HSC : বাংলা ১ম পত্র : ১ম সপ্তাহ : অ্যাসাইনমেন্ট : ২০২১
১. ‘অপরিচিতা’ গল্প অনুসরণে কল্যাণীর সংকট এবং এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তার দৃঢ়চেতনা মনোভাবের পরিচয়।
২. অনুপম এবং অন্যদের ভূমিকা ইতিবাচক হলে কল্যাণীর জীবন কেমন হতে পারত, এর বিবরণ।
৩. বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে চেনা / জানা কোনো নারীর এগিয়ে চলার পথে প্রতিবন্ধকতাগুলো নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা।
৪. পঠিত গল্প ও চেনা/জানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নারীর এগিয়ে চলার পথে সহায়ক ভূমিকাগুলো চিহ্নিত করা।
৫. শব্দপ্রয়োগ, বাক্যগঠন, বানান, বিরামচিহ্ন যথাযথ রাখা।
নমুনা সমাধান
১. ‘অপরিচিতা’ গল্প অনুসরণে কল্যাণীর সংকট এবং এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তার দৃঢ়চেতনা মনোভাবের পরিচয়।
“অপরিচিতা” গল্পে কল্যাণীর সংকট হলো তথাকথিত বিবাহের সময় পার হয়ে যাওয়া অর্থাৎ সঠিক সময়ে বিয়ে না হওয়া।
লেখকের মামার মন ভার হয়ে যায় যখন তিনি জানতে পারলেন কল্যাণীর বয়স ১৫। কারণ তিনি মনে করেছিলেন, ঐ মেয়ের বংশে দোষ আছে। তখন ৮-১০ বছর বয়সের মধ্যে কন্যার বিয়ে দেওয়ার রীতি ছিল। এ সময়ে বিয়ে না দিলে মনে করা হতো মেয়ের বংশে দোষ আছে। যে কারণে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না।
সে মেয়ের তথা কল্যাণীর সাথে অনুপমের বিয়ের কথা চলছিল তার বয়স পনেরো। তাই ছেলের মামার মন ভার ছিল।
‘অপরিচিতা’ গল্পে, কল্যাণী উচ্চ শিক্ষিতা, রুচিশীল মেয়ে। তিনি আত্মপ্রত্যয়ী, শিক্ষকতাকে তিনি জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। তার শিক্ষাদীক্ষার কারণে লগ্নভ্রষ্ট হওয়ার পরেও সে তার বিবাহের সংকট দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করেছেন।
২. অনুপম এবং অন্যদের ভূমিকা ইতিবাচক হলে কল্যাণীর জীবন কেমন হতে পারত, এর বিবরণ।
অপরিচিতা গল্পেকল্যাণী একজন সুদর্শণা, শিক্ষিতা ও প্রাণচঞ্চল মেয়ে। তার পিতা শম্ভুনাথ বাবু ছিলেন একজন স্পষ্টভাষী ও সুপুরুষ ব্যক্তি। কিশু অনুপমের মামা সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর চরিত্র। তিনি বিয়ের পণ, যৌতুক সম্পর্কে কোনো প্রকার ছাড় দিতে বা আপোষ করতে রাজি ছিলেন না। আর এখানেই গল্পের কাহিনী তার অন্তিম চরণে পৌঁছায়। বিভিন্ন জটিলতায় রূপ নেয়। মেয়ের বাবা অনেক আশা, স্বপ্ন নিয়ে, রীতিমতো বেশ আড়ম্বর করে বিয়ের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে দেনা পাওনার কারণে সব আনন্দ আয়োজন এক মুহূর্তেই ধুলিসাৎ হয়ে যায়। অথাৎ কল্যাণীর মতো সুলক্ষণার জীবনের আকাঙ্ক্ষিত সময় দুঃসময়ে পরিণত হয়। বিয়ে ভেঙে যায়। আমরা গল্পে দেখতে পাই, মূল চরিত্র অনুপম একজন দুর্বলচিত্তের মানুষ। তার চরিত্রে সীমাহীন অসাড়তা, দুর্বলতা ও নির্বুদ্ধিতার পরিচয় পাওয়া যায়। সে শিক্ষিত হয়েও তার মামার সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করতে পারেনি। যদি গল্পে অনুপমের মামা ও অনুপমের ভূমিকা যদি ইতিবাচক হতো তাহলে কল্যাণীর সংসার সুখকর হতে পারত বলে আমি মনে করি। কারণ বিয়ের ভাঙ্গার মূল কারণ হলো অপুপমের দুর্বলতা, সিদ্ধান্তহীনতা ও মামার যৌতুক প্রবণতা।
৩। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে চেনা / জানা কোনো নারীর এগিয়ে চলার পথে প্রতিবন্ধকতাগুলো নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা।
গল্পানুসারে সমাজে নারীর এগিয়ে চলার প্রতিবন্ধকতা হলো :
অশিক্ষা, দারিদ্র, কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামাজিক অনগ্রসরতা, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর উন্নয়নে বাধা।
কথিত আছে, “বিশ্বে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।” কিন্তু এই উক্তির সার্বজনীন বাস্তবায়ন এই শতাব্দীতে এসেও হয়নি। সামাজিক অবস্থার আংশিক পরিবর্তন হলেও আজও মানুষের ধ্যান ধারণা তেমন পরিবর্তন হয় নি। এখন সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের বিভিন্ন বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন দুটি বিষয়ই একটি অন্যটির পরিপূরক। নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে নারী উন্নয়ন বিষয়টি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যেখানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে নারীদের পদযাত্রায় বারবার হোঁচট খেতে হয়, সেখানে তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশের নারী হিসেবে বাঙালি নারীদের প্রতিটি পদক্ষেপে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। অথচ সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নারীরা আজ শুধু রান্নাঘরে না সমাজের বিভিন্ন উচ্চতায় নিজেদের পদচিহ্ন রেখেছেন। বর্তমানে এমন কোনো দেশ দেই যেখানে নারীদের মর্যাদাপূর্ণ উপস্থিতি আছে। নারী অধিকার ও অগ্রগতির কথা যতই বলা হোক না কেন, বিশ্বের সকল দেশে নারীরা কম-বেশি সহিংসতা, বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। সামাজিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র সর্বক্ষেত্রে প্রায় একই। আমাদেরও একই পরিস্থিতি বিদ্যমান। নারীর শিক্ষার বিষয়টি আমাদের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে অপরিহার্যভাবে জড়িত। নেপলিয়ন বলেছেন, “আমাকে একটি শিক্ষত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি দেবো।”
কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রেও নারী বৈষম্যের কোনো শেষ নেই। তবে বাংলাদেশে ও অন্যান্য দেশে শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ শতভাগ। এছাড়াও নারী বান্ধব কর্মক্ষেত্রের অভাব ও নারীর অগ্রযাত্রায় বাধাস্বরূপ।
৪। পঠিত গল্প ও চেনা/জানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নারীর এগিয়ে চলার পথে সহায়ক ভূমিকাগুলো চিহ্নিত করা।
পঠিত গল্পানুসারে নারীকে এগিয়ে চলার পথে সহায়ক ভূমিকা হলো :
- সর্বত্র নারীর অংশগ্রহণ বাড়ালে চলবে না, তার গুণগত উন্নয়ন জরুরি। কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ। নারীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।
- নারীর আনুষ্ঠানিক কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করা দরকার।
- কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সংবেদনশীল পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
- মেয়ে ও ছেলে শিশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সবার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানের পূর্ণ ব্যবস্থা করতে হবে।
- নারীবান্ধব আইনগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।
- সকলক্ষেত্রে নারীপুরুষ বৈষম্য দূর করতে হবে।
- নারীদের স্ব-সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
আরো দেখুন :
২য় সপ্তাহের নমুনা সমাধান :
১ম সপ্তাহের নমুনা সমাধান :