কাজী আবদুল ওদুদ
কাজী আবদুল ওদুদ কবে জন্মগ্রহণ করেন? — ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ এপ্রিল।
তিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? — তৎকালীন ফরিদপুর (বর্তমানে রাজবাড়ী) জেলার পাংশার বাগমারা গ্রামে।
তিনি কি ছিলেন? — লেখক ও চিন্তাবিদ।
তাঁর পিতার নাম ও তিনি কোন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন? — কাজী সগীর উদ্দিন। তিনি রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার ছিলেন।
কাজী আবদুল ওদুদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণ দাও। — তিনি ১৯১৩ তে ঢাকা কলজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯১৫ ও ১৯১৭ তে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে যথাক্রমে আই.এ ও বি.এ এবং ১৯১৯ এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ পাস করেন।
তিনি ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের (ঢাকা কলেজ) বাংলার অধ্যাপক হিসেবে কবে যোগদান করেন? — ১৯২০ সালে।
১৯৬৫ তে নবপর্যারে প্রকাশিত যে পত্রিকাটির সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি হন তার নাম কী? — তরুণ পত্র।
বুদ্ধির মুক্তির আন্দোলনকল্পে ১৯২৬ এ প্রতিষ্ঠিত যে সমিতির অন্যতম নেতা তিনি ছিলেন, তার নাম কী? — মুসলিম সাহিত্য সমাজ।
তিনি কোন ধরনের লেখার জন্য ঢাকার নওয়াব পরিবার কর্তৃক নিগৃহীত হন? — সাহিত্য সমাজের পত্রিকা 'শিখায়' (১৯২৭) তাঁর মুক্তচিন্তা ও যুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন লেখার জন্য।
তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ কী?
- উপন্যাস : নদীবৃক্ষে (১৯১৮)।
- সমাজ ও সাহিত্যিক বিষয়ক প্রবন্ধ : শাশ্বতবঙ্গ (১৯৫১), কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল প্রতিভা।
'শাশ্বতবঙ্গ' গ্রন্থ সম্পর্কে লেখ।
— কাজী আবদুল ওদুদ রচিত প্রবন্ধের সংকলন 'শাশ্বতবঙ্গ'। ১৯৫১ (১৩৫৮) খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থটি সংকলন করা হয়। এতে ইতঃপূর্বে রচিত তাঁর বেশ কয়েকটি পুস্তক / পুস্তিকা থেকে প্রবন্ধ গৃহীত হয়৷ কিছু নতুন প্রবন্ধ থাকে। 'শাশ্বতবঙ্গে'র প্রবন্ধগুলো ৬ টি ভাগে বিভক্ত করা হলে। যথাঃ হিন্দু-মুসলিম সমস্যা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অন্বেষণ, মুসলিমদের আত্ম-অন্বেষণ, রবীন্দ্র-ভাবনা, নজরুল-মূল্যায়ন, সাহিত্য-ভাবনা, অন্যান্য মনীষা মূল্যায়ন। প্রবন্ধগুলোতে লেখক বৃহৎ বাংলা ও ভারতের মানুষের মুক্তি ঘটাতে চেয়েছেন এবং শিক্ষিত-সমাজের অনবধানতায় জাতির কতটুকু বিড়ম্বনা ঘটতে পারে, সে আশঙ্কাও ব্যক্ত করেছেন। কাজী আবদুল ওদুদ অবিভক্ত বাংলা প্রত্যাশা করেছিলেন। তাই ফরিদপুরের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর অনুরোধ পেয়েও তিনি পূর্ববাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন নি।
'নদীবক্ষে' উপন্যাসের পরিচয় দাও।
— 'নদীবক্ষে' যতটুকু উপন্যাস তারচেয়ে বেশি সমাজচিত্র। এখানে চাষী মুসলিম জীবন জীবিকার যে উল্লেখ আছে তা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও আকৃষ্ট করেছিল। এবং তিনি সে কথা লিখেছেন। আবার গ্রামীন জীবনের সমাজের কলহ, বিবাদ, দ্বন্দ্ব ও মিলনের কথা চারটি কৃষক পরিবারকে কেন্দ্র করে এই গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। এই কৃষক পরিবারের প্রধানরা হলেন জমির শেখ, ইরফান মণ্ডল, দুখে এবং লালু। এখানে লালু ও মতির মধ্যে প্রণয়ঘটিত সম্পর্কের উল্লেখ আছে তা বেশ আকষর্ণীয়। 'নদীবক্ষে' উপন্যাসে লেখক দেখিয়েছেন যে গ্রামের সাধারণ মুসলিমরা ধর্মের প্রতি খুব শ্রদ্ধাশীল কিন্তু তারা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন না। কেউ নামাজ না পড়লে কিংবা কোনো ধর্মীয় রেওয়াজ না মানলে তার ধর্ম গেল বলে তারা চিৎকার করেন না। লালু যে ১৭ বছরেও নামাজ পড়া শিখে নি তাতে গ্রামের মানুষের কোনো আগ্রহ নেই৷ ধর্মীয় রেওয়াজ না মানলেও এরা অসৎ কিংবা কপট নয়৷ লেখক মূলত বাংলাদেশের শাশ্বত ধর্মবোধকেই তুলে ধরেছেন এবং আচরণের কড়াকড়ির বিরুদ্ধে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
'কবিগুরু গ্যেটে'র পরিচয় দাও।
— 'কবিগুরু গ্যেটে' কাজী আবদুল ওদুদ রচিত দুইখণ্ডে বিভক্ত জার্মান মহাকবি ও নাট্যকার গ্যেটের জীবন ও কর্মপরিচয় মূলক গ্রন্থ। এই গ্রন্থে গ্যেটের নাটক 'ফাউস্টে'র রসগ্রাহী পরিচয় দেওয়া হয়েছে। বাংলা ভাষায় গ্যেটের সম্বন্ধে এটি প্রথম বই।
কবে কোথায় কাজী আবদুল ওদুদ মৃত্যুবরণ করেন? — কলকাতা ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ শে মে।