পহেলা বৈশাখ

প্রবন্ধ রচনা : বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

ভূমিকা : ক্রীড়া বা খেলাধূলা শিক্ষার অঙ্গ। শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, জয়-পরাজয়য়ে সহজভাবে গ্রহণ করা প্রভৃতি গুণ ক্রীড়ার মাধ্যমে অতি সহজে অর্জিত হয়। আর এ’গুণগুলো জীবনপথে চলার জন্য খুবই অপরিহার্য। 

বিদ্যালয়ে ক্রীড়া : বর্তমানকালে ছোট-বড় সব বিদ্যালয়েই ক্রীড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। সাপ্তাহিক শিক্ষণ তালিকার মধ্যে ক্রীড়ার একটি স্থান আছে। অর্থাৎ, সারা বছর ছাত্র-ছাত্রীর বিদ্যাচর্চার সাথে সাথে কোন না কোন ধরনের খেলাধুলার চর্চা করে থাকে। আর এ চর্চারই মূল্যায়ন হয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। অবশ্য, হা-ডু-ডু, ফুটবল, ক্রিকেট প্রভৃতি দলবদ্ধ খেলা বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত থাকে না। তাই, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে বলা চলে ক্রীড়ার ব্যক্তিগত উৎকর্ষের মূল্যায়ন। 

ক্রীড়ার সময় : বছরের যে সময়টায় পড়াশুনার চাপ কম, তখনেই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বার্ষিক পরীক্ষার পরে যখন উত্তরপত্র পরীক্ষণ ও ফলাফল নিরূপণের কাজ চলতে থাকে, সেই সময়টাই এদিক দিয়ে সর্বোৎকৃষ্ট। কিন্তু, বিভিন্ন অসুবিধার কারণে বহু বিদ্যালয়ই বছরের প্রথম ভাগে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে থাকে। এসব প্রতিযোগিতায় প্রকৃতপক্ষে আগের বছরের ক্রীড়া-ক্রিয়ার মূল্যায়ন হয়ে থাকে। 

বছাই : বার্ষিক প্রতিযোগিতার প্রধান দায়িত্ব থাকে বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষকের উপর। তাঁকে সাহায্য করেন ক্রীড়ামোদী অন্যান্য শিক্ষক। অবশ্য, অন্যান্য শিক্ষকেরও কমবেশি ভূমিকা থাকে এ’ব্যাপারে। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই শুরু হয় প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজ, প্রতিযোগিতায় কে কে অংশগ্রহণ করতে পারবে, তা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয় এ বাছাইয়ে। 

ক্রীড়ার দিন : অবশেষে আসে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সেই দিনটি। উৎসবমুখর হয়ে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। খেলার মাঠকে সাজানো হয় সুন্দর করে। একদিকে শামিয়ানা টাঙিয়ে তার নিচে সভাপতি, প্রধান অতিথি ও অন্য অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। সাজিয়ে রাখা হয় বিজয়ীদের দেওয়ার জন্য বিবিধ পুরস্কার সামগ্রী। মাঠের মধ্যস্থলে স্থাপিত হয় পতাকা দণ্ড ও বিজয় স্তম্ভ। 

প্রতিযোগিতাসমূহ : সাধারণত সকাল সাড়ে আটটা ন’টার দিকে প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়। প্রথমে হয় পতাকা উত্তোলন, প্রতিযোগিদের কুচকাওয়াজ ও সালাম প্রদান শপথ পাঠ প্রভৃতি। তারপর অনুষ্ঠিত হয় এক এক করে প্রতিযোগিতাসমূহ- উচ্চ লাফ, দীর্ঘ লাফ, বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের দৌড়, লৌহ গোলক (shot put) নিক্ষেপ, চাকতি (discuss) নিক্ষেপ, বর্শা (javelin) নিক্ষেপ প্রভৃতি। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ক্রীড়া যেমন অনুষ্ঠিত হয়, তেমনি অনুষ্ঠিত হয় মোরগের লড়াই, লজেন্স দৌড়, চোখ বাঁধা দৌঁড়, তিন পায়ে দৌড়, বস্তাবন্দী দৌড়, কলসি ভাঙা প্রভৃতি সাময়িক উপভোগ্য ক্রীড়াসমূহ। শিক্ষকদের দৌড়, শিক্ষক-অভিভাবক দড়ি টানাটানিও উপভোগ্য হয়ে থাকে। দর্শকদের একটু ভিন্ন রকমের আনন্দ দেওয়ার জন্য ‘মনের মত সাজ’ প্রতিযোগিতায় ছাত্র-ছাত্রীরা বিচিত্র রকমের সাজ-পোশাক পরে মাঠে নেমে দর্শকদের পুলক হাস্যে মুখরিত করে তোলে। 

পুরস্কার বিতরণ : প্রতিযোগিতা শেষ হলে শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী। প্রধান অতিথিই সাধারণত পুরস্কার বিতরণ করে থাকেন। বিজয়ী প্রতিযোগীরা প্রধান অতিথির শামিয়ানার নিচে এসে সুশৃঙ্খলভাবে বসে। যারা বিজয়ী হতে পারেনি, তারাও আসে এবং অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরাও। ক্রীড়া-শিক্ষক এক এক করে বিজয়ীদের নাম বলে যান, আর প্রধান অতিথি নির্ধারিত পুরস্কার তাদের হাতে তুলে দেন। করতালি ও হর্ষধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে সমগ্র এলাকা। সেই মুখরতার মধ্যে যেসব প্রতিযোগী পুরস্কার পায়নি তারাও উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। 

উপসংহার : সবশেষে প্রধান অতিথি খেলাধুলার উপযোগিতা ও উপকারিতা সম্বন্ধে একটি নীতিদীর্ঘ ভাষণ দেন। এভাবে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শেষ হয়।


1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post