বিশেষ্য পদ
সংক্ষেপে বলতে গেলে কোনো কিছুর নামকে বিশেষ্য পদ বলে।বাক্যমধ্যে ব্যবহৃত যে সমস্ত পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, জাতি, সমষ্টি, বস্তু, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম বা গুণের নাম বোঝানো হয় তাদের বিশেষ্য পদ বলে।
ভাষা বিজ্ঞানী সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বিশেষ্য পদ পাঁচ প্রকার আবার ব্যাকরণবিদ জগদীশচন্দ্র ঘোষের মতে সাত কিন্তু সাধারণত ছয় প্রকার বিশেষ্য পদই মূলত দেখা যায়। সুতরাং বিশেষ্য পদের ছয়টি হলো —
(ক) সংজ্ঞা (বা নাম) বাচক বিশেষ্য (Proper Noun)
(খ) জাতিবাচক বিশেষ্য (Common Noun)
(গ) বস্তু (বা দ্রব্য) বাচক বিশেষ্য (Material Noun)
(ঘ) সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (Collective Noun)
(ঙ) ভাববাচক/ ক্রিয়া বাচক বিশেষ্য (Verbal Noun)
(চ) গুণবাচক বিশেষ্য (Abstract Noun)
উক্ত ছয় প্রকারের বিশেষ্যের বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হল—
(ক) সংজ্ঞা ( বা নাম) বাচক বিশেষ্য (Proper Noun) : যে পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, ভৌগলিক স্থান বা সংজ্ঞা এবং গ্রন্থ বিশেষের নাম সুনির্দিষ্ট বা বিশেষ নাম বোঝায়, তাকে সংজ্ঞা (বা নাম) বাচক বিশেষ্য (Proper Noun) বলে। যেমন—
ব্যক্তির নাম : নজরুল, আলিম, ওমর, লিটন, মাইকেল, মেসি ইত্যাদি।
স্থানের নাম : ঢাকা, রাজশাহী, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ইত্যাদি।
ভৌগোলিক নাম : পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, হিমালয়, আরব সাগর ইত্যাদি।
গ্রন্থের নাম : গীতাঞ্জলী, অগ্নিবীনা, দেশে বিদেশে, বিশ্বনবি ইত্যাদি।
(খ) জাতিবাচক বিশেষ্য (Common Noun) : যে বিশেষ্য পদ নিদির্ষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা স্থানের ইত্যাদির নাম না বুঝিয়ে সে সবের সাধারণ নাম/ এক জাতীয় নাম বুঝায়, তাকে (খ) জাতিবাচক বিশেষ্য (Common Noun) বলে। যেমন— মানুষ, গরু, পাখি, গাছ, পর্বত, নদী, ইংরেজ ইত্যাদি।
(গ) বস্তু (বা দ্রব্য) বাচক বিশেষ্য (Material Noun) : যে বিশেষ্য পদে কোনো উপাদানবাচক পদার্থের নাম বোঝায়, তাকে (গ) বস্তু (বা দ্রব্য) বাচক বিশেষ্য (Material Noun) বলে। এই জাতীয় বস্তুর পরিমাণ বা সংখ্যা গণনা/নির্ণয় করা যায়। যেমন— বই, খাতা, কলম, থালা, বাটি, মাটি, দুধ, চাল, ডাল, গম, লবন, পানি, চিনি ইত্যাদি।
(ঘ) সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (Collective Noun) : যে পদে একত্র সমাবেশ, এক বা ভিন্ন জাতীয় কোনো সমষ্টি বা গুচ্ছ বোঝায়, তাকে (ঘ) সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (Collective Noun) বলে। যেমন— সভা, সমিতি, সৈন্যবাহিনী, জনতা, পঞ্চায়েত, মাহফিল, বহর, দল, ভেড়াল পাল, এক ঝাঁক পাখি ইত্যাদি।
(ঙ) ভাববাচক বিশেষ্য (Verbal Noun) : যে বিশেষ্য পদ কোনো ক্রিয়ার অর্থ প্রকাশ করে থাকে, তাকে ভাববাচক বা ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন— ভোজন (খাওয়ার কাজ), শয়ন (শোয়ার কাজ), পঠন (পড়ার কাজ), গমন (যাওয়ার কাজ বা ভাব), দর্শন (দেখার কাজ), দেখা, শোনা ইত্যাদি।
(চ) গুণবাচক বিশেষ্য (Abstract Noun) : যে বিশেষ্য পদ কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান বা দ্রব্যের নাম না বুঝিয়ে তার দোষ, গুণ বা অবস্থা বোঝায়, তাকে (চ) গুণবাচক বিশেষ্য (Abstract Noun) বলে। যেমন— সুন্দরের গুণ— সৌন্দর্য, কৃপণের দোষ— কার্পন্য। এরূপ আরো: সততা, ক্রোধ, অহংকার, স্বাস্থ্য, রোগ, শোক, দুঃখ, সুখ, মধুরতা, সৌরভ, তিক্ততা, দয়া, মাধুর্য, যৌবন, পটুত্ব, বীরত্ব ইত্যাদি।
বাক্যে গুণবাচক বিশেষ্যের উদাহরণ — সততা একটি মহৎ গুণ। তার স্বাস্থ্য সত্যিই অহংকার করার মতো।