেদনের নিয়ম কানুন জানা প্রয়োজন।
বদর কি -
বদর হচ্ছে বর্তমান ভূমির সাথে মিল রেখে পুনরায় মাপ জোখের মাধ্যমে জমি (সাবেক দাগ) একাধিক দাগে বিভাজন অথবা একাধিক দাগের জমি এক দাগে একত্রিত করার ফলে জমি জরিপ রেকর্ডে যে পরিবর্তন সাধিত হয় সেই পরিবর্তন কর্মকান্ডকে বদর বলে।
কখন বদরের প্রয়োজন হয় -
জরিপ রেকর্ডে সকল স্তরে বদর কর্মকান্ডটি কার্যকর নয়। বদর কার্যক্রমটি পরিচালিত হতে হলে কয়েকটি শর্ত থাকা আবশ্যক। শর্তগুলো হচ্ছে -
১। বর্তমান ও সাবেক দাগের পরিমাণ সমান হতে হবে।
২। বর্তমান ও সাবেক দাগ সংখ্যা যথাক্রমে একটি ও দু’টি হতে হবে।
৩। বর্তমান ও সাবেক দাগ পাশাপাশি এবং নির্দিষ্ট বাউন্ডারীর অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
প্লট বদর (সংক্ষেপে পিবি) রেজিস্ট্রারে বদর দ্বারা পরিবর্তন লিপিবদ্ধ করা হয়। ব্লু প্রিন্ট নকশা সংশোধনের জন্য প্লট বদরের মাধ্যমে খতিয়ান এবং নকশা দুটোয় সংশোধন হয়। তসদিক আপত্তি ও আপীল স্তরেও বদর হতে পারে। এই সমস্ত স্তরের বদরের ক্ষেত্রে খতিয়ান সংশোধনের প্রয়োজন অনেক সময় হয় না। অর্থাৎ বেশির ভাগ সময়েই নকশা সংশোধনের জন্য বদরের আবেদন করা হয়ে থাকে বদর দ্বারা নকশা সংশোধনের আদেশ দেয়া হয়। খানাপুরী কাম বুঝারত স্তরে নকশায় দাগ অংকন করা এবং বদর করা মূলতঃ একই কথা সে জন্য প্লট বদর সম্পাদনের বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
বদরের আবশ্যকতা
১। জমির ভাগ বাটোয়ারা বা ভাগ বাটোয়ারার প্রয়োজন হলে অথবা কোন কারণে জমির শ্রেণী পরিবর্তন হলে বদর করা আবশ্যক।
২। জরিপের বিভিন্ন স্তরের ফলে সরেজমিনের সাথে নকশা ও রেকর্ডের সাথে গড়মিল থাকলে বদর করা আবশ্যক।
৩। বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময়ে সরেজমিনে ভূমির বিভিন্ন প্রকার পরিবর্তন, আংশিক হস্তান্তর ইত্যাদির কারণে বদর করা প্রয়োজন।
৪। পূর্ববতী জরিপের পর সরেজমিনের যে পরিবর্তন সাধিত হয় তা নতুন জরিপের মাধ্যমে নকশা এবং রেকর্ড সংশোধনক্রমে যে নতুন রূপদান করা হয় সে রূপদানের কর্মকান্ডটি বদরের মাধ্যমে করা হয়।
ভূমি জরিপের কোন স্তরে বদর করা হয়:
ভূমি জরিপের কোন স্তরে বদর করা সেগুলো হচ্ছে
১। পি-৭০ সিটে বুঝারত স্তরে
২। ব্লু-প্রিন্ট শীটে খানাপুরী কাম বুঝারত স্তরে
৩। তসদিক স্তরে
৪। আপত্তি ও আপীল স্তরে সাধারণত বদর করা হয়।
বুঝারত বা খানাপুরী স্তরের বদরকে প্লট বদর বা সংক্ষেপে পিবি বলা হয়। ব্লু প্রিন্ট নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে খানাপুরী কাম বুঝারত স্তরে বদর মহাবদর বা আংশিক কিস্তোয়ারের মাধ্যমে সংশোধন করা হয়। এই স্তরটি নকশা ও খতিয়ান সংশোধনের প্রাথমিক স্তর এবং জনস্বার্থে কর্মকান্ড বিধায় ভূমি মালিকদের কোন প্রকার বদর ফি বা আবেদন দাখিল করতে হয় না।
- তসদিক স্তরে বদরকে এটেস্টেশন প্লট বদর (Attention Plot Badar) বা সংক্ষেপে এ. পি. বি. বলা হয়। এই স্তরের বদরের জন্য ভূমি মালিকদের বদর ফি এবং আবেদন জমা দিতে হবে।
- আপত্তি স্তরের বদরকে অবজেকশন প্লট বদর (Objection Plot Badar) বদর বা সংক্ষেপে ও. পি. বি. বলা হয়।
- আপীল স্তরে বদরকে আপীল প্লট বদর (Appel Plot Badar) বলা হয়।
জমি রেকর্ডের পদ্ধতি কিভাবে নেওয়া হয়েছে -
সরকারী অফিসে দেশের, গ্রামের নির্দিষ্ট এলাকার মোট জমির পরিমাণ ও ম্যাপ (মানচিত্র) পাওয়া যাবে। দেশে মোট জমির পরিমাণ মোটামুটি ভাবে নির্দিষ্ট বলা যায়। সার্চিং করলে জমির মালিাকানা অতীতে কার ছিল তা জানা যায় অর্থাৎ জমির হাতবদল হওয়ার চিত্রটি জানা যায়। ভূমি ও জমি সংস্কার আইনে রেকর্ড অভ রাইটসের তৈরীর পদ্ধতির কথা বলা আছে।
এই পদ্ধতি হলঃ (১) ট্রাভার্স সার্ভে (২) ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে (৩) খানাপুরী (৪) বুঝারত (৫) তসদিক (৬) খসড়া আয় ও আর পদ্ধতি (৭) অভিযোগ সংক্রান্ত নিষ্পত্তি (৮) ফাইনাল রেকর্ড প্রভৃতি ও তার প্রকাশনা।
সাধারণ লোকের জন্য ট্রাভার্স সার্ভে ও ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে প্রয়োজন না হলেও সরকারী ক্ষেত্রে এই দু রকম সার্ভেরই প্রয়োজন হয়।
এছাড়া যে কোন ভাবেই যে কোন ব্যক্তি জমির মালিক হোন না কেন এবং সেই জমিতে যদি সেই ব্যক্তির দখল থাকে তবে সবচেয়ে ভাল হবে যদি নিজ মালিকানার জমিটি নিয়ম অনুযায়ী তা রেকর্ড করিয়ে নেওয়া।
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলায় ভূমি রেকর্ড অফিস রয়েছে। এই অফিসে খোঁজ খবর করলে জমির দাগ নম্বর (প্লট নম্বর) খতিয়ান, জমির পরিমাণ (শতক/একর হিসেবে) সব কিছুই গোচরীভূত হবে। এলাকার জমির নকশাও রয়েছে। একটি মৌচার একের বেশিও খতিয়ান পাওয়া যেতে পারে।
সরকারী রেকর্ড অভ রাইটসে জমির পরিমাণ যা দেখানো আছে তা খতিয়ানের হোক কিংবা দাগ নম্বরেই হোক-সেই জমির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য নির্বাচিত সময় অনুযায়ী জরিপ করানো প্রয়োজন যাতে জমি ক্রয় করার পর জমির পরিমাণ ও সীমা রেখা নিয়ে যাতে ভবিষ্যতে বিবাদ বিসংবাদ না হয়। জমির দাদ তিন কোণ বা চার কোণের হতে পারে।
এই রেকর্ড অভ রাইটসকে সরকারী দলিল হিসাবে গণ্য করতে হবে। রেকর্ড অভ রাইটস এর সার্টিফায়েড কপিকে পর্চা বলে। এই পর্চাকেই বাংলায় বলা যেতে পারে স্বত্ব লিপি।
মূল দলিল বিনষ্ট হলেও এর সার্টিফায়েড কপি যথা স্থানে দাখিলা করা যেতে পারে। এই সার্টিফায়েড কপি আদালতের কাছেও গ্রহণযোগ্য।
সুরক্ষা ও নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক জমির মালিককেই তার জমি রেকর্ড অভ রাইটস নথিভুক্ত করা আবশ্রক।
ভূমি স্বত্ব কিভাবে পাওয়া যায়?
জমি হাতবদলের অধিকারকে স্বত্ব বলা যেতে পারে। এই স্বত্ব তিনভাবে পাওয়া যায়।
(১) ক্রয় দলিল বা দানপত্র দ্বারা হস্তান্তর, ভূমি স্বত্ব ও জমি জরিপ বিষয়টি ভাল ভাবে অনুধাবন করতে পারলে জমি সংক্রান্ত বিরোধ অনেকাংশে হ্রাস পাবে। সাধারণ লোকেরও উপকার হবে।
জরিপের গুরুত্বপূর্ণ শব্দের সংজ্ঞাসমূহ:
জমি জরিপ ও খতিয়ার প্রস্তুতি ও সংশোধন জানতে হলে ট্রাভার্স সার্ভে, ক্যাডাস্ট্রারাল সার্ভে, খানাপুরি বুঝারত, তসদিক ইত্যাদি বিষয় ভালোভাবে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
ট্রাভার্স সার্ভে:
কোনও জেলার বা তদীয় অংশের খতিয়ান সংশোধন বা প্রস্তুতের জন্য ক্যাডাস্ট্র্যাল সার্ভে ট্রাভার্স সার্ভের ভিত্তিতে হবে। এই ট্রার্ভাস সার্ভে থিওডোলাইটি যন্ত্রের সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করে করতে হবে। বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক পদ্ধতি অনুসরণ করে থিওডোলাইট যন্ত্রের সাহায্যে একটি মৌজা ও গ্রামের (যদিও একটি মৌজায় একাধিক গ্রাম থাকতে পারে) বহিঃসীমায় বেশ কয়েকটি স্থির বিন্দু সঠিকভাবে নির্দেশ করে মৌজার বা গ্রামের সীমারেখাটি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় এই পদ্ধতিকেই সাধারণভাবে ট্রাভার্স সার্ভে বলে। জমির মানচিত্রটি সঠিক ও বাস্তবানুগ করতে ট্রাভার্স সার্ভের খুবই প্রয়োজনীয়তা আছে। প্রসঙ্গকমে সার্ভে কথাটি বোধগম্য হওয়া প্রয়োজন।
সার্ভে:
সার্ভের পরিষ্কার অর্থ হল জমির মাপজোক। একাধিক পদ্ধতিতে জমির মাপজোক করা হয়। মাপজোকের পর বিহিত পদ্ধতিতে খাতাপত্রে একটি স্থানের জমির পরিচয় লিপিবদ্ধ করা হয়। এটাই প্রাথমিক পর্যায়ের সার্ভে রেকর্ড।
ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে:
জরিপের কার্যাবলীসমূহ চলাকালীন পূর্বেকৃত ভূমি রাজস্ব জরিপের প্রতিটি গ্রামে যেরূপ অবলম্বিত হয়েছিল, সেরূপ প্রতিটি গ্রামের অথবা যে কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলে সরকার কতৃর্ক কৃত জরিপের সরকারী গেজেটে অধিসূচনতার মাধ্যমে নিদির্ষ্ট গ্রামের বৃহৎ স্কেলের মানচিত্র প্রস্তুত করতে হয়। এই মানচিত্রে রাজস্ব, নদী, রেললাইন এবং উক্ত অঞ্চলের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য তৎসহ বাস্তভিটা ও দাগসমূহ দেখাতে হবে। ক্যাডাস্টাল শব্দটি এসেছে ফরাসী শব্দ থেকে। শব্দটির বিশ্লেষণ কর বলা যায়, জমির দাগে গিয়ে সেই স্থানের জমির চরিত্র ও পরিমাণ নিরূপণ করা এবং সেই নির্দিষ্ট জমিতে কে কি ধরনের স্বত্ব, স্বার্থ ও অধিকার ভোগ করেন এবং কি ধরনের, ভোগ-দখলের ধরনটি কি রকম তার পূর্ণ বিবরণ যে সার্ভের মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হবে।
হয়ত বেশ কিছু গ্রামের মানচিত্র আগেই জরিপ করে তৈরী হয়ে থাকতে পারে, সেই ক্ষেত্রে পূর্বের সেই জরিপকৃত গ্রামের মাত্রা চিত্রের সীমানাযুক্ত আয়তন পরিকল্পিত ও জরিপের একক হিসেবে অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হলে প্রশাসনিক অধিকারীক সংশ্লিষ্ট রায়তদের বক্তব্য শুনে যথাবিহিত পদ্ধতি অনুসরণ করে যুক্তিসহকারে তাঁর রিপোর্ট রাজস্ব পর্ষদের নিকট দাখিল করবেন। ভূ-বাসন আধিকারিকের রিপোর্ট রাজস্ব পর্ষদ অনুমোদন করলে খতিয়ান সংশোধন ও মানচিত্র প্রস্তুতের জন্য একক হিসেবে সেই ক্ষেত্রে গৃহীত হবে। এর পরে রাজস্ব পর্ষদের নতুন আদেশের নকল গেজেট প্রকাশ করার জন্য (গেজেট নোটিফিকেশন ) সরকারের নিকট পাঠিয়ে দিতে হবে।
খানাপুরী:
এই স্তরে খতিয়ান সংশোধন বা প্রাথমিক খতিয়ানের প্রস্তুতের কাজ শুরু হবে। খসড়া নথিতে স্বত্বের বিবৃতি থাকবে এবং অনতঃপর এ গুলি খতিয়ান রূপে বর্ণিত হবে। জমিতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দলের ব্যক্তিগণের জন্য পৃথক খতিয়ান হবে। এই মসয় খসড়া খতিয়ানে উক্ত বিবরণসমূহ লিপিবদ্ধ হবে এবং পরবর্তী দুই স্তরে খসড়া এবং প্রত্যেক খতিয়ানে ২৩ নিয়মে উল্লিখিত বিবরণ অনুসারে প্রত্যেক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের স্বত্ব ও দায়িত্ব প্রদর্শিত হবে। এই স্তরে গ্রামের দাগের ধারাবাহিক ফিল্ড ইনডেক্স বা খসড়া প্রস্তুত করতে হবে। এই ফিল্ড ইনডেক্স অবশ্য খসড়া খতিয়ানের অংশ হবে না।
বুঝারৎ:
এই স্তরের প্রারম্ভে নতুন খতিয়ানের প্রতিটি দাগের আয়তনের বা বক্তব্য লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং তারপর এরূপ প্রাথমিক খতিয়ানের নকল প্রত্যেক রায়ত এবং যাদের নাম খতিয়ানে লিপিবদ্ধ হয়েছে, তাঁদের সকলকে অথবা তাঁদের প্রতিনিধিদের প্রদান করতে হবে। প্রাথমিক খতিয়ানের নকলকে ‘পরচা’ বলা হয়। ‘পরচা‘ বিতরণের পর জরিপের অফিসার প্রতিটি দাগে উপস্থিত হয়ে, যার বা যাদের নামে দাগটি লিপিবদ্ধ হয়েছে, গ্রামের মানচিত্র উল্লেখ করে তাকে বা তাদের অনুমোদিত প্রতিনিধিকে (যদি তিনি উপস্থিত থাকেন) বুঝিয়ে দিবেন।
এই সময় জরিপ অফিসার প্রয়োজন অনুসারে মানচিত্র, খতিয়ান ইত্যাদি সংশোধন করবেন এবং পরচা দাখিল হলে তাও সংশোধন করে দেবেন। এই স্তরের রায়তের বক্তব্য অনুযায়ী হার দ্বার প্রদেয় রাজস্ব ও উপকর লিখিতে হবে। বিধিগত অন্যান্য তসদিক স্তরে সম্পন্ন হবে।
‘বুঝারৎ’ শব্দটির অর্থ পরিষ্কারভাবে বুঝতে গেলে কে. বি. শব্দটির মানে জানতে হবে। কে. বি. হল খানাপুরী বুঝারৎ। খানাকে বলা হয় দাগ বা নির্দিষ্ট কোনও প্লট। পুরী শব্দটির অর্থ হল পুর করা। নির্দিষ্ট দাগ বা প্লট সম্পর্কে সবরকম স্বত্বের তথ্য সংগ্রহ করা।
‘তসদিক’ সহ উপরোক্ত স্তরগুলি সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে বাতিল বা সবসময় স্বত্বের তথ্য সংগ্রহ করা।
রাজস্ব আধিকারিক অর্থাৎ ভূ-বাসন আধিকারিক খতিয়ানের চূড়ান্ত প্রকাশনার পূর্ব মুহূর্ত পযর্ন্ত খতিয়ান সংশোধন বা প্রস্তুত করণের যে কোনও কার্যাবলী বাতিল করে নতুনভাবে সংশোধন বা প্রস্তুতের আদেশ দিতে পারেন।
ব্যাখ্যা – ১ :
যদি খন্ড ১ এর দ্বিতীয় অনুবিধিতে উল্লিখিত বর্গাদার বা জমির দখলদারী বা হস্তান্তরকারীর নাম বুঝারতের পরবর্তী স্তরে নথিবদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে জরিপ অফিসার কর্তৃক যার নাম খতিয়ারে নথিবদ্ধ হয়েছে, তাকে বা তার প্রতিনিধিকে খতিয়ানের একটি নকল দেবেন।
ব্যাখ্যা -২ :
বর্গাদারের ক্ষেত্রে রাজস্ব অফিসার, খতিয়ানের নকল প্রেরণ মুলতবী থাকাকালীন রাজ্য সরকারী যেরূপ বিহিত করবেন, সেরূপ ফরমের একটি প্রমাণপত্র প্রদান করবেন।
তসদিক:
গ্রামের নিকট সুবিধাজনক স্থানে তসদিকের কাজ শুরু করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বুঝারৎ পযর্ন্ত সকল স্তর বাতিল করে তসদিক স্তর হতে খতিয়ান প্রস্তুত করতে হবে, সেক্ষেত্রে তসদিকের পূর্বে তসদিক অফিসার প্রয়োজনানুযায়ী প্রতিটি দাগের বর্তমান অবস্থা তদবঃস্ত করে পূর্বের মানচিত্র ও খতিয়ার সংশোধন করবেন। তসদিকের সময় উপস্থিত থাকার আহ্বান জানাবেন। জোতের যে সকল পরিবর্তন পূর্বের খতিয়ান চূড়ান্ত ভাবে প্রকাশিত হবার পর নিম্নোক্ত কারণ বশত হয়েছে তা তসদিক অফিসারের দৃষ্টিগোচরে আনার জন্য সকল স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তসদিকের সময় উপস্খিতির জন্য নির্দিষ্টভাবে নোটিশে উল্লেখ রাখতে হবে।
(ক) উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ও প্রাপ্য, হস্তান্তর বা অন্য কোনও করণ।
(খ) জোত ত্রকত্রকরণ বা বিভাজন।
(গ) নতুন বন্দোবস্ত।
(ঘ) অন্য যে কোনও কারণসমূহ :
প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তির খতিয়ান তসদিক অফিসার পরীক্ষা করে প্রতিটি লিখিত বিষয় তাকে পাঠ করে জানাবেন এবং প্রয়োজনানুযায়ী খতিয়ান সংশোধন করে খতিয়ানের সকল লিপিবদ্ধের কাজ সমাপ্ত করবেন। জমির মালিকানা বা জমির কোন স্বত্বের মালিকানা নিয়ে বিরোধ তসদিক অফিসার সরাসরি পদ্ধতিতে বর্তমান জমির দখলানুযায়ী নিষ্পত্তি করবেন।
প্লট বা দাগ :
যে ক্ষেত্রে জমি বিভাজিত রাজস্ব আধিকারিক এতদুদ্দেশ্যে প্রয়োজনে পৃথক প্লট নং ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিটি প্লট বা দাগের নির্দিষ্ট নম্বর থাকে। প্লট গুলির নম্বর ম্যাপে লেখা থাকে নির্দিষ্ট কলমে।
কোনও কারণে কোনও একটি প্লটের নম্বর নির্দিষ্টভাবে লেখা না থাকলে বা বাদ পড়ে গেলে সেই বাদ পড়ার নম্বরটিকে বলা হয় ছুট দাগ।
পাট্টা :
ভূমিহীন দরিদ্র মানুষকে পাট্টা হিসেবে সরকারি ভেস্ট জমিতে কৃষিকার্য বসবাসের অধিকার দেওয়া হয়।
হেক্টর :
হেক্টর শব্দটির মূল অর্থ অনেকেরই জানা নেই। হেক্টর হল জমির একটি মাপ। যার পরিমাণ দশ হাজার বর্গমিটার। হেক্টর মানে সাধারণভাবে ২.৪৭ একর জমি। হেক্টর বুঝতে হলে মেট্রিক সিস্টেম ইউনিট বুঝতে হবে।
সেচপ্রাপ্ত এলাকায় ১ হেক্টর কৃষি জমিকে ১ স্ট্যান্ডার্ড হেক্টর বলা হয়। ১.৪০ হেক্টর কৃষি জমিকে ১ স্ট্যান্ডার্ড হেক্টর বলা হয় হয়ে থাকে।
বাটা দাগ :
কোনও প্লট বিভক্ত হওয়ার পর নতুন একটি প্লটের নম্বর দেওয়া হয়। বাটা কথাটির অর্থ হল বাটোয়ারা করা। বণ্টন করা, ভাগ করা ইত্যাদি। বাটা দাগের তালিকা ম্যাপের পাশে দেওয়া থাকে। পরচায়ও বাটা দাগ পাওযা যায়।
একর :
এক ‘একর’ বলা হয় ৪৮৪০ বর্গগজ এলাকার পরিমাণকে। আবার গান্টার্সচেন-এ ১০ বর্গ চেন পরিমিত জমিকেই এক একর বলে চিহ্নিত করা যায়। ৬৬ ফুট লম্বা হয়, গ্রান্টার্স চেন। গান্টার্স চেন অনুযায়ী ৪৩৫৬০ বর্গফুট এলাকাকেও এক একর বলা হয়ে থাকে।
সোজাসুজি এক একর হল = ৪৮৪০ বর্গগজ। মিটার অনুযায়ী ৪০৪৬.৬১ বর্গমিটার। আনুমানিক এক একর =৪০৪৭ বর্গমিটার।
খতিয়ানে জমির মাপ ধরা হয়-এক একর ১০০ শতক। এক শতক = ৪০.৪৭ (আনুমানিক বর্গমিটার)। জরিপ করলে হওয়া উচিৎ ৪৩৫.৬ বর্গফুট। আমিন জরিপের ক্ষেত্রে যে যন্ত্রটি ব্যবহার করেন তাকে বলা হয় একর কোণ। জমি জরিপের ক্ষেত্রে চেন ফেলে মাপার পূর্বেই একর কোণ নিয়ে নকশা অনুযায়ী একটি প্লটের পরিমাণ আন্দাজ করা আমিনদের কাছে অসম্ভব নয়।
সবগুলো পর্ব একসাথে পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন >> জমিজমা ও ভূমি বিষয়ক আইন