‘বচন’ নিয়ে ধারাবহিক প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন : বচন কাকে বলে?
উত্তর : যার দ্বারা ব্যক্তি বা বস্তুর সংখ্যা–জ্ঞান সূচিত ও চিহ্নিত হয় তাকে বচন বলে।
প্রশ্ন : এক কথায় বচনকে কি বলে?
উত্তর : সংখ্যার ধারণা।
প্রশ্ন : বচন একটি পারিভাষিক শব্দ। এর মূল শব্দ কী?
উত্তর : Number.
প্রশ্ন : বচন কত প্রকার?
উত্তর : বচন ২ প্রকার।যথা— একবচন & বহুবচন।
প্রশ্ন : সব ভাষাতেই কি এক এবং বহুবচন নিদির্ষ্ট?
উত্তর : বচন পরিমাণগত ধারণা দেয়। বাংলা ভাষায় এক এবং বহুবচন থাকলেও
পৃথিবীর সব ভাষাতেই এ রীতি অনুসৃত হয়, তা বলা যায় না।
সংস্কৃত ভাষায় বচন ৩
প্রকার। যেমন—
- একবচন
- দ্বিবচন
- বহুবচন
একবচনে নর: (একজন পুরুষ মানুষ),
দ্বিবচনে নরৌ (দুজন), বহুবচনে নরা: (দুয়ের বেশি)।
বাক্যেও এর প্রয়োগ দেখা যাবে। যেমন:
বালকঃ বিনীতস্বভাবঃ (অর্থ : বালকটি বিনীত স্বভাবের।)
বালকাঃ বালিকাশ্চ বিনীতস্বভাবৌ (অর্থ : বালক
ও বালিকাটি বিনীত স্বভাবের।)
বালকাঃ বালিকাশ্চ বিনীতস্বভাবাঃ (অর্থ : বালক এবং
বালিকাগুলো বিনীত স্বভাবের।)
— এখানে স্বভাবঃ→ স্বভাবৌ→স্বভাবাঃ যথাক্রমে একবচন →
দ্বিবচন → বহুবচনাত্মক।
সংস্কৃত ভাষায় বচন ৩ প্রকার হলেও বাংলা ভাষায় বচন ২
রকমেরই।
প্রশ্ন : কোন ধরনের শব্দের বচনভেদ হয়?
উত্তর : শুধু বিশেষ্য ও সর্বনাম জাতীয় শব্দের বচনভেদ হয়।
প্রশ্ন : কেবল উন্নত প্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে ব্যবহৃত শব্দ কোনগুলো?
উত্তর : গণ (নরগণ), বৃন্দ (ভক্তবৃন্দ), মণ্ডলী (শিক্ষকমণ্ডলী), বর্গ (পণ্ডিতবর্গ)।
প্রশ্ন : কেবল অপ্রাণিবাচক শব্দের বহুবচনে ব্যবহৃত শব্দ কোনগুলো?
উত্তর : আবলি (কুসুমাবলি / গ্রন্থাবলি), গুচ্ছ (কবিতাগুচ্ছ), দাম (শৈবালদাম), নিকর (কমলনিকর), পুঞ্জ (মেঘপুঞ্জ), মালা (পর্বতমালা), রাজি (তারকারাজি), রাশি (ফুলরাশি)
প্রশ্ন : কেবল উন্নত প্রাণিবাচক শব্দের শেষে কোন বিভক্তি যুক্ত হয়?
উত্তর : গণ–বিভক্তি। যেমন: শিক্ষকগণ জ্ঞান দান করেন।
প্রশ্ন : কেবল জন্তুর বহুবচনে ব্যবহৃত শব্দ কোনগুলো?
উত্তর : পাল ও যূথ। যেমন— হস্তিযূথ দেখে মৃগপাল দৌড়ে পালালো।
প্রশ্ন : প্রাণিবাচক এবং অপ্রাণিবাচক উভয় শব্দের বহুবচনে ব্যবহৃত শব্দ কোনগুলো?
উত্তর : কুল (ইষ্টকুল / কবিকুল); নিচয় (পর্বতনিচয় / মনুষ্যনিচয়); সকল (পর্বতসকল / মনুষ্যসকল); সব (নথিসব / পাখিসব); সমূহ (বইসমূহ / বৃক্ষসমূহ)।
প্রশ্ন : বিশেষ্য দ্বিত্ব বসে যখন বহুবচন বোঝায় তার উদাহরণ দাও?
উত্তর : 'পাগল হইয়া ফিরি বনে বনে' — রবীন্দ্রনাথ
'দেশ দেশ নন্দিত করি' — রবীন্দ্রনাথ
'চরকার ঘর্ ঘর্ পল্লীর ঘর ঘর' — সত্যেন্দ্রনাথ
প্রশ্ন : বিশেষণ দ্বিত্ব বসে যখন বহুবচন বোঝায়, তার উদাহরণ দাও?
উত্তর : ছোট ছোট ফল (অনেকগুলো ফল, তবে প্রতিটি ছোট)।
সুন্দর সুন্দর ছেলে (অনেকগুলো ছেলে, তবে সবাই সুন্দর)।
প্রশ্ন : বিদেশি শব্দে বহুবচনে বিদেশি নিয়ম মানা হয় কি?
উত্তর : সবক্ষেত্রে নয়। যেমন: জনাব > সর্বজনাব, এটা বহুবচন হলো না।কিন্তু সাহেব > সাহেবান; বুজুর্গ > বুজুর্গান বিদেশি নিয়মে হয়েছে।
লক্ষনীয় – একই সঙ্গে দুইবার বহুবচনবাচক প্রত্যয় বা শব্দ ব্যবহৃত হয় না। যেমন — সব মানুষই অথবা মানুষ অথবা মানুষেরা মরণশীল (শুদ্ধ)। সকল মানুষেরাই মরণশীল (ভুল)।
★ রা — কেবল উন্নত প্রাণিবাচক শব্দের সঙ্গে 'রা' বিভক্তির ব্যবহার পাওয়া যায়। যেমন: ছাত্ররা খেলা দেখতে গেছে। তারা সকলেই লেখাপড়া করে। শিক্ষকেরা জ্ঞান দান করে।
★ গুলা, গুলি, গুলো — প্রাণিবাচক এবং অপ্রাণিবাচক উভয়ের বহুবচনে ব্যবহৃত হয়। যেমন: অতগুলো কুমড়া দিয়ে কি হবে? আমগুলো টক।টাকাগুলো দিয়ে দাও। ময়ূরগুলো পুচ্ছ নাড়িয়ে নাচছে।
★ কেবলমাত্র বিশেষ্য ও সর্বনাম শব্দের বচনভেদ হয়।