সাধারণ জ্ঞান : আনোয়ার পাশা

আনোয়ার পাশা


জন্ম : ১৯২৮ সালের ১৫ই এপ্রিল।

জন্ম স্থান : ডবকাই গ্রাম, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ।

আনোয়ার পাশা মূলত কি ছিলেন? — কবি, সাহিত্যিক, সমালোচক ও শিক্ষাবিদ। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ছিলেন।

আনোয়ার পাশা’র উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মগুলো কী? — উপন্যাস— নীড় সন্ধানী (১৯৬৮) ; নিষুতি রাতের গাথা (১৯৬৮) ; রাইফেল রোটি আওরাত (১৯৭৩)। গল্পগ্রন্থ : নিরুপায় হরিণী (১৯৭০)। কাব্য : নদী নিঃশেষিত হলে।

আনোয়ার পাশা’র বিখ্যাত মুক্তিযুদ্ধ ভিক্তিক উপন্যাসের নাম কী? — রাইফেল রোটি আওরাত।

রাইফেল রোটি আওরাতের পরিচয় দাও।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা প্রথম কয়েকটি উপন্যাসের মধ্যে আনোয়ার পাশা রচিত ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ অন্যতম। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে। এই গ্রন্থের বিশেষত্ব হচ্ছে আগ্নেয়গিরির চূড়ায় বসে আগুনের কথা লেখা যতোটা কঠিন, যুদ্ধকালে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যে বাস করে তেমনি করে যুদ্ধের কাহিনী লেখার জন্য চাই সাহস আর মানসিক স্থিরতা। ঢাবির এই স্বনামধন্য শিক্ষক উপন্যাসটি লিখে গেলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা দেখে যেতে পারেন নি। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তাকে সপরিবারে হত্যা করে পাকিস্তানি ঘাতক দালালরা। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। শহীদ হবার আগে তিনি তার জীবনের সেরা কর্ম এই উপন্যাসটি লিখে গেছেন। ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ নামটির ভেতর উর্দুর গন্ধ বিদ্যমান। এই শব্দগুলো বাংলা ভাষায় পরিচিত হলেও উক্ত তিনটি শব্দ দ্বারা লেখক পাকিস্তানের হীন মানসিকতাকে বুঝিয়েছেন। কাফের হত্যার নামে পাক বাহিনী নির্বিচারে বাঙালি হত্যার মিশনে নেমেছিল। উপন্যাসে পাকিস্তানিদের মনোভাব বুঝাতে লেখক যেসব উক্তি ব্যক্ত করেছেন তার ভেতর কিছু হল— হাত দেওয়া যায় রোটি ও রাইফেলে। আর আওরাতের গায়ে। দুনিয়ার সেরা চীজ আওরাত, আওর রাইফেল। রোটি খেয়ে গায়ের তাকত বাড়াও, রাইফেল ধরে প্রতিপক্ষকে ক্ষতম কর, তারপর আওরাত নিয়ে ফুর্তি কর। ব্যা, এহি জিন্দেগী হ্যায়। এই ত জীবন। উপন্যাসে এক শ্রেণীর বাঙালি মুসলিম মনে করে ইসলাম মানে পাকিস্তান আর পাকিস্তান মানেই ইসলাম। তাদের ধারণা পাকিস্তানের নামে শহীদ হলে ইসলামের নামে শহীদ হওয়া। তাদের বিবেচনায় শহীদদের নামে কোনো মিনার তথা শহীদ মিনার বানানো হল কুফরি কাম। বানাতে হবে মসজিদ। উপন্যাসে লেখক সৃষ্টি করেছেন তৎকালীন পাকিস্তান পন্থাী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আদলে তৈরি করেছেন ড. খালেক এবং ড.মালেক কে। তারা উভয়েই চরমভাবে পাকিস্তানপন্থী এবং খুব সুবিধাভোগী লোক।এছাড়া আছে মুসলীম লীগের হরমুজ মিয়া, মোনায়েম খাঁর আদর্শপুষ্ট ছাবেদ আলী, অবাঙালী হাসমত প্রমুখ। আবার অধ্যাপক সুদীপ্ত শাহিন, আওয়ামী লীগ নেতা জামাল সাহেব ও কমিউনিস্ট কর্মী বুলা এই উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্থপতি বঙ্গবন্ধুর কথা আছে উপন্যাসের ভেতর। প্রাসঙ্গিকভাবে লেখা আছে : এবারের ২১ শে ফেব্রুয়ারির রাত দুপুরের অনুষ্ঠানে সুদীপ্ত এসেছিলেন। কেননা শুনেছিলেন, স্বয়ং শেখ সাহেব ঐ সময় আসবেন। এসেছিলেন। শালপ্রাংশু বজ্রমানব শেখ মুজিবুর রহমান। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের প্রভাবকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বাঙালি যখন যুদ্ধে যুদ্ধে একাত্তরের শেষের দিকে এগোচ্ছিল, মনে হচ্ছিল আনোয়ার পাশা ছিলেন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন লেখক। কারণ দূরদৃষ্টি না থাকলে এমন উপন্যাস লেখা যায় না। ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ প্রচলিত অর্থে চরিত্রনির্ভর উপন্যাস নয়। ঘটনার প্রবহমানতাই এখানে মুখ্য বিষয়। একজন শিল্পীকে বিভিন্ন ভাবে হত্যা করা গেলেও তাঁর শিল্পকে কখনো হত্যা করা যায় না ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ তার উল্লেখযোগ্য প্রমাণ।

আনোয়ার পাশা কী পুরস্কার পেয়েছিলেন? — মরণোত্তর বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭২ সালে)।

মহান এই লেখক আনোয়ার পাশা কবে মৃত্যুবরণ করেন? — ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর ঢাকা ভার্সিটির শিক্ষক কোয়াটার্স হতে পাক বাহিনীর অনুগত আলবদর সদস্যরা তাঁকে ঢাকাট মিরপুরের বধ্যভূমিতে হত্যা করে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post