৯ম শ্রেণি : অর্থনীতি : ৮ম সপ্তাহ : ২০২১

৯ম শ্রেণি : অর্থনীতি : ৮ম সপ্তাহ

‘আমরা কি উৎপাদন করবো? উৎপাদনে কি প্রযুক্তি ব্যবহার করবো? - এই প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদানই হচ্ছে একেক দেশের, একেক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান কাজ।’ -এ সম্পর্কে ৩০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রবন্ধ লিখ।

সংকেত :
  • সূচনা
  • বিভিন্ন অর্থব্যবস্থার বর্ণনা
  • বিভিন্ন অর্থব্যবস্থার মধ্যে তুলনা
  • উপসংহার

নমুনা সমাধান

সূচনা : একটি দেশের অর্থব্যবস্থা কেমন হবে এবং কীভাবে তাদের অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালিত হবে তা নির্ভর করে সে দেশের জনগণের জীবনযাত্রারমান ও আর্থিক কার্যাবলী উপর। আমরা জানি, অর্থনীতি হচ্ছে চয়ন বা নির্বাচনে বিজ্ঞান। এটা আমরা শিখেছি যে অর্থনীতি সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধনের জন্য সঠিক পথ বাছাইয়ের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালায়।

বিভিন্ন অর্থব্যবস্থার তুলনা :
১) ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা : যে অর্থব্যবস্থা ব্যক্তিমালিকানা নির্ভর করে গড়ে উঠে তাকে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বলে। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য :

ক) সম্পদে ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠিত।
খ) একজন উদ্যোক্তা ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন।
গ) এই অর্থব্যবস্থায় অবাধ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান।
ঘ) শ্রমিকরা নানা ভাবে  শোষিত হয়।
ঙ) ভোক্তার স্বাধীনতা পরিলক্ষিত হয়।
চ) উদ্যোক্তা সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করেন।

২) সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা : যে অর্থব্যবস্থায় দেশের যাবতীয় সম্পদের মালিকানা রাষ্ট্রের মালিকানায় থাকে, রাষ্ট্র সম্পূর্ণ অর্থব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে তাকে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বলা হয়। এর বৈশিষ্ট্য :

ক) সম্পদে ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠিত।
খ) রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকে বিধায় অবাধ প্রতিযোগিতা দেখা যায়না।
গ) ভোক্তা স্বাধীনতার অস্তিত্ব নেই।
ঘ) শ্রমিক শোষণ তুলনামূলক কম।
ঙ) উদ্যোগ গ্রহণে সরকার বা রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।
চ) সমাজতন্ত্রে ব্যক্তি মুনাফার অনুপস্থিতি বিদ্যমান।

৩) মিশ্র অর্থব্যবস্থা : সমাজতান্ত্রিক ও ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার সমন্বয়ে গড়ে উঠে মিশ্র অর্থব্যবস্থা। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই এই অর্থব্যবস্থা প্রচলিত। এর বৈশিষ্ট্য :
ক) সম্পদের ব্যক্তি ও সরকারি মালিকানা প্রতিষ্ঠিত।
খ) মিশ্র অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, ব্যবসা বাণিজ্য, বন্টন, ভোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হয়।
গ) ভারী শিল্প ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

৪) ইসলামিক অর্থব্যবস্থা : ইসলামি শরীয়তের উপর ভিত্তি করে যে অর্থব্যবস্থা পরিচালিত হয়, তাকে ইসলামিক অর্থব্যবস্থা বলে। এর বৈশিষ্ট্য :
ক)ইসলামে ৫টি স্তম্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। 
খ)ঋণের ক্ষেত্রে সুদমুক্ত জামানত ব্যবস্থা প্রচলিত।
গ)এই অর্থব্যবস্থায় গরীবদের জন্য যাকাতে ব্যবস্থা রয়েছে।

অর্থব্যবস্থা সমূহের তুলনামূলক যৌক্তিক আলোচনা : বর্তমান সময়ে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বেশি জনপ্রিয়। ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র অর্থব্যবস্থার সংমিশ্রণে মিশ্র অর্থব্যবস্থা গড়ে উঠে। ধনতন্ত্রে ব্যক্তিমালিকানার প্রভাব ও সমাজতন্ত্রে রাষ্ট্রমালিকানার প্রভাব যাকে আমরা মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ বলতে পারি। এইসব অর্থব্যবস্থা বাদে ইসলামি অর্থব্যবস্থা আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করে। তবে কোন দেশে কি উৎপাদন করা হবে উৎপাদনে কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এবং উৎপাদিত পণ্য কাদের জন্য প্রযোজ্য হবে তার উপর নির্ভর করে এসব  অর্থব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়।

মন্তব্য : এভাবে ইসলামিক, ধনতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বৈশিষ্ট্যগত কারণে একে অপরের চেয়ে পৃথক। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পরিমাণ  মাত্রাতিরিক্ত। আবার সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে তা খুবই সংকীর্ণ। ইসলামিক অর্থব্যবস্থা একটি তত্ত্বীয়  অর্থব্যবস্থা যা অর্থনীতিকে কাম্য স্তরে সীমিত করে।


আরো দেখুন :

৮ম সপ্তাহের নমুনা সমাধান :
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post