↬ দেশ প্রেম
↬ জাতীয় জীবনে স্বদেশপ্রেমের গুরুত্ব
↬ মাতৃভূমির প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য
↬ স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম
Breath there the man with soul so dead
Who never to himself hath said?
"This is my own, my native land."
—Sir Walter Scott
যে জল হাওয়ার স্পর্শে বেঁচে–বেড়ে উঠা, যার গহ্বরে নাড়ি থাকে পোঁতা, ক্লান্তিতে
এলিয়ে দিই যেথা শরীর, ধুলো–কাদা মেখে একটু একটু করে বিকশিত হয় যেথা জীবনের
মুকুল সে–ই তো স্বদেশ। এর সমৃদ্ধি, এর কল্যাণ নিজেরই সমৃদ্ধি ও কল্যাণ। যা
উপলব্ধি ও বাস্তবায়ন করা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব অন্য কোনো প্রাণির পক্ষে নয়।
“স্বদেশের উপকারে নেই যার মন
কে বলে মানুষ তারে, পশু সেই জন।”
—ঈশ্বরগুপ্ত
স্বদেশকে ভালোবাসা মানে স্ব–জাতিকে ভালোবাসা। তার মানে বৃহত্তর অর্থে বিশ্বকে
ভালবাসা। সৃষ্টিকে ভালোবাসা মানে স্রষ্টাকে ভালোবাসা। আরাদ্ধ স্রষ্টাকে পেতে
হলে সৃষ্টির মধ্য দিয়েই তা পেতে হবে। কারণ —
“যখন ঈশ্বর ভক্তি এবং সর্বলোকে প্রীতি এক, তখন বলা যাইতে পারে যে, ঈশ্বরে
ভক্তি ভিন্ন দেশপ্রীতি সর্ব্বাপেক্ষা গুরুতর ধর্ম।”
—বঙ্কিমচন্দ্র
দেশপ্রেম মানুষের সহজাত ধর্ম। যে কোনো ব্যক্তি স্বদেশের মাটি, স্বদেশের পানি,
আকাশ, কৃষ্টি–কালচার, আনন্দ–বেদনা এইসব কিছুর মধ্যে শিশুকাল হতেই মাতৃস্নেহে
পুষ্ট হতে থাকে। তার দেহ, মন, বিশ্বাস, আদর্শ সবকিছুই স্বদেশের বিভিন্ন উপাদান
দ্বারা পুষ্ট। ফলে স্বদেশের জন্য তার যে প্রেম যে কৃতজ্ঞতার, কর্তব্য ও
দায়িত্বের জারক রসে সিক্ত। গর্ভধারিণী জননীকে সন্তান যেমন ভালোবাসে, তেমনি
দেশমাতৃকাকেও মানুষ জন্ম থেকেই শ্রদ্ধা করতে শিখে এবং ভালোবাসতে শুরু করে। দেশ
যতো ক্ষুদ্র বা যতো দরিদ্রই হোক না কেন, প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে তার
জন্মভূমি, তার দেশ সবার সেরা। তাই–তো মহাবীর নেপোলিয়নের উক্তি—
My country is my country, Right or wrong.
যে কোন ব্যক্তির সকল প্রাপ্তি তার স্বদেশের অবদান বলে স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ
হয়ে সে তার ধন, জন, মান এমনকি জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে দ্বীধা করে না। হয়ত
জাতীয় জীবনে সুখ–ঐশ্বর্যের দিনে তার প্রকাশ ঘটে না, কিন্তু দুঃখে–আঘাতে, সংকটে,
জাতির দুর্দিনে যখন বহিঃশত্রুর উল্লাসে দেশের স্বাধীনতা বিপর্যস্ত, যখন
পরাধীনতার বিষজ্বালায় জর্জরিত, মানুষ মুক্তি কামনায় উদ্বেল–অস্থির, তখন–ই আসে
মানুষের স্বদেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রের দীক্ষালগ্ন। তখনই দেশের মর্যাদার জন্য
দেশপ্রেমিক মানুষ অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দেয়।
A patriot man is a man who can sacrifice his life if need.
জাতির এ দুর্দিনে যে এগিয়ে আসতে পারে না, আত্নরক্ষা করতে যে ব্যস্ত, আসলে সে
জানে না দেশরক্ষা ব্যতিত আত্নরক্ষা নিষ্ফল। কেননা প্রদীপ জ্বালাতে চাইলে প্রদীপ
না ঢেকে বাতাস বন্ধ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ প্রদীপ ঢাকতে গেলে আলোটা যে
ঢেকে যায়। ফলে প্রদীপ জ্বালানো বৃথা। তেমনি দেশকে শত্রুর হাতে সমর্পন করে
আত্নরক্ষা করা প্রদীপ ঢাকার–ই নামান্তর। মাইকেল মধুসূদন দত্তের উক্তি —
জন্মভূমি রক্ষা হেতু কে ডরে মরিতে
যে ডরে ভীরু সে মূঢ়
শত ধীক্ তারে।
ধর্ম মানুষের অমূল্য সম্পদ, ধর্মই সাধারণ মানুষের কালচার। এই কালচার একটি জাতির
পরিচিতি। ধর্মের কাছে মানুষ পায় আত্মজ্ঞান, অতীন্দ্রিয় জিজ্ঞাসার আধ্যাত্মিক
ক্ষুধার শান্তি ও সান্ত্বনা। ধর্ম যুগে যুগে মানুষকে জুগিয়েছে ভক্তি, ক্ষমা,
করুণা আর আত্মনিবেদনের পথে সংহত জীবনের দীক্ষা। ধর্মের স্পর্শে মানুষ পেয়েছে নব
প্রাণ, অসভ্য বর্বর জাতি হয়েছে সভ্য। ধর্ম মানুষকে শিখিয়েছে দেশপ্রেম —
হুব্বুল ওয়াতান মিনাল ঈমান।
অর্থ : দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ
স্বদেশপ্রেম বিশ্ব প্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। কারণ যিনি দেশকে ভালবাসেন তিনি
বিশ্বকেও ভালোবাসেন। কারণ স্বদেশ তো বিশ্বেরই একটি অংশ। সবাই যদি নিজের দেশকে
ভালোবাসে তাহলে প্রকারান্তরে তা বিশ্বকেই ভালোবাসা হবে। কারণ শরীরের কোনো অংশে
ঘা হলে পুরো শরীরে সে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে। গোটা বিশ্ব একটি শরীর, এক একটি দেশ তার
এক একটি অঙ্গ। এ জন্যই বুঝি Gold Smith এমন উক্তি করেছিলেন —
The patriots boast were wine room.
His best country is all homes.
এই দেশ টিকে থাকলে, সুন্দর হলে মানব সভ্যতা টিকে থাকবে জীবন হবে মধুময়। এ কারণে অকৃপণভাবে উদার ও খাঁটিভাবে দেশকে ভালোবাসা সবার কর্তব্য। এমনকি নিজের
সম্পদ–পরিজন কিংবা সবচেয়ে মূল্যবান নিজের জীবনের থেকেও দেশকে বেশি ভালোবাসতে
হবে। আত্মপ্রেমকে ছাড়িয়ে যাবে স্বদেশপ্রেম। এডউইন আর্নন্ডের উক্তি স্মরণ করা
যায় —
“জীবনকে ভালোবাসি সত্য, কিন্তু দেশের চেয়ে বেশি নয়।”
কোন কিছুর লোভ কিংবা বিনিময়ে স্বদেশের প্রতি অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ পৃথিবীতে
যত মূল্যবান বস্তুই থাকুক না কেন তা কোন অর্থেই স্বদেশের তুল্য হতে পারে না।
হয়ত সে বস্তু সাময়িক চাহিদা পূরণ করবে কিন্তু দীর্ঘ সময় মানুষের প্রয়োজন মিটাতে
সক্ষম নয়। কাজেই সাময়িক সুখ – স্বচ্ছন্দের মোহে পড়ে স্বদেশের প্রতি উদাসীন থাকা
মূর্খতার নামান্তর। যুগসন্ধিক্ষণের কবি ঈশ্বরগুপ্তের ভাষায় —
মিছে মণি মুক্তা হেম
স্বদেশের প্রিয় প্রেম
তার চেয়ে রত্ন নাই আর।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্বদেশকে অবজ্ঞা করে বিদেশের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তিনি
তাঁর পুরো যৌবনকাল ব্যয় করেছেন বিদেশী ভাষার উৎকর্ষ সাধনে। কিন্তু তিনি কী
পেলেন? অশান্তি, গ্লানি, হতাশা আর ব্যর্থতা ছাড়া। শেষ পর্যন্ত তিনি প্রকৃত
শান্তি পেলেন স্বদেশের প্রতি আত্মনিবেদনের মাধ্যমে। ভার্সাইয়ের টেমস্ নদী কবির
তৃষ্ণা মিটাতে পারেনি, পেরেছিল স্বদেশের সেই কপোতাক্ষ নদ। তাইতো তাঁর মুগ্ধ
চিত্তের উচ্চারণ —
বহুদেশে দেখিয়াছি বহু নদ–দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?
দুগ্ধ স্রোতরূপী তুমি জন্মভূমি স্তনে।
জন্মভূমিকে ভালোবেসে পৃথিবীর মানচিত্রে উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত করা যায় স্বদেশকে।
কারণ ভালোবাসা– স্বার্থ ছাড়া, প্রাপ্তি–প্রত্যাশা ছাড়া শুধুই কল্যাণ আর মঙ্গল
কামনায় নিজেকে উৎসর্গ করা। ফলে একজন দেশপ্রেমিকের শ্রমে–ঘামে ও ভালোবাসায় যে
সোনালি ফসল ফলে তা দেশকে নিয়ে যায় অনেক উর্ধ্বে।
The man who loves his country
Can give the nation to a high stage in the world.
দেশপ্রেম মানুষকে মহৎ, উন্নত ও উদার করে, এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা দোষের নয়
গৌরব ও অহংকারের। কিন্তু অন্ধ দেশপ্রেম জাতির জন্য বিপজ্জনক। যার পরিণতি
অত্যন্ত ভয়াবহ। উগ্র দেশপ্রেম শুধু স্বদেশকেই ভালোবাসতে শেখায়, স্বজাতিকে
শ্রেষ্ঠত্বের মহীমার তাজ পরাতে চায়। এ কারণে অন্য দেশকে শোষণ ও নির্যাতন করতে
দ্বিধা করে না। ফলে বিশ্বপ্রেম মুখ থুবড়ে পড়ে। জাতিতে জাতিতে ভয়াবহ
সংঘর্ষ–সংঘাত চলতে থাকে। মানুষ ন্যায়–অন্যায় ভুলে গিয়ে লিপ্ত হয় ধ্বংসে। যার
ফলে অতি স্বাদেশিকতার কারণে দেশ পরিণত হয় শ্মশানে।
একটি দেশ পরিচালিত হয় রাজনীতির দ্বারা। যে দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে দেশপ্রেম
নামক এ গুণটি বর্তমান সে দেশ সমৃদ্ধ। কারণ দেশের জনগণের দায়িত্বপ্রাপ্ত
সদাজাগ্রত দেশপ্রহরী এই রাজনীতিবিদরা। যখন এরা মহৎ ও বৃহৎ এ দায়িত্ব নিজেদের
ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থের জন্য ব্যবহার করে তখন তা হয় মর্মান্তিক। বর্তমান
বিশ্বে বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ রোগ প্রকট আকারে ছড়িয়ে
পড়েছে। এদের সম্পর্কে আলবার্ট আইনস্টাইনের উক্তি —
“How long shall we tolerate the politician's hunger for power?”
যে রাজনীতিবিদ ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করে, সাধারণ নাগরিকের উচিত তাদের থাকে থেকে
দূরে থাকা। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে —
“মাতা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি মানুষের পরম শ্রদ্ধার বস্তু।”
শুধু শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে নয়, সে শ্রদ্ধেয় বস্তুর কল্যাণ সাধনে থাকতে হবে সদা প্রস্তুত। আমাদের কর্মের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে —
“I love thee still my country.”
তবেই প্রকৃত সুখ এবং শান্তি এসে ধরা দেবে আমাদের জীবনে। ভার্জিলের ভাষায় বলা যায়—
“সে–ই সবচেয়ে সুখী মানুষ, যে নিজের দেশকে স্বর্গের মতো ভালোবাসে।”
বিশ্বকে নিরাপদ, সুন্দর ও সার্থক বসবাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন বিশ্বের
প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে বিশ্বপ্রেম জাগ্রত করা। যা শুরু হবে স্বদেশপ্রেমের
মাধ্যমেই। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছেই নিতে হবে সে দীক্ষা —
“ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা।”
প্যারার নামগুলো লিখে দিলে best হতো
ReplyDeletekno....? apni na bhujle dekhte aschen kno...🙄
Deletevai Thank you❤️
ReplyDeleteভাই প্রথম যে বাংলা কবিতা দিলেন তা এক খানে কাজি নজরুল ইসলাম এর দেখেছি। কনটা
ReplyDeleteঠিক??