জীবনে এই চারটি বিষয় নিয়ে কখনো লজ্জা করবেন না

।।এক।।
আপনার ব্যবহার করা পোশাকটি। আপনি এখন যে পোশাকটি পড়ে আছেন হতে পারে এটা একদম নতুন কিংবা হতে পারে পুরনো পোশাক। এতে লজ্জা বা গৌরবের কিছু নেই। আপনি পুরাতন পোশাক পড়ে আছেন এতে আপনার অসম্মানের কিছু নেই। আমরা অনেক সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কোথাও যেতে কিংবা কোথাও বেড়াতে গেলে নতুন পোশাক খুঁজে থাকি। এতে দোষের কিছু নয়। কিন্তু আপনার যদি নতুন পোশাক না থাকে বিপত্তি টা ঘটে তখন-ই। জীবনে কখনো অন্যের ধার করা পোশাক পড়ে কোথাও যাবেন না। পোশাকে অহমিকা তো আহমক করে। আপনি কি আহমকের দলে! আপনার পোশাক নতুন হোক কিংবা পুরনো হোক সেটা বিষয় না। সবসময় পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পড়ুন। একটা ঘটনা আপনার সবাই জানেন তবু বলতেছি। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন যখন তার আপেক্ষিক তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত হয়ে গেলেন এবং এর ব্যাখ্যা করতে দেশের নানা শহরে যেতেন। তখন তিনি তার আটপৌড়ে পোশাকগুলোই পড়তেন। যেগুলো খুব সাধারন আর বাড়িতে পড়ার মতো। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে তার কথা উঠলে তিনি হাসিমুখে বলতেন — 'যেখানে যাচ্ছি সেখানে আমায় কেউ চিনে না তাই আমি কেমন পোশাকে যাচ্ছি সেটা বিষয় না। আবার পরিচিত জায়গায় যাওয়ার সময় সেইম কথাটাই বলতেন। ওখানে আমায় সবাই চিনে আর তাই কি পোশাক পড়ে যাচ্ছি এটা ব্যাপার না।' আসলে কথাগুলো সত্য। আপনি কে এটা আপনার পোশাক দিয়ে আপনার পরিচয় প্রকাশ পাবেনা।

।।দুই।।
আপনার অনেক বন্ধু আছে। তাদের মধ্যে সবাই যে ধনী হবে এমনটা নাও হতে পারে। কাজেই আপনার দরিদ্র বন্ধু কে নিয়ে লজ্জায় পড়বেন না। বন্ধুত্ব ধনী কিংবা গরিবে হয়না। বন্ধুত্ব হয় দুটি মানুষের মনের মিল থেকে, একান্ত চাওয়া থেকে, অনেক চাওয়ার পূর্ণতা থেকে কিংবা জীবনের কোনো একটা মূল্যবান কিছুর বিনিময়ে। আপনি যেমন একা একা ভালোভাবে থাকতে পারবেন না ঠিক অপর একজন মানুষেরও সেইম অবস্থা। সমাজে চলতে গেলে জীবনে বড় হতে হলে আপনার কিছু মানুষের সাহায্য লাগবে, কিছু মানুষের অনুপ্রেরণা লাগবে। আপনার বিপদে আপনার হাতটা শক্ত করে ধরবে, আপনার খারাপ সময়ে এসে বলবে পাশে আছি। এগুলোর জন্য আপনার বন্ধু লাগবে। আর এই বন্ধুত্ব করতে গিয়ে ধনী-গরীব কিংবা উঁচু-নিচু বাছতে যাবেননা। বন্ধুত্ব হয় দুটি মানুষের হৃদয়ের মিলনে। সামাজিক অবস্থান দিয়ে নয়। যে আপনার পাশে থাকবে, আপনার প্রয়োজনে নিজেকে সামিল করবে সেই আপনার বন্ধু। হোক সে গরিব হোক সে দরিদ্র।

।।তিন।।
সাধারন মানুষ যে শুধু সাধারনভাবে জীবন যাপন করে এমনটা নয়। বরং বিষয়টা এমন - অসাধারন মানুষ সাধারনভাবে জীবন অতিবাহিত করে। পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহম্মদ (সঃ) খুবই সাধারনভাবে জীবনযাপন করতেন। বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম বুদ্ধ কপিলা রাজপ্রসাদ ছেড়ে অনাড়ম্বর জীবনে আসতে পেরেছিলেন বলেই হয়তো আমরা এমন অসাধারন অবতার পেয়েছিলাম। জীবনে সকল প্রাপ্তি সকল পূর্ণতা যেন সর্বসাধারনের ভেতর নিহিত আছে। আর তাই তো মহাপুরুষ, ঋষি, পৃথিবীর সেরা সব ব্যক্তি থেকে শুরু করে আজকের দিনে পৃথিবী সেরা ধনী ব্যক্তিরাও কি সাধারনভাবেই না জীবনটা পার করে দিচ্ছেন। একটা ঘটনা বলি — বিল গেটস একবার এক রেস্টুরেন্টে খাবার পর ওয়েটার কে পাঁচ ডলার অতিরিক্ত বকশিস দিয়েছিলেন। প্রত্যুত্তরে ওয়েটার বিল গেটসকে বলেছিলেন 'আপনার চেয়ে আপনার ছেলে আমায় বেশি বকশিস দেয়। এট জবাবে গেটস বলেছিলেন তার বাবা বিল গেটস কিন্তু আমার বাবা গেটস নয়।' সুতরাং আপনার অহেতুক অর্থ বড়াই পরিহার করা উচিত। আপনার অনেক সম্পদ থাকতে পারে সেটা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু সেটা যেন আপনার অহংকারের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।

।।চার।।
আমাদের সবাই কে পৃথিবী তে স্বাভাবিকভাবে এবং একটা সামাজিক পরিচয় পেতে বাবা-মার অবদান অপরিসীম। আপনার বালক অবস্থা হতে আজকে আপনি পর্যন্ত আসতে তাদের ত্যাগ আর ঋণ আপনি কখনো শোধ করতে পারবেন না। একসময় সময়ের আবর্তে তারা বৃদ্ধ হয়ে যাবে। আপনি কর্তা হয়ে যাবেন। কাজেই বৃদ্ধাবস্থায় আপনার বাবা–মাকে সযত্নে আগলে রাখুন। জীবনের কোনো অবস্থাতে বৃদ্ধ পিতা-মাতার জন্যে লজ্জাবোধ করবেন না। আপনার আজকের আমি-টার পেছনে কিন্তু এই বৃদ্ধ বাবা-মারই অবদান সবচেয়ে বেশি। আপনি একদিন বৃদ্ধ হবেন। ন্যাচারাল রিভেঞ্জ বলে একটা কথা আছে। সুতরাং বাবা–মা সবসময় বাবা-মা হোক সেটা যে কোনো বয়সের। তারা আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী আপনার নিঃস্বার্থ ভালোর প্রার্থী। তারা আপনার গুরুজন। সুতরাং সর্বাবস্থায় তাদের ভালোবাসুন আপন করে আপনার কাছে রাখুন।

আজিবুল হাসান
২ এপ্রিল, ২০২১
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post