ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত কবে জন্মগ্রহণ করেন? — ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে।
তিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? — শিয়ালডাঙ্গা, কাঁচড়াপাড়া, পশ্চিমবঙ্গ।
তিনি মূলত কি ছিলেন? — কবি ও সাংবাদিক।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত কি নামে সমধিক পরিচিত? — ঈশ্বর গুপ্ত নামে।
তিনি নিজের সাধনায় কোন কোন বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন? — ইংরেজি, সংস্কৃত, বেদান্ত, দর্শন এবং তন্ত্রশাস্ত্রে।
তিনি কোন পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে খ্যাত ছিলেন? — সংবাদ প্রভাকর। (সাপ্তাহিক এবং দৈনিক উভয়ই।)
বাংলা ভাষায় প্রথম প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা কোনটি? — দৈনিক সংবাদ প্রভাকর।
সংবাদ প্রভাকরের পরিচয় দাও।
— 'সংবাদ প্রভাকর' (১৮৩১)একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। এটি প্রকাশের কিছু দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু ১৮৩৬ সালে পুনর্বার ছাপা হয়। ১৮৩৯ সালে বাংলা ভাষার প্রথম দৈনিক হিসেবে 'সংবাদ প্রভাকর' আত্মপ্রকাশ করে। সেকালের বহু খ্যাতনামা বরেণ্য ব্যক্তিরা এখানে লিখতেন। বঙ্কিমচন্দ্র এবং দীনবন্ধু মিত্রের সাহিত্যিক জীবনের সূচনা এই পত্রিকা দিয়েই শুরু হয়। ঈশ্বরচন্দ্র এই পত্রিকায় প্রাচীনকালের কবিদের অপ্রকাশিত রচনা ও জীবনচরিত এখানে প্রকাশ করতেন। ১৮৫৯ এ ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের মৃত্যুর পর তার ভাই এ পত্রিকার দায়িত্ব পালন করেন।
'সংবাদ প্রভাকরে'—র চারজন বিশিষ্ট লেখকের নাম পরিচয় দাও।
— এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। তিনি ছাড়া অপর তিন জন হলেন— রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং দীনবন্ধু মিত্র।
বাংলা সাহিত্যে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত কি হিসেবে পরিচিত? — যুগসন্ধির কবি।
বাংলা সাহিত্যের যুগ সন্ধিকাল কোন সময়কে বলা হয়? — ১৭৬০ সাল হতে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে কেন যুগসন্ধির কবি বলা হয়?
— ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দ হতে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ শুরু হলেও বাংলা কাব্য সাহিত্যে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে 'মেঘনাদবধ কাব্য' রচনার পূর্ব পর্যন্ত আধুনিক যুগের প্রকৃত সূচনা হয়নি। এই ষাট বছর কাব্যে আধুনিকতায় পৌঁছার চেষ্টা চলেছে মাত্র। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জন্ম সময় এবং তার বেড়ে ওঠা হয় কলকাতার নাগরিক পরিবেশে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি কাব্যে চর্চায় মধ্যযুগের বিভিন্ন দেবদেবী কে বিষয়বস্তু না করে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ছোট ছোট করে কবিতা লিখতেন। তাঁর কবিতায় সমাজ সচেতনতা থেকে শুরু করে সামাজিক নানা খুটিনাটি এমনকি ছোট্ট তপসে মাছও বাদ যেত না। মধ্যযুগের শেষ প্রতিনিধি এবং আধুনিক যুগের প্রথম পুরুষ মাইকেল মধুসূদন দত্ত —এই দুইয়ের মাঝামাঝি সময়ে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের আবির্ভাব। তাঁর কাব্যে মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্য এবং আধুনিক যুগের বৈশিষ্ট্য দুটোই সমানতালে দেখা যায় বলে তাঁকে যুগসন্ধির কবির বলা হয়।
তাঁর রচনা রীতির বিশেষত্ব কী? — ব্যঙ্গ বিদ্রুপ এবং দেশ ও সমাজভাবনা।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের পরিচয় দাও।
— রামপ্রসাদ সেন কৃত কালীকীর্তন (১৮৩৩), কবিবর ভারতচন্দ্র রায় ও তাঁর জীবনবৃত্তান্ত (১৮৫৫), বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত কাব্যসংগ্রহ (১২৯২ বঙ্গাব্দ), কালীপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন সম্পাদিত সংগ্রহ (১৩০৬), ও মণিকৃষ্ণ গুপ্ত সম্পাদিত সংগ্রহ (১৩০৮ বঙ্গাব্দ)।
তাঁর সম্পাদিত বাকি পত্রিকাগুলো কোনগুলো? — সংবাদ রত্নাবলী, সংবাদ সাধুরঞ্জন।
তিনি কবে মৃত্যুবরণ করেন? — ২৩/০১/১৮৫৯।