SSC : ব্যবসায় উদ্যোগ : ৩য় সপ্তাহ : ২০২১

বাংলাদেশে শিল্পের উপর ব্যবসায়িক পরিবেশের উপাদানের প্রভাব।

নমুনা সমাধান

বাংলাদেশের শিল্পের উপর ব্যবসায় পরিবেশের উপাদানগুলোর প্রভাব

ব্যবসায়ের ধারণা : ঝুঁকি আছে জেনেও মুনাফার্জনের উদ্দেশ্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজেকে স্বেচ্ছায় কোনো কাজে নিয়োজিত করলে তাকে ব্যবসায় বলে। এটি একটি অর্থনৈতিক কাজ। ব্যবসায়ের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল এটি ঝুঁকিবহুল। তবে মুনাফা অর্জনের জন্য পরিচালিত যেকোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড তখনই ব্যবসা বলে বিবেচিত হবে যদি তা দেশের আইনে বৈধ ও সঠিক উপায়ে পরিচালিত হয়।

ব্যবসায় পরিবেশের ধারণা : ব্যবসায়ের যেসকল উপাদান বা অবস্থা ব্যবসায় কার্যাবলীকে প্রভাবিত করে সেসব উপাদানের সমষ্টিকে ব্যবসায় পরিবেশ বলে। ব্যবসায়ে প্রভাববিস্তারকারী প্রাকৃতিক, অ-প্রাকৃতিক উপাদানের সমন্বয়ে ব্যবসায় পরিবেশ গঠিত হয়। যেসব পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পন্ন করে, তাকে ব্যবসায় পরিবেশ বলে। ব্যবসায় পরিবেশ হলো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিবেষ্টিত সকল উপাদান, অবস্থা, শক্তির সমষ্টি যা উক্ত ব্যবসায় বা তার ব্যবস্থাপকের কার্যকারিতা বা সফলতাকে প্রভাবিত করে। সাধারণত রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, সরকারের নতুন নতুন আইন ও নীতি, কর অবকাশ ও কাঠামো, শ্রমিক অসন্তোষ, রাজনেতিক - অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবসায়কে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। ব্যবসায় পরিবেশ প্রতিকূল ও অনুকূল দুটোই হতে পারে। কোনো ব্যবসায়ের উন্নতি নির্ভর করে ব্যবসায় পরিবেশের উপর। পরিবেশ ব্যবসায় বা শিল্প স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশের ব্যবসায় পরিবেশের উপর প্রভাববিস্তার কারী উপাদান সমূহ :
প্রাকৃতিক উপাদান : প্রাকৃতিক পরিবেশের অধিকাংশই আমাদের দেশে ব্যবসায় স্থাপনের অনুকূল। দেশের প্রায় সকল অঞ্চল নদী বিধৌত। ছোট বড় সব মিলিয়ে মোট ২৩০ নদী প্রবাহিত হয় সারা দেশ জুড়ে। তাই সহজেই এখানে কৃষিনির্ভর বিভিন্ন শিল্প ও ভোগ্য পণ্য উৎপাদন সম্ভব। তাছাড়া নদীপথে ব্যবসায়িক পণ্যের পরিবহন খরচ ও কম। তবে অনেক নদী শুকিয়ে যাচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে নদীতে চর পড়ে নদীপথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক গ্যাস এখানে বিদ্যমান।বিভিন্ন খনিজ, কয়লা, কঠিন শিলা, খনিজ তৈল শিল্প বিকাশে সহায়ক। এসব প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার করলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রগতি ঘটে।

রাজনৈতিক উপাদান : সুষ্টু আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অনুকূল শিল্প-বাণিজ্য নীতি ও আইন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রতিবেশী দেশের সাথে বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারে সহায়তা করে।অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন, হরতাল, ধর্মঘট, কঠোর বাণিজ্য নীতি ইত্যাদি প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশের উপাদান ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে বাধা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের উক্ত রাজনৈতিক উপাদানগুলো সব কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বিদ্যমান নেই। শ্রমিক অসন্তোষ, ধর্মঘট, ইত্যাদি নেতিবাচক দিক পরিহার করে বাংলাদেশের ব্যবসায়ের জন্য রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নতি করা যায়

সামাজিক উপাদান : বাংলাদেশের মানুষ জাতিগত, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে উদ্যমী, পরিশ্রমী এবং সৃজনশীল। অতীতে জাহাজ নির্মাণ করে, মসলিন কাপড় উৎপাদন করে এদেশের মানুষ তাদের প্রতিভা আর পরিশ্রমের স্বাক্ষর রেখেছেন। সোনারগাঁও একসময় ব্যবসায়, কৃষি, শিক্ষা, দীক্ষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক ও কারুশিল্পে ছিল বিশ্বসেরা। বর্তমানেও জামদানী শাড়ি, নকশিকাঁথা, জাহাজ নির্মাণ বিশ্ববাসীর দৃষ্টিআকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। তবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে মুখস্থ নির্ভরতা বের করে আরো দক্ষ ও সৃজনশীল করতে পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিল্প বাণিজ্য গবেষণায় আরো বেশী সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারবে। সাথে সাথে ব্যবসা বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বৃদ্ধি করতে পারবে।

অর্থনৈতিক উপাদান : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিবেশের উপাদানগুলোর কয়েকটির ভিত্তি বেশ মজবুত হলেও অনেকগুলোর ভিত্তি তেমন সুদৃঢ় নয়। চাহিদার তুলনায় প্রয়োজনীয় মূলধন সম্পদের অভাব, গ্রামীণ জনগণের ব্যাকিং সেবা ও ঋণ প্রাপ্তির সুবিধা কম, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অসৎ দালাল ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য, দ্রব্যমূল্যেড় ঊর্ধ্বগতি এসব প্রতিবন্ধকতা কাটাতে পারলে বাংলাদেশ ব্যবসায় বাণিজ্যের বিকাশের গতি আরো দ্রুততর হবে।এর জন্য প্রয়োজন গ্রামে গঞ্জে ব্যাংকিং ঋণ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া এবং সহজ করা।

আইনগত উপাদান : এদেশে ব্যবসায় পরিবেশের আইনগত উপাদান গুলো বরাবরই অনুকূল ছিল কিন্তু বেশিরভাগ পুরোনো। পরিবেশ সংরক্ষণ ও ভোক্তা আইন, শিল্প বাণিজ্য বান্ধব আইন তৈরি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধে আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসায়ের উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি সম্ভব।

প্রযুক্তিগত উপাদান : শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতিতে দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী, উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির প্রয়োজন। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সহজতর করে। ফলে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের ব্যবসায় পরিবেশে প্রযুক্তিগত উপাদানগুলো অনেকটা অনূকূল। 

উপসংহার : উপরের আলোচিত উপাদানগুলো অনুকূলে থাকলে ব্যবসায় পরিবেশের বিস্তার আর উন্নয়ন ঘটে আর উপাদানগুলো প্রতিকূলে থাকলে ব্যবসায় পরিবেশের উন্নয়ন বিঘ্নিত হয়। ফলে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে লাভজনক প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করে এবং ব্যবসায় পরিচালনা করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে, যা সমাজ, রাষ্ট্র তথা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।


আরো দেখুন :
৩য় সপ্তাহের নমুনা সমাধান :
SSC : ব্যবসায় উদ্যোগ
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post