আবুল মনসুর আহমদ
আবুল মনসুর আহমদ কবে কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? — ১৮৯৮ সালের ৩রা সেপ্টেম্বরে ময়মনসিংহ জেলার ধানিখোলা গ্রামে।
আবুল মনসুর আহমদ মূলত কি ছিলেন? — সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক।
তিনি কবে 'ছোলতান' এবং 'মোহাম্মদী' পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগদান
করেন? — ১৯২৩ সালে।
গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর দৈনিক 'ইত্তেফাক' পত্রিকায়
সম্পাদক হিসেবে কবে যোগ দেন? — ১৯৪৬ সালে যোগ দেন। প্রায় ২ বছর কর্মরত ছিলেন (১৯৪৬–১৯৪৮)।
তিনি কোনসব আন্দোলন গুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন? — খেলাফত আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলনের, স্বরাজ আন্দোলন।
আওয়ামী লীগে তার পরিচয় কি ছিলো? — একজন প্রতিষ্ঠাতা নেতা এবং ১৯৫৩ হতে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সহ সভাপতি ছিলেন।
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তার ভূমিকা কি ছিল? — তিনি ২১ দফার অন্যতম একজন প্রণেতা ছিলেন।
যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রীসভায় তার পদ মর্যাদা কি ছিল? — স্বাস্থ্যমন্ত্রী (১৯৫৪)।
তৎকালীন পাকিস্তান সরকার রেডিও - বেতার - টিভিতে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধ
করলে তিনি এই মতের সাথে — সহমত পোষণ করেছিলেন।
আবুল মনসুর আহমদ এর রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
— শুরুতে খেলাফত আন্দোলন, তারপর খেলাফত আন্দোলন থেকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের
স্বরাজ পার্টি, তারপর সেখান থেকে নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসুর কংগ্রেস, তারপর
কংগ্রেস থেকে ফজলুল হকের কৃষক—প্রজা পার্টি এবং সেখান থেকে মুসলিম লীগ সর্বশেষে
আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন।
তাঁর সাহিত্য কর্মের পরিচয় —
উপন্যাস : সত্যমিথ্যা (১৯৫৩), জীবনক্ষুধা (১৯৫৫), আবে হায়াত (১৯৬৮)।
গল্পগ্রন্থ : আয়না (১৯৩৫), ফুড কনফারেন্স (১৯৪৪), আসমানী পর্দা
(১৯৬৪)।
রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ : আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (১৯৬৯), শেরে বাংলা
থেকে বঙ্গবন্ধু (১৯৭২)।
স্মৃতিকথা : আত্মকথা (১৯৭৮)।
শিশুতোষ : ছোটদের কসাসুল আম্বিয়া (১৯৪৯), গালিভারের সফরনামা (১৯৫৯)।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আবুল মনসুর আহমেদের কোন গ্রন্থের ভূমিকা লেখেন? — আয়না।
আবুল মনসুর আহমদ রচিত 'আবে হায়াত' উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
— আবুল মনসুর আহমদের 'আবে হায়াত' উপন্যাসটি ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসে
দেখা যায়— গ্রামের পীরের ছেলে হামিদ ডাক্তার হিসেবে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত
হয়ে শহরে একটা সম্মানজনক খ্যাতি লাভ করে। বাহিরে সে জনদরদি হলেও অন্তরে তার
বিপরীত ছিল। অর্থের প্রতি তার অনেক লোপ ছিল। মূলত সে মুখে জনদরদি ভাব দেখালোও
অন্তরে ধনলিপ্সু ছিল। আবার, তার চরিত্রে একদিকে বিজ্ঞান মনস্ক দেখানো হলেও ভেতরে
ভেতরে সে আধ্যাত্মিকতায় সে বিশ্বাস করত। সে তার একজন সহপাঠিনী যিনি অন্যের
বিবাহিত স্ত্রী (রাজিয়া) কে পাবার জন্য একসময় বিজ্ঞানের মুখোশের খোলস থেকে বেরিয়ে
আধ্যাত্মিকতার আশ্রয় নিয়েছিলেম। মূলত তখনই তার আসল রূপ বের হয়ে আসে। আমাদের সমাজে
এরকম হামিদের মতো লোকের অভাব নাই।
আবুল মনসুর আহমদ রচিত ‘আয়না’ গল্পগ্রন্থের একটু পরিচয় দাও।
— মূলত হাস্যরসাত্মক গল্পের সমাহারে রচিত ‘আয়না’ গল্পগ্রন্থটি ১৯৩৫ সালে
প্রকাশিত হয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো— এই গ্রন্থের মুখবন্ধ লিখেছেন আমাদের
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। মুখবন্ধ : “যে সমস্ত মানুষ হরেক রকমের মুখোশ পরে
আমাদের সমাজে অবাধে বিচরণ করছে, আবুল মনসুরের আয়নার ভেতরে তাদের স্বরূপ — মূর্তি
বন্য ভীষণতা নিয়ে ফুটে উঠেছে।”গ্রন্থটিতে মোট ৭ টি গল্প আছে। প্রায় সব গল্পে
ধর্মান্ধ ও ধর্ম ব্যবসায়ীর চরিত্র চরম ব্যঙ্গবানে জর্জরিত হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যের কোন ধারার সাহিত্য ধরা হয় তার রচনাগুলোকে? — ব্যঙ্গধারার।
পুরস্কার : ১৯৬০ সালে ছোটগল্পের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার।
তাঁর মৃত্যু : ঢাকায় ১৯৭৯ সালের মার্চের ১৮ তারিখ।