আমরা যারা পড়াশোনা করি তাদের সবাই একটা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সামনে রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সবার ভিতর একটা ফিক্সড টার্গেট আছে যেটা এ্যাচিভ করতে চাই। কিন্তু একটা সময় পর দেখা যায় আমাদের ভেতর থেকে বেশিরভাগই তাদের লক্ষ্য থেকে সিটকে পড়ে। কিন্তু কেন এমন হয়— আজ কথা বলবো আমাদের এই যাত্রাপথে কোথায় কোন ভুলের জন্য আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে দেওয়ার পরেও কেন সাকসেস নামক বস্তুকে হাতের মুঠোয় আনতে ব্যর্থ হই। তো চলুন শুরু করা যাক—
।।এক।।
আমি ধরে নিচ্ছি আপনি একজন জব হোল্ডার। প্রথমে আপনাকে ধরে নিতে হবে আমি আসলে কোন সেক্টরে জব করতে চাই। অতঃপর আপনাকে সেই জব রিলেটেড কিছু খুঁটিনাটি বিষয়সহ হালকা একটা ধারনা মাথায় রাখতে হবে। আমাদের দেশে প্রায় সকল জব ইন্টারভিউ-তে একটা কমন প্রশ্ন করা হয় 'আপনি কেন এই পোস্টে কাজ করতে চান' কিংবা 'আপনাকে আমরা এই পোস্টে কেন চাকরী দিব'। তো আপনি যদি এই বিষয় সম্পর্কে ধারনা থাকে তো খুব সুন্দর করে তাদের সামনে তা প্রেজেন্টস করতে পারবেন।
।।দুই।।
আপনার নিজ সম্পর্কে জানতে হবে। প্রায়ই সব কমবেশি ক্যান্ডিডেট-কে এমন করে বলা হয় 'Introduce yourself' এইখানে গিয়ে অনেকে তার পুরো বংশ-বাপ-দাদার গোষ্ঠী উদ্ধার করে ফেলে। এটা কখনো করা যাবেনা। এখানে আপনার নিজকে প্রেজেন্টস করতে বলা হয়েছে। যতটা পারুন নিজের অর্জন/এ্যাচিভ সমূহ বলুন। আপনার পরিবার সম্পর্কে ছোট্ট একটু ব্রিফ করুন যা না বললে নয়। আজকাল ইউটিউব/গুগল কিংবা বিভিন্ন টিউটোরিয়াল সাইটে এই প্রশ্নের খুব সুন্দর ব্যাখ্যা আছে। চাইলে হেপ্ল নিন ওখান থেকে।
।।তিন।।
পড়াশোনার পাশাপাশি আপনি এক্সট্রা যেসব কাজ করেছেন তার ভেতর যেসব আপনার অর্জন কিংবা আপনার সিভিতে এক্সট্রা অ্যাকটিভিটিস্ হিসেবে গণ্য করা যাবে এমনসব কিছু কাজ করুন। আজকাল প্রায়ই জব গুলোতে কম্পিউটার রিলেটেড (মাইক্রোসফট, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট) ইত্যাদি কাজগুলো জানা থাকলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। সুতরাং এরকম ২/১ টা কোর্স করে রাখুন।
।।চার।।
আমাদের দেশে চাকরী পেতে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলে তা হল ফ্লুয়েন্ট ইংলিশ স্পীকিং। বেশিরভাগ মানুষ ইংলিশে কথা বলতে পারেনা। অথচ আশ্চর্যের বিষয় আমরা সবাই কমবেশি ইংরেজি জানি লিখতে পারি। কিন্তু বলতে গেলেই হয়ে গেল! সুতরাং আপনি যদি ভালো একটা জব পেতে চান আপনাকে এই বিষয়টি কোনো ভাবে কম্প্রোমাইজ করা যাবেনা। আজকাল অনেকে অনেক সহজ পদ্ধতিতে ইংলিশ স্পোকেন কোর্স করিয়ে থাকে চাইলে আপনি তাদের সাহায্য নিতে পারেন।
।।পাঁচ।।
অভিজ্ঞতা কিংবা দক্ষতার বিষয় কমবেশি সব জায়গাতে আছে। সবাই চায় ভালো একজন এক্সপার্ট একজন কর্মী পেতে। অভিজ্ঞতা মানে এই না যে আপনাকে চানাচুর কোম্পানিতে ২/১ বছর চাকরী করে তারপর ভালো কোথাও ট্রাই করতে হবে। আজকাল প্রায় সব কোম্পানিতে ইন্টার্নশীপ রয়েছে। সেখানে ২/৩ মাস কাজ করুন আর আপনার খেল দেখিয়ে বাজিমাত করুন। বেশিরভাগ মানুষ যা করে সেটা তারা জব-টা সরাসরি পেতে চায়। কিন্তু তাদের কোনো একটা কাজ করতে বলা হলে তারা খুব ভালো পারেনা কিংবা ইউটিউবে গিয়ে টিউটোরিয়াল দেখে তা সলভ্ করে। ভুলে যাবেন না - কোম্পানি এমন কাউকে খোঁজে যে টিউটোরিয়াল দেখে কাজ করবে বরং কোম্পানি তাকে যায় – যে টিউটোরিয়াল টা বানায়।
।।ছয়।।
আপনার যদি চাকরী করা খুব প্রয়োজন হয় তবে ছোটখাটো কোনো একটা জব করে আর্থিক অস্বচ্ছতা দূর করতে পারেন। তবে এটাকে শুধু একটা সাময়িক সমস্যা উত্তোরনের পন্থা হিসেবে মাথায় রাখতে হবে।আপনার মূল ফোকাস টা ধরে রাখতে হবে।অনেকে বলে দু-নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না।কিন্তু আমি বলি — 'দু-নৌকায় পা দিয়েও চলা যায়। যদি আপনার চলার পথের দিক আর গতি একই থাকে।' হাতে একটা জব থাকলে মাথার অনেক স্ট্রেস কমে যায়।নিজেকে হালকা মনে হবে। এতে আপনার সামনে চলা সহজ হবে। চাকরীর পাশাপাশি আপনি যদি আপনার প্রিপারেশন ঠিকমতো নিতে পারেন তো কেল্লাফতে!
অনেকে অভিযোগ করে আমাদের দেশে চাকরী পেতে ঘুষ কিংবা মামা-খালু লাগে।হ্যা– বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যে নয়।কিন্তু আপনি একটা জিনিস ভাবুন আপনি নিজে যদি আপনার কোম্পানিতে জনবল নিতে চান তাহলে কি সবই আপনার আত্নীয়-স্বজন দিয়ে ভরাবেন। আপনি কি আপনার বিজনেস কিংবা কোম্পানির উন্নতির জন্য অবশ্যই কিছু দক্ষ ভালো লোক চাইবেন। কেউ তো আর জেনেবুঝে লোকসান কিংবা ক্ষতি করতে চায়না। সুতরাং এসব অহেতুক চিন্তায় মাথায় রাখবেন না।ভাবুন যদি একজন লোক কোথাও চাওয়া হয় সেই একজন যেন আমি হতে পারি। মানুষের চাওয়া তার স্বপ্নের পথের অর্ধেক পূরণ করে। কারণ যখন আপনি মন থেকে চাইবেন তখন তা আপনার অন্তরে গেঁথে যাবে এবং সেটা পাওয়ার জন্য তখন আপনার সাবকনসাস মাইন্ড আপনাকে প্রতিনিয়ত রিমাইন্ডার দিবে। আপনার মস্তিষ্কের ভেতর জানাতে থাকবে এটা করো!ওটা করো!তবেই হবে।
আজিবুল হাসান
২৮ মার্চ, ২০২১