পদাশ্রিত নির্দেশক
কয়েকটি অব্যয় বা প্রত্যয় কোনো না কোনো পদের আশ্রয়ে বা পরে সংযুক্ত হয়ে
নির্দিষ্টতা জ্ঞাপন করে, এগুলোকে পদাশ্রিত নির্দেশক বা পদাশ্রিত অব্যয় বলে। বাংলায়
নির্দিষ্টতা জ্ঞাপকক প্রত্যয় ইংরেজি Definite Article 'The' —এর স্থানীয়। বচনভেদে
পদাশ্রিত নির্দেশকের বিভিন্নতা প্রযুক্ত হয়।
(ক) একবচনে — টি, টা, খানা,
খানি, গাছা, গাছি ইত্যাদি নির্দেশক ব্যবহৃত হয়। যেমন : টাকাটা, বাড়িটা, কাপড়খানা,
বইখানি, লাঠিগাছা, চুড়িগাছি ইত্যাদি।
(খ) বহুবচনে — গুলা, গুলি, গুলো,
গুলিন ইত্যাদি নির্দেশক প্রত্যয় সংযুক্ত হয়। যেমন : মানুষগুলি, লোকগুলো, আমগুলো,
পটলগুলিন ইত্যাদি।
পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার
[ ১ ]
(ক) 'এক' শব্দের সাথে টা, টি যুক্ত হলে তা অনির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন : একটি দেশ,
সে যেমনই হোক দেখতে। কিন্তু অন্যসব সংখ্যাবাচক শব্দের সাথে টা, টি যুক্ত হলে তা
নির্দিষ্টতা বুঝায়। যেমন : তিনটি টাকা, দশটা বছর কেটে গেল।
(খ) নিরর্থভাবেও নির্দেশক টা, টি —র ব্যবহার লক্ষনীয়। যেমন : সারাটি সকাল তোমার
আশায় বসে আছি। ন্যাকামিটা রাখ।
(গ) নির্দেশক সর্বনামের পরে টা, টি যুক্ত হলে তা নির্দিষ্টতা বুঝায়। যেমন : ওটি
যেন কার তৈরি? এটা নয় ওটা আন। সেইটেই ছিল আমার প্রিয় ভালবাসা।
[ ২ ]
'গোটা' বচনবাচক শব্দটির আগে বসে এবং খানা, খানি পরে বসে। এগুলো নির্দেশক ও
অনির্দিশক দুই অর্থেই প্রযোজ্য। 'গোটা' শব্দ আগে বসে এবং সংশ্লিষ্ট পদটি
নির্দিষ্টতা না বুঝিয়ে অনির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন :
গোটা দেশই ছারখার
হয়ে গেছে। গোটাদুই কমলালেবু আছে (অনির্দিষ্ট)। দুখানা কম্বল চেয়েছিলাম
(নির্দিষ্ট)। গোটাসাতেক আম এনো। একখানা বই কিনে দাও (অনির্দিষ্ট)।
★
কিন্তু কবিতায় বিশেষ অর্থে 'খানি' নির্দিষ্টতা বোঝায়। যথা : আমি অভাগা এনেছি বহিয়া
নয়ন জলে ব্যর্থ সাধনখানি।
[ ৩ ]
টাক, টুক, টুকু, টো ইত্যাদি পদাশ্রিত নির্দেশক নির্দিষ্টতা এবং অনির্দিষ্টতা উভয়ই
বোঝায়। যেমন : পোয়াটাক দুধ দাও (অনির্দিষ্ট)। সবটুকু ওষুধই খেয়ে ফেলো
(নির্দিষ্টতা)।
[ ৪ ]
বিশেষ অর্থে, নির্দিষ্টতা জ্ঞাপনে কয়েকটি শব্দ : তা, পাটি ইত্যাদি। যেমন —
তা
: দশ তা কাপড় দাও।
পাটি : আমার একপাটি জুতো ছিঁড়ে গেছে।