আহমদ ছফা
আহমদ ছফা কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? — ৩০ শে জুন, ১৯৪৩ সালের চট্টগ্রামের গাছবাড়িয়াতে।
তাঁর শিক্ষাজীবনের পরিচিতি দাও। — রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর অর্জন করে পিএইচ.ডি গবেষণায় নাম লেখালেও শেষ পর্যন্ত তা কমপ্লিট করেন নি।
তাঁর মূল পরিচিয় কি? — একজন সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ।
তিনি কোন পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন? — উত্থানপর্ব।
তাঁর লেখা উপন্যাস সমূহের নামগুলো কী কী? — সূর্য তুমি সাথী (১৯৬৭), ওঙ্কার (১৯৭৫), একজন আলী কেনানের উত্থান পতন (১৯৮৯), মরণ বিলাস (১৯৯০), গাভি বিত্তান্ত (১৯৯৪), অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী (১৯৯৬), পুষ্প বৃক্ষ বিহঙ্গ পুরাণ (১৯৮৬)।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের নাম কী কী? — জাগ্রত বাংলাদেশ (১৯৭১), বুদ্ধি বৃত্তির নতুন বিন্যাস (১৯৭৩), বাঙালি মুসলমানের মন (১৯৭৬), সিপাহীযুদ্ধের ইতিহাস (১৯৮০), শতবর্ষের ফেরারী : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৯৭), যদ্যপি আমার গুরু প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক (১৯৯৭) ইত্যাদি।
'ওঙ্কার' উপন্যাসটি নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
— এটি মূলত ১৯৬৯ সনের গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি নিয়ে রচিত একটি উপন্যাস। তবে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালে। এই উপন্যাস অবলম্বনে বাংলা চলচ্চিত্র 'বাঙলা' নির্মিত হয়েছে। উপন্যাসে দেখা যায় যে— আবু নছরের বোবা মেয়েকে এই উপন্যাসের নায়ক বিবাহ করেন। আবু নছরের সাথে আবার আইয়ুব খানের সম্পর্ক থাকার আবু নছরের সে এক ধরনের ক্ষমতা লাভ করে। ভারতীয় পুরাণ অনুসারে উপন্যাসের নামকরন করেছেন লেখক। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার শব্দ প্রতীক 'ওঁ'—ই ওঙ্কার। সৃষ্টিকর্তা এই জগৎ সৃষ্টি করেছেন, বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। তাই বাংলাদেশের ব্রহ্মা হলো মুক্তিযুদ্ধ। আর এই যুদ্ধকালে যারা সাহায্য সহযোগিতা করেছেন, শহীদ হয়েছেন কিংবা অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা হলেন ব্রহ্মার অংশ বিশেষ। উপন্যাসে আরো দেখা যায় যে— আবু বছরের বোবা মেয়েটি তার কন্ঠ থেকে বাঙলা নামটি উচ্চারণ করানের মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক প্রতীকাশ্রয়ে এ কথাই বলেছেন, প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রত্যাশা অনুসারেই জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের। আবু নছর পাকিস্তানের অনুগত এবং পাকিস্তান সরকারের আদর্শ লালন করেন। আইয়ুব খান সরকার উন্নয়নের নামে বাঙালিদের উপর জুলুম করেন। আবু নছরের জামাতা এবং বোবা মেয়েটাও প্রায় একই অবস্থা। সে পলায়নকামী বাঙালি। একদিকে বাঙালিরা সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং করেন তাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য। অন্যদিকে এই বোবা মেয়েটির স্বামী এসব দেখেও না দেখার ভান করে, শুনেও না শুনার ভান করে। অথচ বাঙালির ইতিহাসে ষাটের দশক ছিল রাজপথে জনজোয়ায়ের দশক। এই রাজপথে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় আসাদ। আসাদ শহীদ হবার পর থেকে বাঙালি জনতা ফুলে ফেঁসে ওঠে। রাজপথ যেন পরিণত হয় এক একটি উত্তাল গণ জোয়ারে। নানা ধরনের মিছিল আর স্লোগানে মুখরিত করে বাঙালি। কিছু ভীরু আর কাপুরুষ মানুষ ছাড়া সবারই স্বতস্ফূর্ত অংশ ছিল এতে। বাঙালি নারীরাও যেন ঘরের চারদেয়াল ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইতো এই গণমিছিলে। আবু নছরের এই বোবা মেয়েটির মনে তেমনি বাঙালি সত্তার জন্ম নেয়। তার বাবা কিংবা স্বামীর মনে এসব কোনো আবেদন সৃষ্টি না করলেও তার মনে দারুণ প্রভাবিত হয়েছিল এসব। উপন্যাসের মধ্যে এমন করে বলা হয়েছে— “আচানক বোবা বৌ জানলা সমান লাফিয়ে 'বাঙলা' শব্দটি অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে উচ্চাডণ করলো। তার মুখ দিয়ে গল গল করে রক্ত বেরিয়ে আসে। তার মেঝেয় সজ্ঞা হারিয়ে পড়ে থাকে।” বোবা মেয়েটার মৃত্যু হয়। কিন্তু এই মৃত্যু কোনো সাধারণ মৃত্যু নয়। প্রতীকী মৃত্যু। তার যে রক্ত ঘরের মেঝেয় ভেসে যায়, সেই রক্ত থেকেই জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি।
'ওঙ্কার' উপন্যাসের অবলম্বনে কোন চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়? — বাঙলা।
'অলাতচক্র' কী? — এটি আহমদ ছফা রচিত একটি উপন্যাসের নাম। ১৯৮৫ সালে তৎকালীন 'নিপুণ' নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রথম মুদ্রিত হয় এটি। পরে সেটি পরিমার্জন করে ১৯৯৩ সালে প্রায় নতুন করেই লেখা হয়। এটি একটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস। এই উপন্যাসে লেখক মুক্তিযু্দ্ধ নিয়ে বাইরের দেশগুলোর অংশগ্রহণকে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধে সমর্থনদানকারী দেশসমূহের স্বার্থের দিকটি দেখেছেন। এই উপন্যাসের কয়েকটি চরিত্র হলো— তায়েবা, দানিয়েল ও জাহিদুল ইত্যাদি।
আহমদ ছফার অন্যসব গ্রন্থসমূহের ভেতর উল্লেখযোগ্য কোনগুলো?
- গল্প : নিহত নক্ষত্র (১৯৬৯)।
- কবিতা : জল্লাদ সময় (১৯৭৪), দুঃখের দিনে দোহা (১৯৭৫)।
- অনুবাদ : তানিয়া (১৯৬৭), ফাউস্ট (১৯৮৬), বাট্রান্ড রাসেল সংশয়ী রচনাবলী।
- শিশুতোষ : দোলা আমার কনক চাপা (১৯৬৮)৷ গো হাকিম (১৯৭৭)।
তিনি কি কি পুরস্কার লাভ করেন? — লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৫), এটি তিনি প্রত্যাখান করেছেন ; সাদাত আলী আকন্দ পুরস্কার, এটিও তিনি প্রত্যাখান করেছেন ; ইতিহাষ পরিষদ পুরস্কার (১৯৮০)।
তিনি কবে মৃত্যুবরণ করেন? — ২০০১ সালের ২৮ শে জুলাই।