অনুচ্ছেদ : শিশুশ্রম

শিশুশ্রম


শিশুশ্রম একটি সামাজিক ব্যাধি। আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, সম্পদের অসম বণ্টন, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে ফুলের মতো কোমল নিষ্পাপ শিশুদের কচি কচি হাতগুলো শ্রমের হাতিয়ার হয়ে উঠতে বাধ্য হয়। ফলে তাদের সুপ্ত প্রতিভা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। ছোটখাটো কল-কারখানা থেকে শুরু করে পাথর ভাঙা, ফেরি করা, ভিক্ষাবৃত্তি করা, বাসা-বাড়িতে কাজ করা, গার্মেন্টস, গ্যারেজ, দোকনপাটে, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিশুদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য যেসব কাজ ঝুঁকিপূর্ণ সেসব কাজে অবলীলায় শিশুদের নিয়োগ করা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত মানুষকে যেকোনো ধরনের শারীরিক ও মানসিক শ্রমে নিয়োগকে শিশুশ্রম বলে উল্লেখ করে তা নিষিদ্ধ করেছে এবং বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদে স্বাক্ষক করে জাতীয় শিশুনীতি ঘোষণা করলেও এদেশে শিশুশ্রম ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কারণ শিশুদের অপরিণত দেহ ও কচি মন শ্রমদানে নিষ্পেষিত হতে থাকে এবং দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্লান্তির ভারে এরা অকালে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। তাই এই অমানবিক কাজ বন্ধের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক প্রণীত শিশু ও নারী নির্যাতন আইন প্রয়োগে আরও কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। শিশুশ্রম রোধকল্পে আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির প্রতি সবাইকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে এবং শিশুশ্রম ও নির্যাতন রোধে নতুন আইন প্রণয়ন ও সেই আইনের সুবিধা যাতে শ্রমপীড়িত শিশুরা পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আজকের শিশুই আগামী দিনের দেশ ও জাতির কর্ণধার। তাদের ওপরে নির্ভর করছে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি। তাই আমাদের সকলের উচিত হবে শিশুদের জন্য কল্যাণকর পরিবেশ নিশ্চিত করা। 


একই অনুচ্ছেদ আরেকবার সংগ্রহ করে দেয়া হলো


শিশুই জাতির ভবিষ্যৎ। শিশুদের মধ্যেই সুপ্ত থাকে নানাবিধ অমিত শক্তি ও সম্ভাবনা। আজকের শিশুই আগামী দিনের কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশ ও জাতিকে গড়ে তুলবে। অথচ সেই শিশুই শিক্ষাা অর্জন করার পরিবর্তে অমানুষিক শ্রমে নিয়োজিত। পেটের তাগিদে তাকে সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করতে হয়। সাধারণত চার-পাঁচ বছর বয়স থেকে কিশোর বয়স পর্যন্ত সময়ের শ্রমিকদের শিশুশ্রমিক বলে। শিশুরা নানা ধরনের শ্রমের সাথে জড়িত। ইট ভাঙা, ওয়ার্কশপ ও গ্যারেজে কাজ করা, অন্যের বাড়িতে কাজ করা, হোটেল ও চা স্টলে কাজ করা, শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা, কুলিগিরি, অফিস-আদালতের খাবার পৌঁছানো, বাস-টেম্পোর হেলপারি থেকে শুরু করে এমন কোন কাজ নেই যা শিশুদের দিয়ে করানো হয় না। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই শিশু অধিকার একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচিত। জাতিসংঘ সনদে শিশু-অধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা ঘোষণাা করা হয়েছে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও এই সনদে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। তাই এদেশের শিশুদের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। শিশু অধিকারের আওতায় আঠারো বছরের নিচের বয়সী সকলকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ‘শিশু অধিকার আইনে’ স্পষ্ট উল্লেখ আছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, অর্থনৈতিকভাবে শোষণ শিশুদের অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। শিশুর সামাজিক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করবে যেসব, সেসব বিপদ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হবে (ধারা ৩২)। শিশুদের সকল প্রকার হয়রানি, নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে হবে (ধারা ৩৪)। শিশুর শিক্ষা লাভের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে হবে (ধারাা ২৮)। শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখতে ১৯৫৯ সালে জাতিসংঘ ‘শিশু অধিকার সনদ’ ঘোষণা করে। শিশু অধিকার বাস্তবায়ন, পরিচয় সংরক্ষণ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সামাজিক নিরাপত্তা, শিশু স্বাস্থ্যের প্রাধান্য, বৈষম্যহীনতা, অবৈধ স্থানান্তর, অক্ষম ও উদ্বাস্তু শিশু, সামাজিক পর্যালোচনা, মাতাপিতার সাথে অবস্থানের অধিকার, মাতাপিতার অধিকার ও দায়িত্ব এগুলো হলো ‘শিশু অধিকার সনদ-৯০’ সনদের বিষয়বস্তুগুলো। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এ সনদের বিষয়বস্তুগুলো অনুসরণ করলেও বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো তা অনুসরণ করতে পারছে না। অপরিসীম দারিদ্র্য আর সামাজিক ও রাজনৈতিক নৈরাজ্যের কারণে এদেশের শিশুদের যেমন অমানুষিক পরিশ্রম করতে হচ্ছে, তেমনি বঞ্চিত হতে হচ্ছে ন্যায্য শ্রমমূল্য থেকেও। শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত এ শিশুদেরকে যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে না পারলে দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।

3 Comments

  1. আর্থ-সামাজিক বৈষম্য আর নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় কীভাবে শিশুশ্রমের কারন হয় ? মোটেও ভালো হয়নি। গোড়ায় গলদ যাকে বলে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আগে শব্দগুলোর (আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, নৈতিক মূল্যবোধ) অর্থ বুঝতে হবে। আর্থ-সামাজিক বৈষম্য মানে, আর্থিক ভাবে সমাজের এক শ্রেণির মানুষ খুব দরিদ্র এবং এক শ্রেণি যদি খুব ধনী হয় তবে দরিদ্র শেণির স্বাবলম্ভী হওয়ার জন্য তারা কি না করতে পারে, তারা তাদের শিশু সন্তানদের শ্রম করতে পাঠায়, আবার যারা খুব ধনী তারা শিশু সন্তানদের তাদের গৃহ কর্মে ব্যবহার করে।

      নৈতিক অবক্ষয় মানে, শিশুদের শ্রমে দিতে যাদের বিবেকে বাধা না দেয়। মানুষের বিবেক যদি ক্ষয় হয়ে শূন্য হয়ে যায় তখন মানুষের মধ্যে দয়া মায়া কাজ করে না, শিশুদের দিয়ে শ্রম করানোর ক্ষেত্রে তাদের দয়া বা মায়া কাজ করে না।

      সুতরাং আর্থ-সামাজিক বৈষম্য আর নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় শিশুশ্রমের অনেকগুলো কারণের মধ্যে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

      Delete
  2. very good. This is very relaxing . | 'm very exited to reading. Next Comment, please

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post