‘নারী নির্যাতন একটি সামাজিক ব্যাধি’ এই শিরোনামে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য একটি
প্রতিবেদন রচনা করো।
নারী নির্যাতন একটি সামাজিক ব্যাধি
নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা : বর্তমান সমাজে যতগুলো সামাজিক সমস্যা রয়েছে নারী
নির্যাতন তার মধ্যে অন্যতম প্রধান। বর্তমান সময়ে নারী নির্যাতনের ভয়াবহ রূপ
যেকোনো সুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে আতঙ্কিত করে তোলে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী
একটি জরিপে দেখা গেছে সারা বিশ্বের সর্বাধিক নারী নির্যাতিত হওয়া শহরের তালিকায়
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান রয়েছে চতুর্থ স্থানে। এ চিত্র আমাদের দেশের
জন্য কেবল লজ্জ্বাজনকই নয় বরং আমাদের সমাজজীবনে একটি চরম উদ্বেগের বিষয়।
তৃতীয় বিশ্বের মতো পশ্চাৎপদ সমাজে নারীরা দীর্ঘকাল ধরেই নির্যাতনের শিকার।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মানসিকতাই নারীকে পুরুষের সমকক্ষ হিসেবে ভাবতে শেখায় না।
ফলে পরিবারে, সমাজে, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে নারীরা। তারা
শিক্ষাগ্রহণ, পেশাগত ক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক অধিকারে, মতপ্রকাশে, চলাফেরায়, নানাভাবে
বঞ্চনার শিকার। নিরাপত্তার ঝুঁকিতেও নারীর অবস্থান বিপজ্জনক পর্যায়ে। পত্রিকার
পাতা খুললেই প্রতিদিন চোখে পড়ে ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, হত্যাসহ ভয়াবহ সব ঘটনা।
নারী নির্যাতনের সবচেয়ে জঘন্যতম দিক হলো যৌন হয়রানি। যৌন হয়রানির রয়েছে নানাদিক।
ধর্ষণ এখন নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন এত এত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে যে তা
গা-সওয়া হয়ে গেছে সবার। ধর্ষণের ফলে বা ধর্ষণে বাধা দিতে গিয়ে মৃত্যুও ঘটছে অহরহ।
এছাড়া রাস্তাঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে ‘ইভটিজিং’ নামক যৌন হয়রানির শিকার হতে
হয় কিশোরী থেকে মাঝবয়সি প্রায় প্রত্যেক নারীকে। সাধারণত মেয়েদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে
দেওয়া বিশ্রী মন্তব্য, শিস বাজানো, কাপড় ধরে টান দেওয়া, ভিড়ের মধ্যে ধাক্কা
দেওয়া, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা, যানবাহনে নারীদের গায়ে স্পর্শ করা ইত্যাদি নানা
ধরনের অনৈতিক কাজই হলো ইভটিজিং। এছাড়া বিনা অনুমতিতে মেয়েদের ছবি তোলা, মিস কল
দেওয়া, আপত্তিকর মেসেজ পাঠানো, ফেসবুক বা ই-মেইলের মাধ্যমে কু-মন্তব্য প্রেরণ
করাও ইভটিজিংয়ের আওতাভুক্ত।
আমাদের সমাজের কিছু মনুষ্যত্ববর্জিত কিশোর-যুবক দ্বারাই এসব কাজ সংঘটিত হয়ে থাকে।
দায়িত্বজ্ঞানহীন এসব ছেলে রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাকেই তাদের কাজ
মনে করে। বিশেষ করে স্কুলগামী ছাত্রীরা এবং তরুণীরা ইভজিটিংয়ের শিকার হয়। ঘৃণ্য
এই অসামাজিক কাজের কারণে অনেক মেয়েই নিয়মিত কাজ করতে পারছে না। ছাত্রীদের
লেখাপড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। এই জঘন্য অন্যায়ের প্রতিবাদে অনেক
মেয়ের জীবনেই নেমে এসেছে দুর্ভোগ, অনেকেই বেছে নিয়েছে আত্মহননের পথ। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ছাত্রী সিমি, মিরপুরের ফাহিমা, খুলনার রুমি,
গাইবান্ধার তৃষ্ণা, স্বপ্না, সাভারের তিথি, সিলেটের খাদিজাসহ আরও অনেক মেয়েই এ
অভিশপ্ত অন্যায়ের বলি হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।
ছেলেদের কাজের প্রতি উদাসীনতা, বেকারত্ব, চারিত্রিক অসংযম, আইনশৃঙ্খলার অবনতি,
অর্থের কুপ্রভাব ইত্যাদি ইভটিজিংয়ের মূল কারণ। এছাড়াও আধুনিকতার নামে পশ্চিমা
সংস্কৃতির কিছু পরিবারের মেয়েদের উগ্র পোশাক পরাও ইভটিজিংয়ের কারণ হিসেবে
চিহ্নিত। সমাজে উন্নত ও স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে ইভটিজিং নামক সামাজিক
ব্যাধির মূলোৎপাটন করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্মিলিত ভূমিকা
প্রয়োজন। পরিবার যদি ছেলেদেরকে উন্নত শিষ্টাচার শিক্ষা দেয় এবং মেয়েদেরকে শালীন
হতে উদ্বুদ্ধ করে, তবে সমাজ থেকে এ ব্যাধি দূর করা সম্ভব। তাছাড়া সমাজে
ইভজিটিংয়ের ব্যাপারে প্রতিরোধমুখী ব্যাপক প্রচার করে এর ভয়াবহতা রোধ করতে হবে।
এছাড়া রাষ্ট্র কর্তৃক কঠোর আইন প্রণয়ন ও নীতিমালা গঠনের মাধ্যমে ইভটিজারদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বোপরি মানবিক মূল্যবোধের স্ফুরণ ঘটানোর মাধ্যমেই
ইভটিজিং প্রতিরোধ করতে হবে।
প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানা : ফারহানা শান্তা, সিদ্ধেশ্বরী বালিকা
উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা।
প্রতিবেদনের শিরোনাম : নারী নির্যাতন একটি সামাজিক ব্যাধি।
প্রতিবেদন তৈরির সময় : সকাল ১১টা।
তারিখ : ২০/০৩/২০২১