সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা না করে ধর্ম, বর্ণ, জাতি-গোত্র ইত্যাদি দিয়ে পার্থক্য করে দেখাই সাম্প্রদায়িকতা। অথচ পৃথিবীতে মানুষের আগমনের সূচনাপর্বে কোনো ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্রভেদ ছিল না। পরবর্তী সময়ে সমাজ, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সূত্রে আত্মস্বার্থের কারণে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদের সূচনা হলো। মানুষ যখন প্রেম, মৈত্রী, শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্মীয় বাণী ও ভাবধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হিংসা-বিদ্বেষ ও আক্রোশের বশবর্তী হলো, তখন থেকেই সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প মানুষকে কলুষিত করল। জাতিবিদ্বেষ, ধর্মবিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষ, গোত্রবিদ্বেষ মানুষকে কখনো ভালো কিছু দেয়নি, কোনো সুফল বয়ে আনেনি। বরং মানুষের সাধনালব্ধ সমস্ত অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, সমস্ত নিরাপত্তা, শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে। সাম্প্রদায়িকতার নগ্ন প্রকাশ মানুষকে পশুতে পরিণত করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অগণিত মানুষ মারা যাচ্ছে, মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। অন্ধবিশ্বাস ও গোড়ামিকে পুঁজি করে একশ্রেণির মানুষ বিভেদ ও হিংসা ছড়িয়ে দাঙ্গা বাঁধিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। বাংলাদেশে বহু কাল ধরে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্মের মানুষ পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ বজায় রেখে সহাবস্থান করছে, পালন করছে ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠান। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এদেশের মানুষের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ যেমন অপরিহার্য, তেমনই অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও অপরিহার্য। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, আন্তরিক মেলামেলা, পরোপকারী মনোভাব, সুকুমার বৃত্তির লালন ও কল্যাণকর্ম সম্পাদনের মাধ্যমেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লালন ও বিকাশ সম্ভব। সর্বোপরি ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’- এটাই সবরকম সম্প্রীতির মূলমন্ত্র। এই মূলমন্ত্র অনুসরণ করাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
Thanks a lot
ReplyDelete