চর্যাপদের কবিদের পরিচয়
।।এক।।
কাহ্নপা
চর্যাপদের কবিদের মধ্যে সর্বাধিক পদরচয়িতা কোন কবি? — কাহ্নপা।
কাহ্নপা কয়টি পদ রচনা করেন? — ১৩ টি।
এই পদগুলোর বৈশিষ্ট্য কী? — নিপুন কবিত্বশক্তি প্রকাশের পাশাপাশি তৎকালীন সমাসচিত্রও উদঘাটন।
চর্যাপদের যে পদগুলো পাওয়া যায় নি তার কোনটি কাহ্নপার রচনা বলে মনে করা হয়? — ২৪ নং পদটি।
চর্যাপদে কাহ্নপা আর কি কি নাম পাওয়া যায়? — কাহ্নু, কাহ্নি, কাহ্নিল, কৃঞ্চচর্য, কৃঞ্চবজ্রপাদ।
।।দুই।।
কুক্কুরীপা
কুক্কুরীপা কতটি পদ রচনা করেন? — ২ টি ( ২ ও ২০ নং)।
তিনি কোন অঞ্চলের মানুস ছিলেন? — তিব্বতের কাছাকাছি কোন অঞ্চলে।
কোন সময় তিনি বর্তমান ছিলেন? — খ্রিষ্টীয় ৮ম শতকে।
তার পদ পর্যালোচনা করলে কি মনে হয়? — এর ভাব ইতর, ভাষা গ্রাম্য।
।।তিন।।
ধর্মপা
ধর্মপা কখন ও কোথায় অবস্থান করেন? — খ্রিষ্টিয় নবম শতকে বিক্রমশীলায়।
তার গুরু কে ছিলেন? — কাহ্নপা।
চর্যার কোন পদ তার রচনা? — ৪৭ সংখ্যক পদ।
এই পদের বিশেষত্ব কি? — এখানে অগ্নিকাণ্ডের প্রতীকে গভীর যোগতত্ত্বের কথা আছে।
।।চার।।
ঢেণ্ডণপা
ঢেণ্ডণপা কোন সময়ের কবি? — নবম শতকের।
তার পেশা কি ছিল? — তাঁতি।
চর্যায় কয়টি পদ তিনি রচনা করেন? — ১ টি (৩৩ সংখ্যক)।
।।পাঁচ।।
বিরুপা
বিরুপা কখন ও কোথায় অবস্থান করেন? — মনে করা হয় অষ্টম শতকে ত্রিপুরায়।
তার গুরু কে ছিলেন? — জালন্ধরীপা।
চর্যাপদে তার অন্তর্ভুক্ত পদের সংখ্যা কয়টি? — একটি (৩ সংখ্যক)।
এই পদে কি বর্ণিত আছে? — শুঁড়িবাড়ির উপযুক্ত চিত্র।
।।ছয়।।
বীণাপা
বীণাপা কখন ও কোথায় অবস্থান করেন? — খ্রিষ্টীয় নবম শতকে গৌড়ে।
তার গুরু কে ছিলেন? — ভাদেপা।
সংস্কৃতগ্রন্থ বজ্রডাকিনীনিষ্পন্নক্রম কার রচনা? — বীণাপার।
চর্যাপদের কোন পদটি তার রচনা? — ১৭ সংখ্যক।
এই পদের বিশেষত্ব কী? — এখানে চন্দ্র–সূর্যকে চমৎকার উপমায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
।।সাত।।
ভাদেপা
ভাদেপার কখন ও কোথায় অবস্থান ছিল? — খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকে শ্রাবন্তী এলাকায়।
তার গুরু কে ছিলেন? — জালন্ধরীপা, মতান্তরে কাহ্নপা।
চর্যার কোন পদ তিনি রচনা করেন? — ৩৫ সংখ্যক পদ।
এই পদের মূল কথা কী? — ধর্মীয় তত্ত্বকথার বর্ণনা।
।।আট।।
ভুসুকুপা
চর্যায় পদ রচনার দিক থেকে ভুসুকুপার অবস্থান কততম? — দ্বিতীয়।
তিনি কয়টি পদ রচনা করেন? — আটটি (৬, ২১, ২৩, ২৭, ৩০, ৪১, ৪৩, ৪৯)।
ভুসুকু নামের অর্থ কী? — তিনি ১ম দিকে অলস ছিলেন। তাই তিনি ভু (ভুক্তি), সু( সুপ্তি), কু(কুটিরে) অবস্থান ছাড়া কিছু করতেন না বলে তাকে 'ভুসুক' বলা হতো।
তিনি কোন অঞ্চলের মানুষ ছিলেন? — পূর্ববঙ্গের।
তার রচিত পদসমূহের বৈশিষ্ট্য কী? — সেখানে বাঙালী জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।
ভুসুপা রচিত একটি উল্লেখযোগ্য পঙক্তি লেখ? — অপনা মাংসেঁ হরিণা বৈরী (পদ:৬)।
।।নয়।।
মহীধরপা
মহীধরপার কখন ও কোথায় অবস্থান ছিলেন? — খ্রিষ্টীয় নবম শতকে মগধ অঞ্চলে।
তিনি চর্যাপদের কোন পদটি রচনা করেন? — ১৬ সংখ্যক পদ।
এই পদের বৈশিষ্ট্য কী? — পাপ ও পূণ্যকে দুটি শিকলের সাথে তুলনা করে তা ছিন্ন করে মহারস পান করার কথা বলা হয়েছে।
।।দশ।।
লুইপা
লুইপা কে ছিলেন? — প্রবীন বৌদ্ধসিদ্ধাচার্য ও চর্যাপদ কবি।
চর্যাপদের প্রথম পদটি কার রচনা? — লুইপার।
চর্যায় তিনি মোট কতটি পদ রচনা করেন? — ২ টি (১ ও ২৯ সংখ্যক)।
লুইপা রচিত কয়টি সংস্কৃতগ্রন্থের নাম পাওয়া যায়? — ৫ টি।
।।এগার।।
শবরপা
শবরপা কোন দেশের লোক ছিলেন? — বাংলা দেশের।
তিনি কার শিষ্য ছিলেন? — নাগার্জুনের।
সংস্কৃত ও অপভ্রংশ মিলে তিনি কয়টি গ্রন্থ রচনা করেন? — ১৬ টি।
চর্যাপদের কোন পদগুলো তার লেখা? — ২৮ ও ৫০ সংখ্যক।
শহীদুল্লাহ্ শবরপাকে কার গুরু বলে উল্লেখ করেছিলেন? — লুইপার।
।।বারো।।
শান্তিপা
শান্তিপা কোন সময়ের কবি বলে মনে করা হয়? — এগার শতকের।
তিনি কোথায় বাস করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়? — বিহারের বিক্রমশীলায়।
তারনামে চর্যাপদে কতটি পদ পাওয়া যায়? — ২ টি (১৫ ও ২৬ নং)।
বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করতে তিনি কোথায় যান? — সিংহল।
।।তেরো।।
সরহপা
তার নামে চর্যাপদে কোন কোন পদ পাওয়া যায়? — ২২, ৩২, ৩৮, ৩৯ সংখ্যক; ৪ টি।
তার পদের মূল বিষয়? — শবর–শবরীর প্রেমকাহিনী এবং কতিপয় সরলতত্ত্ব কথা।
।।চৌদ্দ।।
ডোম্বীপা
ডোম্বীপা কে ছিলেন? — ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা।তার অলৌকিক ক্ষমতা ছিল বলে মনে করা হয়।
ডোম্বীপার গুরু কে ছিলেন? — বিরুপা।
ডোম্বীপা কোন পদ লিখেছেন? — ১৪ সংখ্যক।
তার রচিত পদে কোন চিত্র ফুটে ওঠে? — গঙ্গা ও যমুনা নদীতে নৌকা বেয়া নেয়ার চিত্র। কড়ি ছাড়াই এখানে নদী পার হওয়া যায়।
।।পনেরো।।
কম্বলাম্বরপা
কম্বলাম্বরপা কার গুরু ছিলেন? — জালন্ধরীপার।
তিনি কোন সময়ের কবি ছিলেন? — খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকের প্রারম্ভের।
কবিদের দিক থেকে কোন কোন কবির কাছাকাছি? — কাহ্নপার পূর্ববর্তী, কুক্কুরীপার সমকালীন।
কবি প্রকৃতপক্ষে কি ছিলেন? — কঙ্কর নামক স্থানের রাজপুত্র।
।।ষোলো।।
গুণ্ডরীপা
গুণ্ডরীপা আর কি নামে পরিচিত? — গুডরীপা।
তিনি কোন সময়ের কবি? — রাজা দেবপালের রাজত্বকালের (৮০৯-৮৪১)।
গুণ্ডরীপা চর্যাপদের কত সংখ্যক পদের রচয়িতা? — চার সংখ্যক।
গুণ্ডরীপা কি কবির সত্যিকারের নাম? — না। তার প্রকৃত নাম জানা যায়নি।
তিনি কোন অঞ্চলের মানুষ ছিলেন? — পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসী ছিলেন।
।।সতের।।
চাটিল্লপা
চাটিল্লপা চর্যাপদের কত সংখ্যক পদ লেখেন? — পাঁচ সংখ্যক।
তিনি কোন সময়ের কবি ছিলেন? — তিনি ৮৫০ খ্রি. কাছাকাছি জীবিত ছিলেন।
তিনি কোথাকার মানুষ ছিলেন? — দক্ষিণবঙ্গের অধিবাসী ছিলেন।
তার পদে কী প্রাধান্য পেয়েছে? — নদীমাতৃক অঞ্চলের উপাদান।
।।আঠারো।।
আর্যদেবপা
আর্যদেবপাকে অন্য কোন নামে অভিহিত করা হয়? — আজদেব। কারণ ভণিতায় তা উল্লেখ আছে।
আর্যদেবপা কোন সময়ের কবি? — শহীদুল্লাহর মতে তিনি কম্বলাম্বরপার সমকালীন কবি।
তিনি কি রাজা ছিলেন? — তারনাথের মতে তিনি (আর্যদেবপা) মেবারের রাজা ছিলেন।
কে তাঁকে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত করেন? — গোরক্ষনাথ।
আর্যদেবপার ভাষা কি বাংলা ছিলেন? — শহীদুল্লাহর মতে অনেকটা বাংলা বটে কিন্তু উড়িষ্যা ভাষা বলা সঙ্গত।
।।উনিশ।।
দারিকপা
দারিকপার পূর্ণ পরিচয় কি ছিলো? — তিনি সালিপুত্র নামক স্থানের রাজা ছিলেন।তার নাম ছিল ইন্দ্রপাল।
লুইপার সঙ্গে তার সম্পর্ক কেমন ছিল? — তিনি লুইপার শিষ্য নন তবে শিষ্য পরম্পরার একজন ছিল।
দারিকপার অন্যান্য গ্রন্থের নাম লেখ? — তথাদৃষ্টি, সপ্তম সিদ্ধান্ত ইত্যাদি।
।।বিশ।।
তাড়কপা
তাড়কপা কে ছিলেন? — তাড়কপা সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না।এমন কি তিব্বতী ভাষায় ৮৪ মহাসিদ্ধের তালিকাতেও তার নাম নেই।
এই কবিকে 'নাড়কপা' নামে কে অভিহিত করেছেন? — রাহুল সাংকৃত্যায়ন।শহীদুল্লাহ্ একে 'ভুল' বলে অভিহিত করেছেন।
তাড়কপা চর্যাপদের কোন পদ লিখেছেন? — ৩৭ সংখ্যক।
।।একুশ।।
কঙ্কণপা
কঙ্কণপা কোন সময়ের কবি ছিলেন? — গবেষকদের মতে তিনি ৯৮০ থেকে ১১২০ খ্রি. অবধি জীবিত ছিলেন।
বৌদ্ধধর্মে দীক্ষাগ্রহণের পূর্বে তিনি কী ছিলেন? — বিষ্ণুনগর রাজা ছিলেন।
কম্বলাম্বরপার সঙ্গে তার সম্পর্ক কী? — কঙ্কণপা তার শিষ্য ছিলেন।
কঙ্কণপার লেখায় বাংলার সঙ্গে কিসের মিশ্রণ আছে? — বাংলার সঙ্গে ব্যাকরণে কিছু অপভ্রংশের রূপ পাওয়া যায়।
।।বাইশ।।
জয়নন্দীপা
জয়নন্দীপার অন্য নাম কী? — অনেকে মনে কর তার নাম জয়াছন্দ।
তিনি কে ছিলেন? — জাতিতে তিনি ব্রাহ্মণ এবং কোনো রাজার মন্ত্রী ছিলেন।
তিনি কোন পদ রচনা করেন? — ৪৬ সংখ্যক।
তার ভাষার সঙ্গে আর কোন কোন ভাষার নিকট সাদৃশ্য পাওয়া যায়? — মৈথিলী, উড়িয়া, অহমিয়া ভাষা।
।।তেইশ।।
তন্ত্রীপা
তন্ত্রীপা নিয়ে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি।
আজিবুল হাসান
৯ এপ্রিল, ২০২১
অনেক ভালো হয়েছে
ReplyDelete