‘দুর্নীতি ও তার প্রতিকার’ বিষয়ে একটি প্রবিদেন রচনা করো।
৭ই জুন, ২০২১
বরাবর
চেয়ারম্যান,
দুর্নীতি দমন কমিশন, ঢাকা।
বষয় : বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও তার প্রতিকার বিষয়ে প্রতিবেদন।
সূত্র : দু.দ.ক/১০(৩)/২০১৮
জনাব,
নিবেদক,
ফয়জুস সালেহীন,
বরাবর
চেয়ারম্যান,
দুর্নীতি দমন কমিশন, ঢাকা।
বষয় : বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও তার প্রতিকার বিষয়ে প্রতিবেদন।
সূত্র : দু.দ.ক/১০(৩)/২০১৮
জনাব,
আপনার আদেশপ্রাপ্ত হয়ে দুর্নীতির কারণ ও তার প্রতিকার বিষয়ে নিচের প্রতিবেদনটি
উপস্থাপন করছি।
দুর্নীতি প্রকৃত গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অন্যতম অন্তরায়। বিভিন্ন ধরনের
দুর্নীতি আমাদের সমাজে বিদ্যমান। দুর্নীতির প্রধান কয়েকটি ধরন হলো- ঘুষ, অবৈধ
উপায়ে অর্থ উপার্জন, চাঁদাবাজি, সরকারি কোষাগার থেকে চুরি-ডাকাতি, অবৈধ
পৃষ্ঠপোষকতা, স্বজনপ্রীতি, অবৈধভাবে চাকরি প্রদান, অর্থ আত্মসাৎ, কাউকে সুবিধা
দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ বা অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ, অবৈধভাবে কোনো কিছু ভোগদখল
ইত্যাদি।
বিভিন্ন কারণে দুর্নীতি হয়। এর পেছনে যেমন ব্যক্তিগত কারণ কাজ করে তেমনি পদ্ধতিগত
কিছু কারণও এর প্রসারে ভূমিকা রাখে। মানুষের সীমাহীন লোভ-লালসা থেকে দুর্নীতির
উৎপত্তি। বাংলাদেশে দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করার অন্যতম কারণ হলো সরকার
দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। দুর্নীতির কোনো জবাবদিহিতা না
থাকায় দুর্নীতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলো দুর্নীতির
প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়-
১. সরকরি প্রশাসন যন্ত্রগুলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা।
২. সরকারি পদে দলীয় প্রভাব ও ঘুষের মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করে তাদেরকে স্বার্থ
হাসিলের জন্য ব্যবহার করা।
৩. দুর্নীতি দমন কমিশনসহ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অকার্যকারিতা বা নিষ্ক্রিয়তা।
৪. দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া, যা পরোক্ষভাবে দুর্নীতিকে
উৎসাহিত করে।
৫. ক্রমবর্ধমান ভোগবাদী প্রবণতা ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে ক্ষুদ্র
স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া।
৬. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব থাকার কারণে সর্বস্তরে দুর্নীতি জেঁকে বসেছে।
৭. কতিপয় দায়িত্বশীল ব্যক্তির সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দুর্নীতির পরিমাণ বৃদ্ধি
পেয়েছে।
তথ্যের অপর্যাপ্ততা, সরকারি স্বচ্ছতার অভাব, তথ্যপ্রকাশে স্বাধীনতার অভাব,
বাক্স্বাধীনতার অভাব, দুর্বল অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশ ও ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি
প্রকাশের অভাব, সরকারের জবাবদিহিতার অভাব, দুর্বল গণতন্ত্র চর্চা, তৎপর
সুশীলসমাজের অভাব, দুর্বল আইনের শাসন, দুর্বল আইনচর্চার ব্যবস্থা, বিচারবিভাগের
স্বাধীনতার অভাব, স্বল্প বেতন কাঠামো, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিক্রয় বা বেসরকারি
খাতে ছেড়ে দেওয়া, দীর্ঘদিন একই পদে একই জায়গায় কাজ করা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন,
প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, দুর্বল আর্থ-সামাজিক কাঠামো ইত্যাদি কারণে দুর্নীতি
আমাদের জাতীয় জীবনে বাসা বেঁধেছে।
দুর্নীতি সমাজে হঠাৎ করে বিস্তার লাভ করে না। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে
যারা ক্ষমতাবান তাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে দুর্নীতি বিস্তার লাভ করে।
কাজেই শুরুতেই যদি দুর্নীতি প্রতিরোধ করা না যায় তাহলে এট ব্যাপক আকার ধারণ করে
এবং ধীরে ধীরে পুরো শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্নীতি প্রতিরোধে কিছু উদ্যোগ
অতিসত্বর নেয়া উচিত। যেমন-
১ – পর্যাপ্ত লোকবলের ব্যবস্থা করতে হবে।
২ – দুর্নীতি দমন কমিশনকে সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত হতে হবে।
৩ – দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের শাস্তি প্রদান করতে হবে।
৪ – দুর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
৫ – দুর্নীতি দমনে জাতীয় কমিটি গঠন করতে হবে।
দুর্নীতি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে
বিভিন্ন দেশে। দুর্নীতির আন্তর্জাতিক প্রভাব উপলব্ধি করে ‘জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ’
১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেনে ঘুষ ও দুর্নীতিবিরোধী জাতিসংঘ ঘোষণা
করে। ২০০৩ সালের ৩১শে অক্টোবর ‘জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ’ দুর্নীতিবিরোধী সনদ
প্রণয়ন করে যা ২০০৩ সালের ৯ই ডিসেম্বর মেক্সিকোতে স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত করা
হয়। এ কারণে ৯ই ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস’ হিসেবে
ঘোষণা করা হয়। এ সনদে প্রায় ১৫০টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এ
সনদে অনুস্বাক্ষরের ফলে ২০০৭ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ এ গুরুত্বপূর্ণ
জাতিসংঘ সনদের অংশীদারি দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
দুর্নীতি যেকোনো দেশের জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। তাই দুর্নীতির কবল
থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সর্বত্র সততার আবহ,
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রয়োজন। দুর্নীতি রোধে নাগরিক সমাজ, বিশেষ করে তরুণদের
সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে
তরুণদের সবসময় সোচ্চার হতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে
তুলতে নিঃস্বার্থ ও দুঃসাহসী তারুণ্যের বলিষ্ঠ ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই।
নিবেদক,
ফয়জুস সালেহীন,
গবেষণা কর্মকর্তা, দুর্নীতি দমন কমিশন, ঢাকা।