ব্যাকরণ : যতি বা ছেদচিহ্ন

যতি বা ছেদচিহ্ন

যতি বা ছেদ চিহৃ : বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে বোঝার জন্য বাক্যের মধ্যে বা বাক্যের শেষে কিংবা আবেগ (হর্ষ, বিষাদ), জিজ্ঞাসা ইত্যাদি প্রকাশ করার জন্য বাক্য গঠনে যেভাবে বিরতি দিতে হয় এবং লেখার সময় তা দেখানোর জন্য যেসব সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে যতি বা ছেদচিহ্ন বলে।

প্রাচীন বাংলায় যতি বা ছেদ চিহ্নের  ব্যবহার : 
প্রাচীন বাংলায় আজকের মতো বিচিত্র যতি বা ছেদ চিহ্ন ছিল না। এক দাঁড়ি ( । ) এবং দুই দাঁড়ি ( ।। ) ছিল। এক দাঁড়ি দিয়ে কমার মতো অল্প বিরাম এবং দুই দাঁড়ি দিয়ে অধিক বিরাম বোঝাতো। যেমন—

'মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস ভনে শুনে পুণ্যবান।।' 

বাংলায় যতি বা ছেদ চিহ্নের প্রবর্তক : 
বাংলায় যতি বা ছেদ চিহ্নের প্রবর্তক হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগরের আগে বাংলা গদ্য কিংবা পদ্য কোথাও যথাযথ যতিচিহ্ন ব্যবহার করা হতো না। শুধু পূর্ণচ্ছেদ বা দাঁড়িজ্ঞাপক চিহ্নটি (এক দাঁড়ি বা দুই দাঁড়ি) ছিল। বিদ্যাসাগর গদ্য রচনাকালে বক্তব্য যথাযথভাবে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হন। তখন তিনি গদ্যের মধ্যে শ্বাসপর্ব ও অর্থপর্ব ভাগ করে ইংরেজি গদ্য থেকে সবগুলো যতি বা ছেদ চিহ্ন বাংলায় ব্যবহার করেন। যেহেতু বাংলায় আগে থেকে পূর্নচ্ছেদ বা দাঁড়ি (। )  ছিল, তাই তিনি নতুন করে ফুলস্টপ ( . ) ব্যবহার করেন নি। বিদ্যাসাগর যে যতিচিহ্নসমূহ বাংলায় ব্যবহার করেন আজো এর সবগুলোর বাংলা নাম হয় নি। কোনোটির আবার বাংলা নাম হলেও তা ইংরেজি নামেই বেশ পরিচিত। 

যতি চিহ্নসমূহের বিরতিকালের সূত্র
থামার প্রয়োজন নেই : হাইফেন, ইলেক, ডট, ব্রাকেট। 

১ সেকেন্ড থামতে হবে : দাঁড়ি, বিস্ময়, প্রশ্নবোধক, কোলন, কোলন-ড্যাস, ড্যাস।

১ বলতে যে সময় লাগে : কমা, উদ্ধরণ চিহ্ন।

১ বলার দ্বিগুণ সময় : সেমিকোলন। 


নিম্নে বিভিন্ন প্রকার যতিচিহ্নের নাম এবং তাদের আকৃতি ও বিরতিকালের পরিমাণ প্রকাশ করা হলো—

যতিচিহ্নের নাম চিহ্ন বিরতিকাল
কমা , ১ বলতে যে সময় প্রয়োজন
সেমিকোলন ; ১ বলার দ্বিগুণ সময়
দাঁড়ি এক সেকেন্ড
প্রশ্নবোধক চিহ্ন ?
বিস্ময় ও সম্বোধন চিহ্ন !
কোলন :
কোলন ড্যাস
হাইফেন - থামার প্রয়োজন নাই
ইলেক বা লোপ চিহ্ন , থামার প্রয়োজন নাই
উদ্ধরণ চিহ্ন " " 'এক' উচ্চারণে যে সময় লাগে
ব্রাকেট / বন্ধনী চিহ্ন ( ) থামার প্রয়োজন নাই
ব্রাকেট / বন্ধনী চিহ্ন { } থামার প্রয়োজন নাই
ব্রাকেট / বন্ধনী চিহ্ন [ ] থামার প্রয়োজন নাই
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post