যতি বা ছেদচিহ্নের ব্যবহার
কমা { পাদচ্ছেদ ( , ) }
(ক) বাক্য পাঠকালে সুস্পষ্টতা বা অর্থ - বিভাগ দেখানোর জন্য যেখানে স্বল্প বিরতির প্রয়োজন, সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন— সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে।
(খ) পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসাথে বসলে শেষ পদটি ছাড়া বাকি সবগুলোর পরেই কমা বসবে। যেমন— সুখ, দুঃখ, আশা, নৈরাশ্য, একই মালিকার পুস্প।
(গ) সম্বোধনের পরে কমা বসাতে হয়। যেমন— রহিম, এদিকে এসো।
(ঘ) জটিল বাক্যের অন্তর্গত খণ্ডবাক্যের পরে কমা বসে। যেমন— কাল যে লোকটি এসেছিল, সে আমার পূর্ব পরিচিত।
(ঙ) উদ্ধরণ চিহ্নের পরে কমা বসাতে হয়। যেমন— সাহেব বললেন, "কাল আপনার ছুটি।"
(চ) মাসের তারিখ লিখতে বার ও মাসের পরে কমা বসে। যেমন— ১৬ই পৌষ, বুধবার, ১৩৩৯ সন।
(ছ) বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পরে কমা বসে। যেমন— ৬৮, নবাবপুর রোড, ঢাকা—১০০০।
(জ) নামের পরে ডিগ্রিসূচক পরিচয় সংযোজিত হলে সেগুলোর প্রত্যেকটির পরে কমা বসবে। যেমন— ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, এম.এ.পি—এইচ.ডি।
(ঝ) সমজাতীয় পদ পাশাপাশি বসলে তাদের পরে কমা বসে। যথা— হাঁস, মুরগী, ভেড়া, ছাগল গৃহপালিত পশু। (বিশেষ্য অর্থে); অর্ক চালাক, চতুর, সাহসী ও ন্যায়পরায়ণ। (বিশেষণ অর্থে)।
সেমিকোলন ( ; )
(ক) কমা অপেক্ষা বেশি বিরতির প্রয়োজন হলে, সেমিকোলন বসে। যেমন— সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ আমরা; এ মায়ার বাঁধন কি সত্যিই দুচ্ছেদ্য?
(খ) একাধিক স্বাধীন বাক্যকে একটি স্বাধীন বাক্যে লিখলে সেগুলোর মাঝখানে সেমিকোলন বসে। যেমন— তিনি শুধু তামাশা দেখিতেছিলেন, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে পড়ে।
দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ( । )
বাক্যের পরিসমাপ্তি বেঝাতে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করতে হয়। যথা— শীতকালে এ দেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে।
প্রশ্নবোধক চিহ্ন ( ? )
বাক্যে কোনো কিছু জানার প্রয়োজন থাকলে বা জিজ্ঞাসা করার কিছু থাকলে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে। যেমন— তুমি এখন এলে? সে কি যাবে?
বিস্ময় ও সম্বোধন চিহ্ন ( ! )
হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে হলে সম্বোধন পদের পরে ( ! ) এই চিহ্নটি বসে। যেমন— আহা! কী চমৎকার দৃশ্য। জননী! আজ্ঞা দেহ মোরে যাই রণস্থলে।
নোট :
কিন্তু আধুনিক নিয়মে সম্বোধন স্থলে কমা চিহ্নের ব্যবহার করা হয়।
কোলন ( ; )
একটি অপূর্ণ বাক্যের পরে অন্য একটি বাক্যের অবতারণা করতে হলে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন— সভায় সাব্যস্ত হলো : একমাস পরে নতুন সভাপতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ড্যাস চিহ্ন ( — )
(ক) কোনো কথার উদাহরণ, দৃষ্টান্ত বা বিস্তার বুঝাতে ড্যাস ব্যবহৃত হয়। যেমন— গঠন অনুসারে শব্দ ২ প্রকার— মৌলিক শব্দ, সাধিত শব্দ।
(খ) যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার বেশি সমন্বয় বা সংযোগ বোঝাতে ড্যাস চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন— তোমরা দরিদ্রের উপকার কর— এতে তোমাদের সম্মান যাবে না—বাড়বে।
কোলন ড্যাস ( :— )
উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত প্রয়োগ করতে হলে কোলন এবং ড্যাস চিহ্ন একসাথে ব্যবহৃত হয়। যেমন— পদ পাঁচ প্রকার :—
বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় ও ক্রিয়া।
হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন ( — )
সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখানোর জন্য হাইফেনের ব্যবহার হয়। যেমন— এ আমাদের শ্রদ্ধা— অভিনন্দন, আমাদের প্রীতি—উপহার।
ইলেক ( ' ) লোপ চিহ্ন
কোনো বর্ণ বিশেষের লোপ বোঝাতে বিলুপ্ত বর্ণের জন্য ( ' ) লোপচিহ্ন দেওয়া হয়। যেমন—
মাথার 'পরে জ্বলছে রবি। ('পরে = ওপরে)
পাগড়ি বাঁধা যাচ্ছে কা'রা? (কা'রা = কাহারা)
উদ্ধরণ চিহ্ন ( " " )
বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে এই চিহ্নের ভেতর অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। যথা— শিক্ষক বললেন, "গতকাল সিলেটে ভয়ানক ভূমিকম্প হয়েছে।"
ব্রাকেট বা বন্ধনী চিহ্ন ( ), { }, [ ]
এই তিনটি চিহ্নই গণিত শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে প্রথম বন্ধনীটি বিশেষ ব্যাখ্যামূলক অর্থে সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন— ত্রিপুরায় (বর্তমানে কুমিল্লা) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। [এগুলো যতি বা ছেদ চিহ্ন নয়।]
ব্যাকরণিক চিহ্ন
বিশেষভাবে ব্যাকরণে নিম্নলিখিত চিহ্নগুলো ব্যবহৃত হয়। যেমন—
(ক) ধাতু বোঝাতে ( √ ) চিহ্ন : √স্থা = স্থা ধাতু
(খ) পরবর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন বোঝাতে ( < ) চিহ্ন : জাঁদরেল < জেনারেল।
(গ) পূর্ববর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন বোঝাতে ( > ) চিহ্ন : গঙ্গা > গাঙ
(ঘ) সমানবাচক বা সমস্তবাচক বোঝাতে সমান ( = ) চিহ্ন : নর ও নারী = নরনারী