সাধারণ জ্ঞান : কালীপ্রসন্ন সিংহ

কালীপ্রসন্ন সিংহ
 
কালীপ্রসন্ন সিংহ কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? — ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার জোড়াসাঁকোয়।

কালীপ্রসন্ন সিংহের পরিচয় সংক্ষেপে তুলে ধর  — ধনী জমিদার নন্দনাল সিংহের একমাত্র সন্তান। নিজের ছয় বৎসর বয়সে পিতাকে হারান তিনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে এবং বাসায় গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়ে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি এবং বাংলা ভাষা শিক্ষা লাভ করেন।

তাঁর প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয় দাও। — বাংলা ভাষা অনুশীলনের জন্য 'বিদ্যোৎসাহিনী সভা' (১৮৫৩) স্থাপন; 'বিদ্যোৎসাহিনী পত্রিকা' (১৮৫৫) প্রতিষ্ঠা; 'বিদ্যোৎসাহিনী রঙ্গমঞ্চ' (১৮৫৬) স্থাপন করেন।

মাইকেল মধুসূদনকে কেন তিনি সংবর্ধিত করেন? — বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারার মহাকাব্য রচিত হয়েছে এটা বুঝতে পেরে 'মেঘনাদবধ কাব্য' প্রকাশিত হওয়া মাত্র, ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে মধুসূদনকে 'বিদ্যোৎসাহিনী সভা'র পক্ষ থেকে কালীপ্রসন্ন সিংহ সংবর্ধনা জানান।

'নীল - দর্পণে'র তিনি জরিমানার টাকা দেন কেন? — দীনবন্ধুর 'নীল-দর্পণ' (১৮৬০) ইংরেজিতে অনুবাদ করে ছাপার দায়ে প্রকাশক রেভারেন্ড লঙ নামক পাদ্রীকে (অনুবাদকের নাম কিংবা লেখকের নাম মুদ্রিত ছিল না বলে তাদের বিচার করা হয়নি।) ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কালী প্রসন্ন নিজে সেই টাকা পরিশোধ করে দেন এবং পরোক্ষভাবে 'নীল-দর্পণে' ব্যক্ত বক্তব্যকে সমর্থন করেন।

কালীপ্রসন্ন কোন দুটি গ্রন্থের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন? — 'হুতোম প্যাঁচার নকশা' (১৮৬২), 'সংস্কৃত মহাভারতের গদ্য-অনুবাদ' (১৮৬৬) গ্রন্থের জন্য।

'হুতোম প্যাঁচার নকশা'র পরিচয় দাও।
— কালীপ্রসন্ন সিংহ 'হুতোম প্যাঁচার নকশা'য় সে যুগের সমাজ জীবনের ক্ষত চিহ্নের খুবই বেদনাদায়ক চিহ্ন এঁকেছেন। 'আলালের ঘরের দুলালে'র চার বছর পর এই গ্রন্থ প্রকাশিত হলেও এতে বাচনভঙ্গি, রচনারীতি, আঙ্গিক প্রভৃতি দিক থেকে লেখক নতুনত্ব সৃষ্টি করেছেন। নকশা উপন্যাস নয়, তা সামাজিক সমস্যামূলক ব্যক্তিগত রচনা। তারপরেও 'হুতোম প্যাঁচার নকশা' উপন্যাসের মতোই পাঠ করার জন্য সুপাঠ্য বস্তু। এর কারণ হিসেবে ধরা হয়, কালীপ্রসন্ন সিংহ সংস্কৃতবহুল পণ্ডিতী ভাষার বদলে কথ্য ভাষায় এই উপন্যাস রচনা করেন। প্যারীচাঁদ মিত্র যে আলালের ঘরের দুলালে সাধু ও কথ্য ভাষার যে রূপ এঁকেছেন, কালীপ্রসন্ন এই মিশ্রিত সাধু ও কথ্য ভাষার আরো সৌন্দর্যতা এবং  মধুরতা যোগ করেন তার এই উপন্যাসে। তিনিই প্রথম লেখক হিসেবে কলকাতা এবং কলকাতার আশেপাশে কথ্য ভাষার যথাযথ প্রয়োগ ঘটাতে সক্ষম হন।

কালীপ্রসন্ন অনুসৃত রীতির ভাষাকে কি বলা হয়? — হুতোমী বাংলা।

কবে এবং কোথায় কালীপ্রসন্ন মৃত্যুবরণ করেন? — কলকাতায়, ২৪ শে জুলাই ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post