অনুচ্ছেদ : গীতিকবিতা

গীতিকবিতা


কবিতার অনুভূতি যখন আবেগকল্পিত সুরে ভাবের ঐক্য বজায় রেখে পাঠকের উপস্থাপন করা হয় তখন তাকে গীতিকবিতা বলে। এতে কবির আনন্দ-বেদনা, কামনা-বাসনার গীতিময় প্রকাশ ঘটে। গীতিকবিতা তন্ময় কবিতার অন্তর্গত। গীতিকবিতার শাব্দিক অর্থ গান ও কবিতার মিশ্রন। এক সময় গীতিকবিতা সংগীত যন্ত্রের মাধ্যমে গীত হতো। কিন্তু বর্তমানে গীতিকবিতাকে সংগীতের সাথে বসালে ভূল হবে। কেননা শব্দের নতুন ব্যঞ্জনা ফুটে ওঠেছে আধুনিক গীতিকবিতায়। গানের মতো গীতকবিতার ছন্দ আবদ্ধ নয়। তাই সঙ্গীত থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছে গীতিকবিতা। কবির অন্তরের অনন্ত আনন্দই গীতিকবিতার প্রাণ। কবির হৃদয়ে দিবানিশি যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়, যে সুর কবিকে আকুল করে তোলে, জীবন ও জগতের সেই বিচিত্র কোলাহলের সার্থক গীতিময় অনুবাদউ তো গীতিকবিতা। যাকে ইংরেজিতে বলে Lyric (লিরিক)। গীতিকবিতা নানা রকমের হয়ে থাকে। যেমন: ভক্তিমূলক গীতিকবিতা, স্বদেশপ্রীতিমূলক গীতিকবিতা, প্রেমমূলক গীতিকবিতা, প্রাকৃতিক বিষয়ক গীতিকবিতা, স্তোত্র কবিতা, চিন্তামূলক গীতিকবিতা, শোকগীতি, লঘু-বৈঠকি গীতিকবিতা। গীতিকবিতার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে মানবজীবনের পরিপূর্ন জীবনের কোন ইঙ্গিত নেই, আছে কবির আনন্দ-বেদনা একান্ত অনুভুতির প্রকাশ। আত্মবিমুগ্ধ কবির হৃদয়ের অনুকরণই শোনা যায় গীতিকবিতার পরতে পরতে। কখনো কখনো নানা চরিত্র ও গল অবলম্বন করেও গীতিকবিতা লেখা যায়। তবে যাই হোক গীতিকবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য তার গীতিশীলতা। তাই বলা যায়, যে কবিতা পড়লে পাঠকের মনে সঙ্গীতের মূর্ছনা বয়ে যায় তাকেই গীতিকবিতা বলে। যেমন: বিহারীলাল চক্রবর্তী 'বঙ্গসুন্দরীর প্রতি' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ষামঙ্গল, কাজী নজরুল ইসলামের 'বাদল দিনে' দ্বিজেন্দ্রলালের 'ভারতবর্ষ' প্রভৃতি গীতিকবিতা।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post