ভাবসম্প্রসারণ : জননন্দিত একজন সাহসী নেতার কন্ঠস্বর সহস্র বুলেটের চেয়ে শক্তিশালী

জননন্দিত একজন সাহসী নেতার কন্ঠস্বর সহস্র বুলেটের চেয়ে শক্তিশালী

মূলভাব : শাসক-শোষকদের রক্তচক্ষু আর অস্ত্রের ভয়কে উপেক্ষা করে লাঞ্চিত-বঞ্চিত ও পরাধীন মানুষের অধিকার আদায় করার জন্য প্রয়োজন যোগ্য নেতার। এক্ষেত্রে জনগণনন্দিত একজন যোগ্য ও সাহসী নেতার প্রতিবাদী কন্ঠস্বর শোষকের সহস্র বুলেটের চেয়েও বেশি কার্যকর।

সম্প্রসারিত ভাব : স্মরণাতীত কাল থেকে পৃথিবীতে ক্ষমতাবান ও পেশি শক্তির বলে বলীয়ান মানুষ সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষদের নানা উপায়ে বঞ্চিত করে আসছে। কখনও মনুষ্যসৃষ্ট কৃত্রিম ভূমিব্যবস্থাপনা ও বন্টন - নীতির কারণে, আবার কখনও মুনাফালাভের অপকৌশল হিসেবে সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষদের ঠকিয়ে এরা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। অন্যদিকে অনেক রাষ্ট্রে স্বৈরাচারী ও একনায়ক শাসক নাগরিকদের তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার বঞ্চিত করে থাকে। আবার পরাধীনতার নাগপাশে আবদ্ধ জাতি ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা নানা উপায়ে বঞ্চিত হয়ে থাকে। কিন্তু নির্যাতিত - নিগৃহিত ও পরাধীন মানুষ ক্ষমতাবান কিংবা শোষকদের লাঞ্চনা-বঞ্চনাকে সহজে মেনে নেয় না। অধিকার ও স্বাধীনতালাভের জন্যে তারা সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়, কিন্তু শোষকদের রক্তচক্ষু ও অস্ত্রের ভয় অধিকাংশ কন্ঠস্বর অত্যাচারী শাসক-শোসকদের সহস্র বুলেটকেও অকার্যকর করে দিতে পারে। তাঁর এ প্রতিবাদী সত্তা অস্ত্রবলে বলীয়ান শোষকদের শোষণের ভিতকে দুর্বল করে দেয়। তিনি প্রথমে বঞ্চিত জনগণকে অধিকার-সচেতন ও সংঘবদ্ধ করে পরে তাদেরকে অধিকার আদায়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করে তোলেন। এর ফলে নির্যাতনকারী শাসকগোষ্ঠীও এক সময় তাদের কাছে নতি স্বীকার করে।

মন্তব্য : অত্যচারী ও শোষক শ্রেণির রক্তচক্ষু ও অস্ত্রের ভয় উপেক্ষা করে সাহসিকতার সঙ্গে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এজন্যে সাহসী তরুণদের নেতৃত্বের ভার গ্রহণ করতে হবে এবং নিজের সাহস ও প্রতিবাদী সত্তার দ্বারা জনগণের আস্থাভাজন হতে হবে।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করা হলো


মানুষ যুদ্ধ করার সাহায্যে দেশ জয় করে। যুদ্ধের অন্যতম অবলম্বন বুলেট। দু'পক্ষ মুখোমুখি হয়ে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। সহস্র বন্দুক ও কামান গর্জে ওঠে। হাজার হাজার বুলেট বিপক্ষ সৈন্যের বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। তারপর এক সময় অনেক মৃত্যু অনেক রক্তস্রোত বইয়ে দিয়ে শক্তির দন্ডের বিজয় ছিনিয়ে নেয়। এ বিষয়টি করুণ, ভয়াবহ এবং মানব সভ্যতার জন্য কলঙ্কস্বরূপ। কিন্তু একজন মহান নেতা বুলেট নয়, তার বজ্রকণ্ঠের গম্ভীর নিনাদে একটি জাতিকে জাগ্রত করতে সক্ষম হয়। পৃথিবীতে বহু নেতা দেখা যায়, যাদের আহ্বানে মানুষ লৌহ কঠিন শপথে দীপ্ত হয়েছে। বাঙালির জাতীয় অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন : 


তখন এই উদাত্ত কণ্ঠস্বর শত সহস্র বুলেটের চেয়েও শক্তি নিয়ে জনগণের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করেছিল। মহান নেতার কণ্ঠধ্বনি শুনে বাঙালি জাতি জেগে উঠেছিল। তারা অপরিমেয় প্রাণশক্তি ধারণ করেছিল। 

মহান নেতার কণ্ঠস্বরের বলিষ্ঠ উচ্চারণের ফলে মাত্র ৯ মাসের ভেতর বাঙালি জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সুতরাং শত সহস্র বুলেট যা পারে না, জনগণনন্দিত একজন মহান নেতার বজ্র কণ্ঠস্বর তার চেয়ে অধিক কিছু করতে পারে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post