জানু তুমি কই? অর্থ হাঁটু তুমি কোথায়?
জানু আমার কাঁপে কেন? অর্থ— হাঁটু আমার কাঁপে কেন?
প্রথমেই বলে রাখি জনি ও যোনি উভয় শব্দের উচ্চারণ জোনি এবং উভয় শব্দ প্রায়-সমার্থক।জনি নামের অর্থ কী? নামের কোনো অর্থ হয় না, নামধারীই নামের একমাত্র অর্থ। তবে নামটি যে শব্দ দিয়ে রচিত, শব্দ হিসেবে তার অর্থ চাওয়া যেতে পারে (যদি আদৌ কোনো অর্থ থেকে থাকে)।অনেকে মনে করেন, জনি ইংরেজি শব্দ—হতে পারে। এক ভাষার শব্দ অবিকল অন্য ভাষায় দেখা যায়। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জনি নামের অনেক পুরুষ দেখা যায়। বাংলাতে জনি বানানের একটি অর্থবহুল শব্দ আছে।
জনি যোনি: তৎসম জনি (√জন্+ই) অর্থ (বিশেষ্যে) জন্ম, উৎপত্তি; মাতা, জননী; নারী, জায়া, পুত্রবধূ। শব্দটি নারীবাচক, তবু বাংলাদেশে জনি নামটি পুরুষে বেশি ভর করানো হয়। যোনি (√যু+নি) অর্থ— (বিশেষ্যে) উৎপত্তিস্থান, স্ত্রীজননেন্দ্রিয়, স্ত্রী-চিহ্ন, জাতি, জন্ম। সুতরাং, অর্থ বিবেচনায় যোনি ও জনি প্রায়-সমার্থক। জনু (√জন্+উ) অর্থ উৎপত্তি, জন্ম। এর উচ্চারণ জোনু। জনি ও যোনি শব্দের উচ্চারণ জোনি। অর্থাৎ কারো নাম জনি রাখা হলে তাকে ডাকতে হবে জোনি; যোনি রাখা হলে যা ডাকতে হতো।
জানু: অনেকে বঁধু বা বন্ধুবান্ধবকে জানু সম্বোধন করে থাকেন। সংস্কৃত জানু (জন্+উ) অর্থ (বিশেষ্যে) প্রাণিদেহের ঊরু ও পায়ের সন্ধিস্থল, হাটু, knee। যদি কেউ বলেন, “তুমি আমার জানু”— এর অর্থ হবে “তুমি আমার হাঁটু”। “জানু তুমি কই?” বাক্যের অর্থ হবে— “হাঁটু তুমি কোথায়?” “তুমি আমার জানু।” অর্থ হবে You are my knee. জানু আমার কাঁপে কেন? বাক্যের অর্থ হবে— হাঁটু আমার কাঁপে কেন?
তবে, এটি অস্বীকার করা যাবে না যে—মানুষের মুখে শব্দের অর্থ পরিবর্তন হয়ে নতুন অর্থ ধারণ করে। জানু এখন হাঁটু ছেড়ে প্রেমিক-প্রেমিকায় ঢুকে গেছে। মনে রাখতে হবে, মানুষই শব্দ সৃষ্টি করে এবং শব্দার্থ নির্ধারণ করে। এভাবে শব্দের অর্থ পরিবর্তন হয়, নতুন ধারণার জন্ম নেয়, সৃষ্টি হয় নতুন অর্থ। এটাই জীবন্ত ভাষার লক্ষণ। এই পরিবর্তন ব্যাকরণসম্মত হোক বা না হোক মেনে নিতে হবে। নইলে ব্যাকরণই অকারণ হয়ে যাবে। কারণ, ভাষাভাষীর জন্যই ব্যাকরণ। আশা করি জানু একদিন হাঁটুর সঙ্গে প্রেমিক-প্রেমিকা সম্বোধনার্থে অভিধানে ঠাঁই পাবে।
হাঁটুর জোর না-থাকলে কি প্রেম করা যায়? অভিধান রচয়িতাদের এটি বুঝতে হবে।
রোগী কিন্তু রুগি; কেন?
রুগি বানানে ই-কার। কারণ, রুগি শব্দটি সংস্কৃত রোগী ( রোগ+ইন্) থেকে উদ্ভূত রোগী শব্দের কথ্য রূপ। রুগি অতৎসম তাই বানানে ই-কার। রোগী শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রোগিণী।
রোগিণী বানানে মূর্ধন্য-ণ হলো কেন? কারণ একই পদের মধ্যে প্রথমে ঋ ঋৃ ষ্ র্-্ এর পরে যদি স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ, য-ব-হ এবং অুনস্বারের ব্যবধান থাকে তাহলে নী প্রত্যয় ণী হয়ে যায়।
রোগী ও রুগি অর্থ (বিশেষণে) ব্যাধিগ্রস্ত, রুগ্ণ; (বিশেষ্যে) অসুস্থ ব্যক্তি।
একাকীত্ব নয়, একাকিত্ব
একাকী= একা+আকিন। আকিন্, ইন্ প্রভৃতি প্রত্যয়ান্ত শব্দের শেষে -ত, -তা, -ত্ব (আরও কিছু) প্রত্যয়াদি যুক্ত হলে ঈ-কার, ই-কার হয়ে যায়। অতএব শুদ্ধ হচ্ছে: একাকিত্ব। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, কেবল একাকিত্ব বানানই প্রমিত। একাকীত্ব বানানের কোনো শব্দ ওই অভিধানে নেই। একাকিত্ব= এক+আকিন্+ত্ব।