৭ই মার্চের ভাষণ
বাংলাদেশের মানুষের কাছে ৭ই মার্চের ভাষণ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রায় দশ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণের বাস্তবতা বিশ্লেষণ করতে গেলে একটি পিছনে যেতে হবে। পাকিস্তানি নামক রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলার উপরে শোষণ - নিপীড়ন শুরু করে। আর এর বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ আন্দোলন করে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সামরিক একনায়ক আইয়ুব খান ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর ক্ষমতায় এসে নতুন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া সাধারণ নির্বাচন দিতে বাধ্য হন। ১৯৭০ সালের সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কোনো কারণ ছাড়াই ইয়াহিয়া ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চে ঢাকায় পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এই ষড়যন্ত্রমূলক ঘোষণা শুনেই পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ঝড় ওঠে। তারই প্রেক্ষিতে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ৭ই মার্চের ভাষণ দেন। ১৮মিনিটের ওই ভাষণে তিনি বাঙালির মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের আহবান জানান। বঙ্গবন্ধুর আবেগ, বক্তব্যের তীক্ষ্ণতা ও দিক-নির্দেশনায় ওই ভাষণটি ছিল অনবদ্য। তাই এই ভাষণটিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ঐতিহাসিক গেটিসবার্গ ভাষণের সঙ্গে তুলনা করা হয়।