অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় শব্দ
বাংলা ভাষায় যে অব্যয় শব্দগুলো কখনো স্বাধীন পদরূপে, আবার কখনো শব্দ বিভক্তির ন্যায় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, তাকে অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় বা পরসর্গ বলে।
অনুসর্গ কখনো প্রাতিপাদিকের পরে ব্যবহৃত হয়, আবার কখনো কারক বা বিভক্তির ন্যায় বসে।
বাংলা ভাষায় বহু অনুসর্গ আছে। যথা : প্রতি, বিনা / বিনে, বিহনে, সহ, ওপর, অবধি, হেতু, মধ্যে, মাঝে, পরে, ভিন্ন, বই, ব্যতিত, জন্যে, পর্যন্ত, অপেক্ষা, সহকারে, তরে, পানে, নামে, মতো, নিকট, অধিক, পক্ষে, দ্বারা, দিয়া, দিয়ে, কর্তৃক, সাথে, সঙ্গে, হইতে, থেকে, চেয়ে, পাছে, ভিতর, ভেতর ইত্যাদি।
★ এদের মধ্যে দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক, হইতে (হতে), চেয়ে, অপেক্ষা, মধ্যে ইত্যাদিগুলো কয়েকটি বিভক্তিরূপে ব্যবহৃত হয়।
অনুসর্গগুলো কখনো প্রাতিপাদিকের পরে ব্যবহৃত হয়, আবার কখনো বা 'কে' এবং 'র' বিভক্তিযুক্ত শব্দের পরে বসে। যেমন :
বিনা / বিনে : দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে? (প্রাতিপাদিকের পরে)
সনে : ময়ূরীর সনে নাচিছে ময়ূর। (ষষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত শব্দের পরে)
দিয়ে : তোমাকে দিয়ে আমার চলবে না। (দ্বিতীয়ার 'কে' বিভক্তিযুক্ত শব্দের পরে)
বই : সত্য বই মিথ্যে বলবা না।
তরে : এ জন্মের তরে বিদায় নিলাম।
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ
লাগিয়া (নিমিত্তার্থে) : সুখের লাগিয়া এ ঘর বাধিনু অনলে পুড়িয়া গেল।
পাশে (সামীপ্য অর্থে) : বাড়ির পাশে আরশি নগর।
পর (দীর্ঘ বিরতি অর্থে) : শরতের পর হেমন্ত আসে।
পরে (স্বল্প বিরতি অর্থে) : এ ঘটনার পরে আর এখানে থাকা চলে না।
বিহনে (ব্যতিরেকে অর্থে) : উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ?
মাঝে (একদেশিক অর্থে) : এ দেশের মাঝে একদিন সবই ছিল।
মাঝারে (ব্যাপ্তি অর্থে) : আছ তুমি প্রভু জগৎ মাঝারে।
সনে (বিরুদ্ধগামিতা অর্থে) : দংশন ক্ষত শ্যেন বিহঙ্গ যুঝে ভুজঙ্গ সনে।
সহিত (সমসূত্রে অর্থে) : শত্রুর সহিত বন্ধুত্ব চাই না।
পানে (দিকে বা প্রতি অর্থে) : শুধু তোমার মুখের পানে চাহি বাহির হনু।