৯ম শ্রেণি : অ্যাসাইনমেন্ট : বিজ্ঞান : ৫ম সপ্তাহ
এ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ :
৩।
উপরের গ্লাসের পানিতে কয়েকটি দূষক পদার্থ (যেমন : অদ্রবণীয় ময়লা-আবর্জনা,
বালি, লবণ ইত্যাদি) মেখাও। এখন এই দূষিত পানিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন
করে বিশুদ্ধ কর।
ক) পানি বিশুদ্ধকরণ সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি লিখে উপস্থাপন কর।
খ) গ্রাসে তৈরিকৃত দূষিত পানি বিশুদ্ধ না করে পান করলে তোমার কী কী সমস্যা
হতে পারে? বিশ্লেষণ কর।
নমুনা সমাধান
(ক) পানি বিশুদ্ধকরণ সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি লিখে উপস্থাপন কর।
পানি ছাড়া পৃথিবীতে কোনো প্রাণীকূল বেঁচে থাকতে পারে না। এমনকি উদ্ভিদও পানি ছাড়া বেঁচে থাকে না। পানির অপর নাম জীবন বলা হয়। এজন্য পানিকে
'Water is called soul of life.'
কিন্তু পানি মাত্রই তা আমাদের জন্য পান করার যোগ্য নয়। আমাদের পান করার জন্য অবশ্যই বিশুদ্ধ এবং স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ পানি পান করতে হবে। নয়তো তা আমাদের জীবন এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে যাবে। আমরা মূলত বিভিন্ন উৎস থেকে পানি পেয়ে থাকি। সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— নলকূপ, বৃষ্টি, ঝরনা, পুকুর, খাল, বিল, নদী, সমুদ্র ইত্যাদি। এসব উৎসের সকল পানি আমাদের জন্য নিরাপদ কিংবা বিশুদ্ধ নয়। মোটামুটিভাবে বৃষ্টির পানিকে বিশুদ্ধ পানি হিসেবে ধরা হয়। যদিও তা বৃষ্টি শুরু হওয়ার কিছু সময় পর থেকে সংগ্রহ করতে হবে। পানিকে বিভিন্নভাবে বিশুদ্ধ করা যায়। নিম্নে পানি বিশুদ্ধকরণের কয়েকটি পদ্ধতি তুলে ধরা হল—
১. ফুটিয়ে : পানিকে ফুটিয়ে বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি হলো সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত এবং প্রাচীনতম পদ্ধতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, পানিকে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করতে সাধারণত ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা তার বেশি তাপমাত্রায় ৫ থেকে ২৫ মিনিট তাপ দিলে পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়।
২. ফিল্টার : পানিকে ফুটিয়ে বিশুদ্ধকরণ সম্ভব না হলে ফিল্টারিং করে পানিকে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ করতে হবে। পানিকে ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করার চেয়ে ফিল্টার করে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পাওয়া সহজ। কারণ যাদের গ্যাস অপ্রতুল তাদের জন্য এটি উপকারী। আবার, আজকাল বাজারে অনেকরকমের ফিল্টার পাওয়া যায়। তবে বাজারে পাওয়া সকল ফিল্টার মূলত ২ টা শ্রেণীতে বিভক্ত। একটি সিরামিক ফিল্টার এবং অপরটি হল সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত রিভার অসমোসিস ফিল্টার। পানিকে ফিল্টার করলে এটি পানির সকল ব্যাকটেরিয়া, জীবাণুর পাশাপাশি পানিকে দুর্গন্ধমুক্ত করে তোলে।
৩. ক্লোরিন ট্যাবলেট বা ব্লিচিং : পানির জীবাণু ধ্বংস করতে ক্লোরিণ বহুল ব্যবহৃত একটি রাসায়নিক। যদি পানি ফোটানো বা ফিল্টার করার ব্যবস্থা না থাকে তবে পানিকে ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে বিশুদ্ধ করা যেতে পারে। সাধারণত প্রতি ৩ লিটার পানিতে একটি ট্যাবলেট বা ১০ লিটার পানিতে ব্লিচিং রেখে দিলে পানি বিশুদ্ধ তথা নিরাপদ পানি হয়ে যায়।
৪. পটাশ বা ফিটকিরি : এক কলস পানিতে সামান্য পরিমাণ ফিটকিরি মিশিয়ে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিলে পানির ভেতর থাকা সকল ময়লা তলানিতে জমে যায়।
৫. সৌর পদ্ধতি : যেসব প্রত্যন্ত স্থানে পরিশোধিত পানি অন্য কোনও উপায় নেই সেখানে প্রাথমিক অবস্থায় সৌর পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে দূষিত পানিকে বিশুদ্ধ করতে কয়েক ঘন্টা তীব্র সূর্যের আলো ও তাপে রেখে দিতে হয়। এতে করে পানির সব ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে যায়।
৬. আলট্রাভায়োলেট রশ্মি : পানি বিশুদ্ধ করতে বা পানিকে জীবাণুমুক্ত করতে অতিবেগুনী রশ্মি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এতে করে পানির সব ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। তবে ঘোলা পানিতে বা রাসায়নিক যুক্ত পানিতে এই পদ্ধতি খুব একটা কাজে দেয় না। আবার এটি একটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি।
৭. আয়োডিন : এক লিটার পানিতে দুই শতাংশ আয়োডিনের দ্রবণ মিশিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখলেই পানি বিশুদ্ধ হয়ে যায়।
(খ) গ্রাসে তৈরিকৃত দূষিত পানি বিশুদ্ধ না করে পান করলে তোমার কী কী সমস্যা হতে পারে? বিশ্লেষণ কর।
আমাদের শরীরের শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ হল পানি৷ শরীরে উৎপন্ন বিভিন্ন বর্জ্য নিষ্কাশনে ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে পানি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ কারণে দিনে অন্তত আট — নয় গ্লাস কিংবা দুই — তিন লিটার পানি পান করা উচিত।
পান করার জন্য পানি হওয়া চাই বিশুদ্ধ বা নিরাপদ। আর্সেনিকমুক্ত নলকূপের পানি পান করা আমাদের জন্য নিরাপদ। আবার অগভীর নলকূপের চেয়ে গভীর নলকুপের পানি পান করা বেশি নিরাপদ। প্রাকৃতিক পানির ভেতর বৃষ্টির পানি পান করা নিরাপদ। তবে পুকুর, নদী, জলাশয়ের পানি সরাসরি পান করা আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। বাড়িতে পাকা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট না থাকলে এসবের ময়লা বর্জ্য উক্ত উৎসের পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করে ফেলতে পারে। আবার কলকারখানার নানা রকম বর্জ্য ও কেমিক্যাল পানিকে দূষিত করে ফেলতে পারে। শহর অঞ্চলের সাপ্লাইয়ের পানিও সরাসরি পান করা আমাদের জন্য অনিরাপদ। কারণ দূষিত পানি পান করলে আমাদের নানা রকম রোগ হতে পারে। এই ধরনের রোগগুলিকে সাধারণত পানিবাহিত রোগ বলে। পানিবাহিত রোগের মধ্যে— ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, জন্ডিস (হেপাটাইটিস —এ, হেপাটাইটিস —বি) ও কৃমি ইত্যাদি রোগ উল্লেখযোগ্য।
এজন্য গ্লাসে তৈরিকৃত দূষিত পানিকে বিশুদ্ধ না করে পান করলে উপরোক্ত রোগসমূহ হওয়ার আশংকা থেকে যাবে। তাই নিজেকে এসব পানিবাহিত রোগ সমূহ থেকে দূরে রাখলে অবশ্যই গ্লাসের পানিকে বিশুদ্ধ করে পান করতে হবে।
আরো দেখুন :
৬ষ্ঠ সপ্তাহের নমুনা সমাধান :
৫ম সপ্তাহের নমুনা সমাধান :
👍👍
ReplyDelete