৯ম শ্রেণি : কৃষি শিক্ষা : ৮ম সপ্তাহ
একজন ধানচাষী চটের বস্তায় ধানের বীজ সংরক্ষণ করে বীজতলায় বপন করলে খুব কম সংখ্যক বীজ অংকুরিত হয়। অন্যদিকে এক জন দুগ্ধ খামার মালিক বছরব্যাপী তার গাভীগুলোকে কাঁচা ঘাস সরবরাহ করেন। কিন্তু হঠাৎ বন্যার কারণে তার গাভীগুলো মারাত্মক খাদ্য সংকটে পড়ে। উপরোক্ত ধানচাষী ও দুগ্ধ খামারী কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে বীজ ও ঘাস সংরক্ষণ করলে এ সংকটে পড়তেন না। এ ব্যাপারে তোমার মতাাামতসহ একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।
নমুনা সমাধান
বীজ ও পশু খাদ্য সংরক্ষণের ধারণা : কোনো খাদ্যের গুণাগুণ ও মান অক্ষুণ্ণ রেখে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করে রেখে দেওয়াকে খাদ্য সংরক্ষণ বলে। আবার তৈরি করা পশুখাদ্যের গুনাগুন অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য গুদামজাত করার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়। বীজ সংরক্ষণ বলতে বীজের উৎপাদন, শুকানো, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মান নিয়ন্ত্রণ, বিপণন যাবতীয় কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করাকে বুঝায়।
বাংলাদেশে বীজ সংরক্ষণের অনেক প্রচলিত পদ্ধতি আছে। যদি উল্লিখিত ধানচাষি নিম্নোক্ত উপায়ে ধানের বীজ সম্পন্ন করত তাহলে আমার মতে তার ধানের বীজ গুলোর সবই অংকুরিত হতো। যেমন:
১) বীজ শুকানো ও চটের বস্তায় সংরক্ষণ : বীজ সংরক্ষণের পূর্বে অবশ্যই বীজ ভালোভাবে শুকিয়েছে কিনা পরখ করে দেখতে হবে। এদেশে সাধারণত রোদে বীজ শুকানো হয়। বীজে কামড় দিয়ে যদি "কট" করে আওয়াজ হয় বুঝতে হবে বীজ ভালোকরে শুকিয়েছে। অতঃপর বীজকে চটের ছালায় বস্তাবন্দি করে গোলা ঘরে রাখতে হবে। বীজ পোকার উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্য বীজের বস্তায় নিম পাতা, নিমেরশিকড়, বিষ কাটালি, আপেল বীজের গুঁড়া মেশানো যেতে পারে।
২) ধানগোলায় সংরক্ষণ : ধান গোলার আয়তন বীজের পরিমাণের উপর নির্ভর করে বানানো হয়।বীজ রাখার আগে ধানগোলার ভেতরে ও বাইরে গোবর ও মাটির মিশ্রণের প্রলেপ লাগিয়ে বীজ রাখার উপযুক্ত করতে হবে। বীজ এমনভাবে ভরতে হবে যেন এর ভেতরে বাতাস না থাকে। তাই বীজ রাখার পর ধানেরগোলার মুখ গোবর ও মাটির মিশ্রণ দিয়ে লেপে দিতে হবে।
৩) ডোলে সংরক্ষণ : ডোল ধানগোলার চেয়ে কমধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বীজ পাত্র যা বাঁশ বা কাঠ দিয়ে গোলাকার ভাবে তৈরি করা হয়। ধান গোলার মতই ভেতরে ও বাইরে গোবর ও মাটির মিশ্রণের প্রলেপ লাগিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে বীজ রাখার উপযুক্ত করতে হবে।
৪) মটকায় সংরক্ষণ : মটকা মাটিনির্মিত একটি গোলাকার পাত্র। এটা অনেক পুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হয় যাতে টোকা লাগলে ভেঙে না যায়। গোলাঘরের মাচার নির্দিষ্ট স্থানে মটকা রেখে এর ভিতরে শুকনো বীজ পুরোপুরি ভরে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে প্রলেপ দিয়ে বায়ুরোধক করতে হবে।
নিম্নলিখিত উপায়ে পশুখাদ্য সংরক্ষণ করলে উপরোক্ত দুগ্ধখামারি দুর্যোগকালে সমস্যায় পড়তেন না।যেমন :
১) হে তৈরির মাধ্যমে সবুজ ঘাস সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
ক) হে তৈরির জন্য শিম জাতীয় ঘাস উপযোগী
খ) ফুল আসার সময় ঘাস কাটতে হবে এবং ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে আদ্রতা ১৫-২০% এর মধ্যে রাখতে হবে।
গ) ঘাস শুকিয়ে মাচার উপর বা চালাঘরে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
২) সাইলেজ তৈরির মাধ্যমে সবুজ ঘাস সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
ক) সাইলেজ তৈরির জন্য ভুট্টা, নেপিয়ার, গিনিঘাস উপযোগী।
খ) ফুল আসার সময় রসাল অবস্থায় ঘাস কাটতে হবে।
গ) ঘাস কেটে বায়ুনিরোধক স্থানে বা সাইলো পিটে রাখা যেতে পারে এবং সাথে ঝোলাগুড়ের দ্রবণছিটিয়ে দিতে হবে।
৩) খড় তৈরির মাধ্যমে ফসলে বর্জ্য সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ কৃষি পরিবারে গরুকে দৈনিক ৩-৪কেজি শুকনো খড় খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয়।
ক) শস্যগাছ ক্ষেত থেকে কাটার পর মাড়াই করে শস্যদানা আলাদা করতে হবে।
খ) বর্জ্যগাছ গুলো ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে আদ্রতা ১৫-২০% এর এনে খড় তৈরি করতে হবে এবং খড় গাদা করে রাখা যায়।
গ) ধানাশস্য ও তৈলবীজের উপজাত সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
অতএব উল্লিখিত নিয়মাবলি মেনে বীজ ও পশুখাদ্য সংরক্ষণ করলে উপরোক্ত ধানচাষি ও দুগ্ধখামারী লাভবান হতে পারতেন।
আরো দেখুন :
৯ম সপ্তাহের নমুনা সমাধান :
৮ম সপ্তাহের নমুনা সমাধান :