মনেরে আজ কহ যে
ভাল-মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
মূলভাব : ভালো বা মন্দ যাই ঘটুক না কেন সত্যকে সহজ ও সাবলীলভাবে মেনে নিতে পারার সক্ষমতার মধ্যেই প্রতিফলিত হয় জীবনের সামগ্রিক সার্থকতা।
সম্প্রসারিত ভাব : জীবনের গভীরতম বাস্তবতা হলো সত্য। মানবজীবনপ্রবাহ পরিবর্তনশীল। এখানে নিরবচ্ছিন্ন সুখ বা নিরবচ্ছিন্ন দুঃখ কেউ পায় না। তবু মানুষ যখন সুখের সাগরে অবগাহন করে তখন যদি হঠাৎ দুঃখ এসে হানা দেয়, মানুষ অসহায় ও হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু জীবনের এ ছন্দপতন সহজভাবে মেনে নিতে শিখলে মানুষের জীবন আরও সহজ ও সুন্দর হয়ে উঠবে। জীবনসত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে অনায়াসে। খারাপ বা ভালো যাই হোক না কেন- সত্যকে নিঃশঙ্কচিত্তে গ্রহণ করার মধ্যেই সূচিত হয় মানবিকতার উন্মেষ।
অবশ্য এটা ঠিক যে, সত্য বাস্তব হলেও তা রূঢ় ও নিষ্ঠুর। ফলে সত্যের অধ্যবসায়ও কঠিন। তবুও সত্যই হওয়া উচিত জীবনের উদ্দিষ্ট লক্ষ্য। তবে সত্যকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন দৃঢ়তা। এভাবে দৃঢ় মনোবলের মধ্য দিয়ে, আদর্শ ও নীতি অক্ষুণ্ণ রেখে মানুষ যদি প্রকৃত সৎ হয়ে ওঠে তাহলেই প্রকৃত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারা যায়। কিন্তু সত্য প্রতিষ্ঠার, সত্য গন্তব্যে উপনীতি হবার সংগ্রাম অত্যন্ত কঠিন। পৃথিবীতে যারা চিরস্মরণীয় মনীষী, তারা নানাবিধ অত্যাচারের প্রতিকূলে সত্য বর্জন করেন নি। ইসলামের ধারক-বাহক মহানবী হযরত মুহম্মদ (স) এর জীবন এর উজ্জ্বলতম উদাহরণ। বিভিন্ন রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সত্ত্বেও সত্যব্রতে নিবেদিত থেকে তিনি বিশ্বমানবিক কল্যাণ সাধন করেছেন। এরকম গৌতম বুদ্ধ বা যিশুখ্রিস্টের জীবনাচরণেও আমরা ঐ সাধনাই লক্ষ করি। অতএব সত্যকেই যে কোনো সময়ে সহজভাবে গ্রহণ করার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা নিহিত।
মন্তব্য : প্রকৃত সত্যের কাছে পৌঁছনোর জন্য ফলাফলের দিকে না তাকিয়ে আমাদের প্রতিজ্ঞবদ্ধ হতে হবে। সুখের জন্য বা দুঃখ এড়ানোর জন্য সত্যকে পরিহার করা অনুচিত। জীবনের সকল অবস্থাকে মেনে নিয়ে সত্যকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করাই হবে জীবনের জন্য কল্যাণকর।