HSC : যুক্তিবিদ্যা : ১ম সপ্তাহ : অ্যাসাইনমেন্ট : ২০২১

HSC : যুক্তিবিদ্যা : ১ম সপ্তাহ : অ্যাসাইনমেন্ট : ২০২১

যুক্তিবিদ্যার ধারণায় এর পরিধি পাওয়া যায়- পর্যালোচনা কর।

নমুনা সমাধান

“যুক্তিবিদ্যার ধারণায় এর পরিধি পাওয়া যায়”

যুক্তিবিধ্যার উৎপত্তি : মানব ইতিহাসের সব পর্যায়েরই কার্য-করণের বিষয়টি বিদ্যমান ছিল। নীতিগল্পানুযায়ী, প্রথম জ্যামিতির সূত্র ধরেই যুক্তি প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত ধারণার উদ্ভব। জ্যামিতি বলতে বোঝানো হতো পরিমাপ। এক্ষেত্রে প্রাচীন মিশরীয়রাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। যুক্তিবিদ্যার আরেকটি চর্চাস্থান ছিল ব্যাবিলনিয়া। কতিপয় যৌক্তিক স্বত ও সিদ্ধ ও অনুমিতির ওপর ভিত্তি করে খ্রিষ্ট পূর্ব ১১শ শতাব্দীতে ইসাগিস-কিন-অ্যাপিলের রোগে নির্ণয় পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
যুক্তিবিদ্যার ইতিহাসকে পর্যায়ক্রমে ৪টি ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা :

১। প্রাচীন যুগ (৫৭২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ-৮৭০ খ্রিষ্টাব্দ)
২। মধ্যযুগ
৩। আধুনিক যুগ
৪। সাম্প্রতিক যুগ

প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের হাতেই পদ্ধতিগত যুক্তিবিদ্যার জ্ঞানশাখা হিসেবে সুত্রপাত ঘটে। মধ্য যুগে কয়েকজন স্কলাস্টিক দার্শনিক ও মুসলিম দার্শনিকগণ যুক্তিবিদ্যার চর্চা করেন। সমকালে রাসেল, ফ্রেগে, ডি মরগ্যান, জন ভেন, হোয়াইটহেড প্রমুখ প্রতীকি ও গাণিতিক যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

যুক্তিবিদ্যার ধারণা : যুক্তিবিদ্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Logic’-এর উৎপত্তি হয়েছে গ্রীক শব্দ Logike থেকে। Logike শব্দটি গ্রীক শব্দ Logos এর বিশেষণ। এর অর্থ হলো চিন্তা বা ভাষা। আমাদের জানা আছে চিন্তার সাথে ভাষার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। সুতরাং উৎপাত্তিগত অর্থ যুক্তিবিদ্যা হলো ভাষায় প্রকাশিত চিন্তার জ্ঞান।

এরিস্টটলের মতে যুক্তিবিদ্যা : যুক্তিতর্কের বাহন হিসেবে যুক্তিবিদ্যার প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহামতি এরিস্টটল। তিনি প্রথম যুক্তিবিদ যিনি যুক্তিবাক্যের পদ্ধতিগত আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে,
জ্ঞানের পদ্ধতি নির্দেশই হলো যুক্তিবিদ্যার কাজ।
তিনি একে প্রকৃত জ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বহান বলে বর্ণনা করেন ও বলেন যে,
যৌক্তিক রীতি নিয়মের সাথে সম্যক পরিচয় না থাকলে জ্ঞানের চর্চা অসম্ভব হয়ে যায়।
যুক্তিবিদ্যাকে তিনি প্রারম্ভিক বিজ্ঞান হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাই যেকোনো জ্ঞানের অনুশীলনে ব্যবহৃত পদ্ধতির সম্প্রসারণই এ শাস্ত্রের কাজ। সুতরাং একে যেকোনো বিশেষ জ্ঞানানুসন্ধানে পূর্বাবস্থা বলা সংগত। যুক্তিবিদ্যার কাজই হলো একটি চিন্তা বা আলোচনা কীভাবে সঠিক প্রক্রিয়ায় ব্যক্ত করা যায় তা নির্দেশ করা বা কীভাবে উপস্থাপন করলে তাকে বৈধ বা অবৈধ বলা যাবে তা বলে দেয়া।

জে. এস. মিলের যুক্তিবিদ্যার ধারণা : উনিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্রিটিশ দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, নৈতিক ও রাজনৈতিক তাত্ত্বিক জন স্টুয়ার্ট মিল জন্মগ্রহণ করেন ১৮০৬ সালে (১৮০৬-১৮৭৩), জে. এম. মিল যুক্তিবিদ্যা ও নীতিবিদ্যার ক্ষেত্রে অন্যান্য অবদান রাখেন। তাঁর মতে,
যুক্তিবিদ্যা হচ্ছে সেই বিজ্ঞান যা বিচার বা প্রমাণের মাধ্যমে জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে উপনীত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় মননপ্রক্রিয়াসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করে এই সংজ্ঞায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, অনুমান ও অনুমান সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াই হচ্ছে যুক্তিবিদ্যার মূল আলোচ্য বিষয়। মিল তার A System of Logic গ্রন্থে বলেন,
আবরোহ ও আরোহ যুক্তি বিদ্যার এ দুটি শাখার নিয়মই হলো সত্য ও জ্ঞান অনুসন্ধান করা।

যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে যোসেফের ধারণা : ব্রিটিশ অধ্যাপক হোরেস উইলিয়াম ব্রিনডলে জোসেফ তার An Introduction to Lotic বইয়ের ‘On the General Character of the Inquiry’ নামক অধ্যায়ে যুক্তিবিদ্যাকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। যোসেফ বলেন
যুক্তিবিদ্যা বিজ্ঞান হিসেবে নিজস্ব আলোচ্য বিষয়ের মূলনীতি ব্যাখ্যা করে।
জোসেফের মতে,
যুক্তিবিদ্যা এমন একটি বিজ্ঞান যা চিন্তার সাধারণ নিয়মগুলো সম্পর্কে আলোচনা করে। যুক্তিবিদ্যা আমাদের চিন্তার আকাারের সথে সম্পর্কিত। তিনি বলেন, যুক্তি বিদ্যা হলো চিন্তা বিষয়ক বিজ্ঞান বা অধ্যয়ন।

আই. এম. কপির ধারণা : আমেরিকান অধ্যাপক আরভিং মারমার কপি (১৯১৭-২০০২) যুক্তিবিদ্যার মূলকাজকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে,
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যুক্তিবিদ্যা ব্যবহার করা যায়। যুক্তিবিদ্যার পাঠ আমাদের শুদ্ধ যুক্তি থেকে অশুদ্ধ যুক্তি পার্থক্য করতে সহায়তা করে। জ্ঞান অনুসন্ধানকে এগিয়ে নিয়ে যায় ও আমাদের আগ্রহের যে কোনো বিষয় বুঝতে সাহায্য করে।

যক্তিবিদ্যার স্বরূপ : যুক্তিবিদ্যা আমাদেরকে যেমন যুক্তি ব্যবহারের কিছু নিয়ম-কানুন শিক্ষা দেয়, তেমনি সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগও শেখায়। তাই যুক্তিবিদ্যা একাধারে কলা ও বিজ্ঞান। বিজ্ঞানগুলো কোনো নির্দিষ্ট নিয়মনুসারে প্রকৃতির কোনো একটি বিষয়কে পদ্ধতিগতভাবে জানা। কলাবিদ্যা হলো কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগানো। বিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য জ্ঞান অর্জন আর কলার কাজ হলো অর্জিত জ্ঞান ব্যবহার করে কাজে দক্ষতা অর্জন করা। সুতরাং যুক্তিবিদ্যা কলা ও বিজ্ঞান উভয়ই।

যুক্তিবিদ্যার পরিসর : যুক্তিবিদ্যার পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। এর প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো ভাষায় প্রকাশিত চিন্তা। যুক্তিবিদ্যা পরোক্ষ জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করে কারণ যুক্তিবিদ্যার প্রধান মুখ্য আলোচ্য বিষয় হচ্ছে অনুমান। যুক্তি বিদ্যার আলোচ্য সূচিতে রয়েছে বহুধাবিভক্ত মনন ক্রিয়া (অনুমান, অবধারণ, ধারণা), যুক্তিবিদ্যার উদ্দেশ্য সত্যকে অর্জন করা। যুক্তিবিদ্যার পরিধি দর্শন, নীতিবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও পদার্থিক বিজ্ঞানের পরিধি পর্যন্ত বিস্তৃত।


আরো দেখুন :

১ম সপ্তাহের নমুনা সমাধান :
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post