আসকার ইবনে শাইখ
আসকার ইবনে শাইখ কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? — ১৯২৫ সালের ১০ ই মার্চ, ময়মনসিংহের গৌরিপুরে।
তিনি মূলত কি হিসেবে পরিচিত? — সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত। তবে নাট্যকার হিসেবেও তার যথেষ্ট পরিচিতি আছে।
তাঁর প্রকৃত নাম কী? — ড. এম. ওবায়দুল্লাহ।
তিনি কর্মজীবনে কি করতেন? — ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে শিক্ষকতা করতেন।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের পরিচয় দাও।
নাটক : বিরোধ (১৯৪৭), পদক্ষেপ (১৯৪৮), বিদ্রোহী পদ্মা (১৯৪৯), দুরন্ত ঢেউ (১৯৫১), শেষ অধ্যায় (১৯৫২), বিল বাওড়ের ঢেউ (১৯৫৫), এপার ওপার (১৯৫৫), প্রতীক্ষা (১৯৫৭), লালন ফকির (১৯৫৯), কর্ডোভায় আগে (১৯৮০), রাজপুত্র (১৯৮০), মেঘলা রাতের তারা (১৯৮১), কন্যা জায়া জননী (১৯৮৭)।
গানের সংকলন : নবজীবনের গান (১৯৫৯)
গল্প সংকলন : কালো রাত তারার ফুল (১৯৮২)।
প্রবন্ধ : গবেষণা বাংলা মঞ্চ নাটকের পশ্চাৎভূমি (১৯৮৬)।
তাঁর করেয়কটি নাটকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
বিরোধ : গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে ১৯৪৬ সালে এটি রচনা করা হয় এবং ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হয়। মূলত মুসলিম পাত্রপাত্রী এবং মুসলিম সমাজ পরিবেশের সামাজিক ও পারিবারিক দ্বন্দ উঠে এসেছে এই নাটকে। আহমদ, আজিজ, হাবিবা প্রধান চরিত্র এই নাটকের। নাটকের ভিতর দেখা যায় যে— আহমদ এবং আজিজ পরিবারের দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ এই এই দুই পরিবারের ছেলে মেয়ে মাহবুব এবং হাবিবার বিয়ের মাধ্যমে মিটে যায়।
পদক্ষেপ : এটি ১৯৪৭ সালে রচিত হয় এবং ১৯৫২ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পূর্বে এর নাম ভাবা হয়েছিল 'কংকাল'। আভিজাত্য এবং বংশমর্যাদায় অন্ধ মুসলিম পরিবারের মধ্য থেকেই আসে প্রতিবাদ, অবশেষে মানুষের মর্যাদার প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়৷ জমিদার জাফর চৌধুরী সেই বংশমর্যাদা ও আভিজাত্যে নিজপুত্র আহসান এবং পালক পুত্র শহীদের দ্বারা ধ্বংস চ্যালেঞ্জপ্রাপ্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়৷ এই নাটকের উল্লেখযোগ্য চরিত্র : জাফর, আহসান, শহীদ, সালাম ও আমিনা ইত্যাদি।
বিদ্রোহী পদ্মা : ১৯৫২ সালে 'বিদ্রোহী পদ্মা' নাটকটি রচিত হয় এবং পরের বছর ১৯৫৩ সালে এটি প্রকাশিত হয়। অনেকে মনে করেন 'বিদ্রোহী পদ্মা' নাটকটি হলো লেখকের জীবনের শ্রেষ্ঠ নাটক। পদ্মা নদীর তীরবর্তী মানুষের জীবনযাপন এবং জীব ভাষা এই নাটকের মূল উপজীব্য। রহমত, অর্জুন, কৈবর্ত, ঈশান, রফিক, মাস্টার, দেওয়ান, নায়েব, তরফদার ইত্যাদি এই নাটকের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। পদ্মার চর জেগে উঠলে জমিদার সেটা দখল করতে চায়। এই জন্যে কৌশলে জমিদার হিন্দু আর মুসলিমের ভেতর দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেয়। কিন্তু পরিশেষে হিন্দু মুসলিম সম্মিলিত পরাশক্তির কাছে তার অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
বিল বাওড়ের ঢেউ : এটি ১৯৫৩ সালে রচিত হয় কিন্তু ১৯৫৫ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়৷ মূলত জেলে সম্প্রদায়ের জীবনভিক্তিক নাটক এটি। জেলে জীবনের কষ্ট এবং সামাজিক সমস্যা দুটোই আছে এখানে। মহাজন নিতাই দাস কর্জের মাধ্যমে সবাইকে বাঁচতে চায়। যুবক সহদেব সমবায় গঠনের মাধ্যমে তা থেকে মুক্তির আশা দেয়। মহাজন নিতাই দাসের মেয়ে গৌরি আবার সহদেবকে ভালবাসে। সংঘাতময় অবস্থার অবসানের মাধ্যমে পরিশেষে তাদের মিলন ঘটে।
আগ্নেয়গিরি : এটি একটি ঐতিহাসিক নাটক। ১৯৫৪ সালে রচিত হয় এবং ১৯৫৫ সালে প্রকাশ করা হয়। ইংরেজ আমলে রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহ কেন্দ্রীয় নাটক এটি। ফকির মজনু শাহ, ভবানী পাঠক, রানি ভবানী, দেবী চৌধুরানীর যৌথ সমন্বিত বিদ্রোহে উত্তরাঞ্চলে যে কৃষক জাগরণ ঘটেছিল সেখানে অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্মেষ ঘটে। ঐতিহাসিক ব্যক্তি নামকই এ নাটকে চরিত্রাবলি নামকরণ করা হয়েছে।
রক্তপদ্ম : ঐতিহাসিক সিপাহি বিদ্রোহের (১৮৫৭) এবং শতবর্ষে (১৯৫৭) এ নাটক রচিত এবং ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয়। এই নাটকি ঐতিহাসিক কিন্তু ওখানল চরিত্রাবলির প্রেমসংযোগ কম গুরুত্ব পায় নি। ইংরেজ সৈন্য সুবেদার শামসুদ্দিন এবং কানপুরের নর্তকী আজিজনের প্রেমপর্ব এই নাটকে বিশেষ গুরুত্ব পেলেও ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিপাহি — জনতার সমন্বিত প্রতিরোধই নাটকে প্রাধান্য পেয়েছে বেশি।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি কোন কোন পুরস্কারে ভূষিত হন? — বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬১), একুশে পদক (১৯৮৬), ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার (১৯৮৭), টেনিশিয়ান পুরস্কার (১৯৮৯)।
আসকার ইবনে শাইখ কবে মৃত্যুবরণ করেন? — ১৮ ই মে, ২০০৯ সালে।