রচনা : প্রাণিজগৎ

↬ বিস্ময়কর প্রাণী জগৎ

ভূমিকা : আমাদের এই পৃথিবীতে অসংখ্য প্রাণী বাস করছে। এদের কেউ বাস করে পানিতে; আবার কেউ বাস করে ডাঙায়। এদের মধ্যে বেশ কিছু প্রাণীকে মানুষ পোষ মানিয়েছে; নিজের কাজে লাগিয়েছে। তবে এদের বেশির ভাগই থেকে গেছে বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ে-পর্বতে, ঘন অরণ্যে, মরু ও মেরু অঞ্চলে। এসব প্রাণীর মধ্যে অদ্ভুত ও বিস্ময়কর প্রাণীর সংখ্যাও কম নয়।

হাতি : ডাঙার প্রাণীদের মধ্যে হাতির মতো বড় দ্বিতীয় কোনো প্রাণী নেই। এরা গভীর অরণ্যে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। হাতির বিশাল দেহের সবচেয়ে অদ্ভুত অঙ্গটি হচ্ছে তার শুঁড়। শুঁড় দিয়ে গায়ে পানি ছিটিয়ে হাতি গোসল সারে। এই শুঁড়ের সাহায্যে সে বড় বড় গাছের গুঁড়িও টেনে নিয়ে যেতে পারে। হাতি বনপথে নিঃশব্দে চলে। হাতির খাওয়ায় লাগে আট-নয় মণ ঘাস-পাতা আর ছয় মণের মতো পানি। এটি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমায়। আমাদের দেশে রাঙামাটি আর বান্দরবান জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে হাতি আছে।

সিংহ : সিংহ বললেই মনে হয় আফ্রিকার কথা। এটি হিংস্র ও মাংসাশী প্রাণী৷ এর গলায় কেশর থাকে। সিংহকে বলা হয় পশুর রাজা।

গন্ডার : গন্ডার এক আজব প্রাণী। এর নাকের ওপর একটা বা দুটো শিং থাকে। গন্ডারকে ভীষণ ভয় পায় বনের আর সব প্রাণী। এর দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ কিন্তু ঘ্রাণশক্তি প্রখর। গন্ডার এর বিরাট বপু নিয়ে চমৎকার সাঁতার কাটতে পারে। এটি দাঁড়িয়ে, কাত হয়ে বা হাঁটু মুড়ে, উপুড় হয়ে ঘুমায়। গন্ডার ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ মাইল বেগে ছুটতে পারে।

জিরাফ : প্রাণিজগতে সবচেয়ে বেশি উচ্চতার প্রাণী হলো জিরাফ। এটি প্রায় ১৮ ফুট উঁচু হয়। এই বিশাল শরীর নিয়ে জিরাফ ঘণ্টায় ৩০ মাইলেরও বেশি বেগে ছুটতে পারে। এর গায়ের চামড়ায় অসংখ্য দাগ। এই দাগগুলো তাকে গাছগাছালির সঙ্গে মিশে থাকতে সাহায্য করে। এরা পা বাঁকাতে পারে না। এটি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমায়।

গরিলা : প্রাণিজগতের আরেক অদ্ভুত জন্তু গরিলা। এটি প্রচণ্ড শক্তিধর। আফ্রিকার গহিন অরণ্যে এদের বাস। বুনো জন্তুদের মধ্যে গরিলার পারিবারিক জীবন খুবই সুন্দর। মা-বাবা ও সন্তানদের নিয়ে গরিলার সংসার। গরিলার প্রিয় খাবার হলো গাছের নরম পাতা আর ফলমূল। এরা খুব শান্ত স্বভাবের। নিজে আঘাত না পেলে এরা অন্যকে আঘাত করে না।

উটপাখি বা অস্ট্রিচ : পাখির জগতে উটপাখি দৈত্য পাখি নামেই পরিচিত। এরা খুব জোরে ছুটতে পারলেও উড়তে পারে না। ঘণ্টায় এরা ৬০-৭০ মাইল বেগে দৌড়াতে পারে। এরা মরুভূমিতে বাস করে। বালি খুঁড়ে বাসা তৈরি করে। উটপাখি সবকিছু খায়। এদের রাক্ষুসে খিদে। খিদে পেলে সামনে যা পায়, তা-ই খায়।

ঘড়িয়াল : ঘড়িয়াল আরেক অদ্ভুত প্রাণী। দেখতে অনেকটা কুমিরের মতো হলেও এর মাথা কুমিরের মাথা থেকে চওড়া ও লম্বাটে। ঘড়িয়াল মিঠাপানির প্রাণী। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, চীন ও ভারতে ঘড়িয়াল আছে। বাংলাদেশের যমুনা ও পদ্মায় অল্পসংখ্যক ঘড়িয়াল দেখা যায়। এরা খুব নিরীহ প্রাণী।

প্লাটিপাস : প্রাণিজগতের আরেক বিস্ময় প্লাটিপাস বা হংসচঞ্চু। এদের ঠোঁট ও পায়ের পাতা দেখতে হাঁসের মতো। এরা পাখির মতো ডিম পাড়ে আর ছানারা মায়ের দুধ খায়। প্লাটিপাস দিনে গর্তে থাকে আর রাতে পানিতে ভেসে বেড়ায়। অস্ট্রেলিয়া ও এর কাছাকাছি দ্বীপ তাসমানিয়ায় হংসচঞ্চুর দেখা মেলে।

ঘড়িয়াল বা মেছো কুমির : কুমিরের মতো দেখতে একটি অদ্ভুত রকমের প্রাণী হচ্ছে ঘড়িয়াল বা মেছো কুমির। এরা চ্যাপ্টা লেজের সাহায্যে পানিতে সাঁতরে বেড়ায়। বাংলাদেশে যমুনা ও পদ্মায় অল্পসংখ্যক ঘড়িয়াল আছে।

রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার : অন্যতম হিংস্র প্রাণী এটি। বিশ্বের বেশির ভাগ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বাস সুন্দরবনে। এ বাঘ অত্যন্ত সাহসী। হরিণের মাংস রয়্যাল বেলাল টাইগারের প্রিয় খাবার। এদের শরীরে ডোরাকাটা দাগ রয়েছে।

প্রাণীদের প্রয়োজনীয়তা : আমাদের প্রাণিজগতের ওপর পরিবেশের ভারসাম্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। অথচ প্রাণিজগতের প্রাণীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই প্রাণীদের অস্তিত্ব সংরক্ষণ করা জরুরি।

উপসংহার : প্রাণিজগতে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে এমন জীবজন্তুর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও কিছু জীবজন্তু প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিছু কিছু প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব প্রাণীর বাঁচিয়ে রাখা আমাদের একান্ত কর্তব্য।


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post