ব্যাকরণ : ‘লিঙ্গান্তর’ নিয়ে ধারাবাহিক প্রশ্ন উত্তর

লিঙ্গান্তর নিয়ে ধারাবাহিক প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন : লৈঙ্গিক শব্দ কী?
উত্তর : এটি শব্দের শ্রেণিবিশেষ। এগুলো সাধারণত বিশেষ্য পদ হয়।

প্রশ্ন : লিঙ্গ কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর : ২ প্রকার। যথা : পুং এবং স্ত্রী লিঙ্গ।

প্রশ্ন : ক্লিবলিঙ্গ বাংলায় বিবেচনা করা হয় না কেন?
উত্তর : সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসারে ক্লীবলিঙ্গ বিবেচনা করা হয়। সেখানে স্ত্রী শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ, দার (অর্থ স্ত্রী) শব্দটি পুংলিঙ্গ, কলত্র (অর্থ স্ত্রী) ক্লিবলিঙ্গ। সংস্কৃতের মতো বাংলা ব্যাকরণে লিঙ্গান্তর এতোটা কঠোর নিয়মে নিয়মবদ্ধ নয়। এমন কি বিশেষণেও লিঙ্গভেদ হয় না। যেমন : সুন্দর বালিকা (সুন্দরী বালিকা) নয়। তাই ক্লীবলিঙ্গ বিবেচনা করা হয় না।

প্রশ্ন : কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দের লিঙ্গান্তর লেখ?
উত্তর :
পুংলিঙ্গ — স্ত্রী লিঙ্গ
ঠাকুর — ঠাকুরন / ঠাকরুন / ঠাকুরানী
হুজুর — হুজুরাইন
মৎস্য — মৎসী
মনুষ্য — মনুষী
মানুষ — মানুষী
গো — গবী
বিধাতা — বিধাত্রী
গৃহস্বামী — গৃহস্বামীনী
হুলো বিড়াল — মেনি বিড়াল
মদ্দা ঘোড়া — মাদি ঘোড়া
সভ্য — মহিলা সভ্য
শুক — সারী
দুলহা — দুলাইন / দুলহিন
মলিন — মলিনা
মেধাবী — মেধাবিনী
ধাতা — ধাত্রী
মহৎ — মহতী
খান — খানম
ব্যঙ্গমা — ব্যঙ্গমী
তাঐ — মাঐ
ডাহুক — ডাহুকী
ভব — ভবানী
ঋষি — ঋষ্যানী / ঋষিকা
ষাঁড় — গাভী
শ্বশুর — শ্বশ্রু (শাশুড়ি)
ব্রহ্মা — ব্রহ্মাণী
মুহতারিম — মুহতারিমা

প্রশ্ন : নিত্য স্ত্রীবাচক কয়েকটি শব্দ লিখ?
উত্তর : সতিন, ডাইনি, বাইজি, শাঁখচুন্নি, শাঁখিনী, সৎমা, এয়ো, দাই, অর্ধাঙ্গিনী, কুলটা, কলঙ্কিনী, অন্তঃসত্ত্বা, সপত্নী, অসূর্যম্পশ্যা, অরক্ষণীয়া, সধবা, রূপসী, সজনী, ধনি ইত্যাদি।

প্রশ্ন : নিত্য পুরুষবাচক কয়েকটি শব্দ লিখ।
উত্তর : কবিরাজ, যোদ্ধা, সেনাপতি, দলপতি, ঢাকী, কৃতদার, রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি ইত্যাদি।

প্রশ্ন : সুকেশ (যে পুরুষের মাথায় সুন্দর চুল আছে) শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ কী?
উত্তর : সুকেশা, সুকেশী, সুকেশিনী এই তিনটিই শুদ্ধ।

প্রশ্ন : অবয়ববাচক কতিপয় শব্দের স্ত্রীলিঙ্গে একাধিক শব্দরূপ দেখা যায়। উদাহরণ দাও।
উত্তর :
চন্দ্রমুখ > চন্দ্রমুখী, চন্দ্রমুখা
সুনয়ন > সুনয়নী, সুনয়না
সুকেশ > সুকেশী, সুকেশা, সুকেশিনী
হেমাঙ্গ > হেমাঙ্গী, হেমাঙ্গা, হেমাঙ্গিনী
কৃশোদর > কৃশোদরী, কৃশোদরা
মৃগনয়ন > মৃগনয়নী, মৃগনয়না
চন্দ্রবদন > চন্দ্রবদনী, চন্দ্রবদনা
সুকণ্ঠ > সুকণ্ঠী, সুকণ্ঠা
[ ব্যতিক্রম : শূর্পণখ > (শুধু) শূর্পণখা ]

প্রশ্ন : অবয়ববাচক শব্দ ছাড়াও কতিপয় ক্ষেত্রে স্ত্রীলিঙ্গে একাধিক শব্দরূপ দেখা যায়। উদাহরণ দাও।
উত্তর :
সিংহ > সিংহী, সিংহিনী
অভাগা > অভাগী, অভাগিনী
মাতঙ্গ > মাতঙ্গী, মাতঙ্গিনী
দেবর > ননদ, ননদিনী
গোপ > গোপী, গোপিনী
বিহঙ্গ > বিহঙ্গী, বিহঙ্গিনী
রজক > রজকী, রজকিনী

প্রশ্ন : স্ত্রীলিঙ্গান্তর করলে ক্ষুদার্থ প্রকাশ পায়, এমন কয়েকটি শব্দ লিখ?
উত্তর : একাঙ্ক — একাঙ্কিকা ; নাটক — নাটিকা ; মালা — মালিকা ; গীত —; গীতিকা ; পুস্তক — পুস্তিকা ; ঘট — ঘটি।


প্রশ্ন : স্ত্রীলিঙ্গান্তর করলে বৃহৎ অর্থ প্রকাশ পায়, এমন কয়েকটি শব্দ লিখ?
উত্তর : স্থল — স্থলী ; অরণ্য — অরণ্যানী ; হিম — হিমানী ইত্যাদি।

★ অনেকে ক্ষুদার্থ ও বৃহদার্থের শব্দাবলিকে লিঙ্গান্তর বলে স্বীকার করেন না।

প্রশ্ন : সংস্কৃত ইন্ ভাগান্ত লিঙ্গান্তরে কয়েকটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : মানী — মানিনী ; যামী — যামিনী ; তপস্বী — তপস্বিনী ; মায়াবি — মায়াবিনী ; ধনী — ধনিনী ; গুণী — গুণিনী ইত্যাদি।

প্রশ্ন : অবজ্ঞাসূচক কয়েকটি স্ত্রী—বাচক শব্দ লেখ।
উত্তর : ডাক্তার — ডাক্তারনি ; দারোগা — দারোগানি ; জমিদার — জমিদারনি ; মাস্টার — মাস্টারনি ইত্যাদি।

প্রশ্ন : 'হিজড়া' কোন লিঙ্গের?
উত্তর : 'হিজড়া' শব্দটি একটি হিন্দি শব্দ। তারা সাধারণত ক্লীবলিঙ্গ হিসেবে বিবেচিত। হিজড়াকে বলা হয় — Hermaphrodite. পৃথিবীতে অনেক দেশে হিজড়াকে মেল বা ফিমেল সেক্স না বলে থার্ড সেক্স বলা হয়। বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে হিজড়াদের হিজড়ালিঙ্গ বলে মন্ত্রীসভায় বিল পাশ করে। এ বিল মোতাবেক বাংলা এবং ইংরেজি উভয়ক্ষেত্রে 'হিজড়া' লিখতে হবে। এর কোনো অনুবাদ গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে হিজড়া হলো ক্রোমোসোমের ক্রটি ও জটিলতার কারণে জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী, যাদের লিঙ্গ নির্ধারনে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। হিজড়ারা সাধারনত ২ ধরনের বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। কেউ পুরুষালি আবার কেউ মেয়েলী ধরনের শারিরীক বৈশিষ্ট্য পায় তবে কেউই একক বৈশিষ্ট্যে পূর্ণতা পায় না। তবে যে ধরনেরই হোক না কেন তারা নিজেদের নারী বলে দেখতেই পছন্দ করে। আমাদের দেশে পনের হাজার ; মতান্তরে একটু বেশি সংখ্যক হিজড়া বাস করে।

প্রশ্ন : খাঁটি বাংলায় লিঙ্গান্তর প্রক্রিয়াকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তর : বাংলা ভাষায় পুরুষ এবং স্ত্রীবাচক শব্দের প্রকারভেদ করা হয় দুই ভাবে। যথা : প্রাকৃতিক এবং সামাজিক। দেবর — জা এই লিঙ্গান্তর প্রাকৃতিক ; দেবর —ননদ এটা সামাজিক লিঙ্গান্তর। বৈবাহিক এবং পেশাগত দিক থেকে এই সামাজিক লিঙ্গান্তর কে আবার আরো ২ টি উপভাগে ভাগ করা যায়। যেমন : শিক্ষক — শিক্ষকপত্নী বৈবাহিক লিঙ্গান্তর ; শিক্ষক — শিক্ষিকা হলো পেশাগত লিঙ্গান্তর। তবে লিঙ্গান্তরের এই সামাজিক ভাগ শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কোনো প্রাণী না পশুর ক্ষেত্রে নয়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post