মাদককে ‘না’ বলুন
“মাদককে ‘না’ বলুন” -কেবল এই স্লোগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার সময় এখন আর নেই। এখন সমাজের সর্বস্তরে ‘মাদককে না বলুন’ ছড়িয়ে দিয়ে তীব্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার সময়। কেননা মাদকদ্রব্য সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। নেশা সর্বনাশা জেনেও মানুষ এটির প্রতি প্রবলভাবে আসক্ত হচ্ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত মাদকের বিস্তার, মাদকব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের দোর্দণ্ড প্রতাপ যেভাবে প্রকটিত হচ্ছে তাতে এখনই তাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী তীব্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া উপায়ান্তর নেই। কেবল সরকারের পক্ষে এর মূলোৎপাটন করা খুব কঠিন। কাজেই সরকারকে সক্রিয় সহযোগিতা করার জন্য সমাজকে সাহসী ভূমিকায় অগ্রণী হতে হবে। মাদকবিহীন সুষ্ঠু ও কল্যাণকর সমাজ গড়ে তোলার স্বার্থে এখনই “মাদককে ‘না’ বলুন” স্লোগান কার্যকর করার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে। কারণ ড্রাগ বা মাদকাসক্তি আধুনিক সভ্যতাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ভয়ংকর অভিশাপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমাদের দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৫০ লাখেরও বেশি। এদের মধ্যে মহিলার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। মাদকের নেশা বা আসক্তি এতই তীব্র যে, একবার যাকে স্পর্শ করে তার পক্ষে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা দুরূহ হয়ে ওঠে। মাদকাসক্তির পরিণতি খুবই ভয়াবহ। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের আচরণ হয় খাপছাড়া, চেহারা রুক্ষ হয়ে যায়, খিদে পায় না, ওজন দ্রুত হ্রাস পায়, চোখের তারা ছোট হয়ে যায়। তারপর ধীরে ধীরে লিভার, কিডনি অকেজো হয়ে যায়। মস্তিষ্ক, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জীবন্মৃত অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মাদকাসক্তরা পরিবারের সুখ-শান্তি নষ্ট করে, নেশার খরচ জোগাতে দিয়ে ভয়ংকর অপরাধী হয়ে পড়ে। এভাবে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পেয়ে একটা অস্থির ও বিপর্যস্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অসংখ্য মানুষ মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ ভয়াবহভাবে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় উন্নত দেশের ‘মাদক প্রতিরোধ আন্দোলন’ -এর মতো আমাদের দেশেও “মাদককে ‘না’ বলুন” স্লোগানকে সামাজিক আন্দোলন রূপান্তর করা এখন জরুরি।