ভাবসম্প্রসারণ : সমালোচককে কখনো শত্রু ভেবো না, সে-ই প্রকৃত বন্ধু

সমালোচককে কখনো শত্রু ভেবো না, সে-ই প্রকৃত বন্ধু


মূলভাব : আপাতদৃষ্টিতে সমালোচককে শত্রু বলে মনে হলেও বাস্তবে সে কখনোই মানুষের শত্রু নয়; বরং পরম মিত্র। কারণ সমালোচকের সমালোচনা মানুষকে নিজের অজানা-অচেনা কিংবা ছোটোখাটো ভুল-ত্রুটি সম্পর্কে অবহিত করে এবং আত্মশুদ্ধি-লাভের সুযোগ করে দেয়।

সম্প্রসারিত ভাব : পৃথিবীতে সব মানুষের মধ্যেই দুটো প্রবৃত্তি সমভাবে ক্রিয়াশীল। একটি হলো সুপ্রবৃত্তি, অপরটি কুপ্রবৃত্তি। সুবৃত্তির তাড়নায় মানুষ ভালো, সুন্দর ও কল্যাণকর কাজে প্রবৃত্ত থাকে। তেমনি কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় সে মন্দ, অসুন্দর ও অকল্যাণকর কাজে প্রবৃত্ত হয়। যারা সুপ্রবৃত্তির তাড়নায় তাড়িত হয়, মানুষ তাদের সৎ ও ভালো মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করে। আর যারা কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় তাড়িত হয়ে কাজ করে, লোকে তাদের অসৎ ও মন্দ লোক হিসাবে আখ্যা দেয়। পৃথিবীর সব সমাজেই সৎ ও ভালো মানুষ সকলের দ্বারা আদৃত হয়ে থাকেন; মানুষের শ্রদ্ধা, ভক্তি আর ভালোবাসায় তাঁরা সিক্ত হন। আর মন্দ মানুষ সমাজে নিগৃহীত ও অনাদৃত হয়ে থাকে। কিন্তু পৃথিবীতে সব মানুষই চায় যে, লোকে তাকে ভালো বলুক; সবাই তার প্রশংসা করুক। তবু কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় সব মানুষের পক্ষে অন্যদের শ্রদ্ধা, সম্মান আর ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হওয়া সম্ভব হয় না। আবার মানুষ অনেক সময় নিজের অজান্তে কিছু ভুল ত্রুটি বা অন্যায়-অপরাধ করে বসে, যা সহজে তার গোচরীভূত হয় না। সমালোচনা মানুষের স্বভাবের এসব নেতিবাচক দিক জনসমাজে তুলে ধরে। আপাতদৃষ্টিতে এটি যে কোনো মানুষের জন্যে লজ্জা ও অসম্মানের বিষয় বলে মনে হলেও বাস্তবে তা নয়। বরং এর মধ্যে দিয়ে একজন মানুষ আত্মশুদ্ধি অর্জনের সুযোগ লাভ করে। কারণ এর দ্বারা মানুষ নিজের চেষ্টায় যে আত্মশুদ্ধি লাভ করে তাতে অনেক ফাঁক থেকে যায়। কিন্তু সমালোচকের সমালোচনাকে অবলম্বন করে যে আত্মশুদ্ধি লাভ করে-তা একেবারে যথার্থ।

মন্তব্য : সমালোচকের সমালোচবা মানুষের আত্মশুদ্ধি লাভের শ্রেষ্ঠ অবলম্বন। তাই মানুষের সমালোচিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে সেসব থেকে মুক্ত হওয়ার সাধনা করা।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post