রোহিঙ্গা শরণার্থী
বর্তমান বিশ্বে শরণার্থী সমস্যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটের সম্মুখীন বাংলাদেশ। মিয়ানমারের সরকারে বাহিনীর অত্যাচারের শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে আজ যারা পরিচিত, তারা মূলত মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের অধিবাসী। একসময় আরাকান রাজ্য ‘রোহান’ বা ‘রোহাঙ’ নামে পরিচিত ছিল। এজন্যেই এরা রোহিঙ্গা নামে পরিচিত। ১৯৬২ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য বাড়তে থাকে। রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। যার ফলে রোহিঙ্গারা নিজ দেশেই হয়ে পড়ে উদ্বাস্তু। এরপর থেকে বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত রোহিঙ্গাদের নিজ নিজ গ্রামেই অবরুদ্ধ করে রাখে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী নাসাকা বাহিনী। রোহিঙ্গাদের সমগ্র জীবন হয়ে পড়ে মায়ানমার সামরিক বাহিনীর কাছে নিয়ন্ত্রিত। এছাড়া মাঝে মাঝেই চলতে থাকে নির্যাতন। ১৯৭৭ সালে মিয়ানমার সরকার ব্যাপক নির্যাতন চালালে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করে। এসময় প্রায় ২ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। এছাড়া পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে ধাপে ধাপে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। তবে সম্প্রতিককালের রোহিঙ্গা নির্যাতন ইতিহাসের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির মতো ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে ইতিমধ্যেই প্রায় নয় লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এখনো প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন দেশের সহযোগিতায় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেও অসংখ্য মানুষ জীবনযাপন চরম নিম্নসীমায় অবস্থান করছে। বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিকমহল মায়ানমারকে চাপ দিচ্ছে এসব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মতো সুযোগ দেয়ার জন্যে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সমাধানে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি। ‘রোহিঙ্গা সমস্যা’ একদিকে যেমন একটি জনগোষ্ঠীর জীবন শেষ করে দিচ্ছে অপরদিকে বাংলাদেশের জন্যেও তৈরি করছে সাময়িক ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। খুব দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে বাংলাদেশ দারুণ বিপদে পড়বে। মানবতার কথা চিন্তা করেই বিশ্ববাসীর এ সমস্যা নিরসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে আসা উচিত।
was waiting for this
ReplyDelete