অধ্যায় ০২
লেনদেন
অ্যাসাইনমেন্ট :
সাহয়ক তথ্য
সাদাফ এন্টারপ্রাইজের মালিকের নিকট হতে ২০২০ সালের জুন মাসে জনাব সাদাফের নিকট
হতে নিম্নোক্ত ঘটনাসমূহ জানা যায়:
জুন ১ : মালিক নগদ ২০,০০০ টাকা এবং ৩৫,০০০ টাকা আসবাবপত্র ব্যবসায় বিনিয়োগ
করল।
জুন ৯ : ভাড়া পরিশোধ ৮,০০০ টাকা।
জুন ১৩ : মালিক ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রয় করে নিজে ব্যবহারের জন্য ৩০,০০০
টাকা দিয়ে একটি ল্যাপটপ কিনলেন।
জুন ২০ : রাদিফ এন্ড সন্সের কাছ থেকে ধারে ক্রয় ৭,০০০ টাকা।
জুন ২৩ : পাওনাদারকে পরিশোধ ৭,০০০ টাকা।
জুন ২৬ : ৪,০০০ টাকা পণ্য বিক্রয়ের চুক্তি সম্পাদন হলো।
জুন ৩০ : ১৮,০০০ টাকা বেতনে ম্যানেজার নিয়োগ করা হলো।
নমুনা সমাধান
(ক)
আমরা জানি, প্রত্যেকটি লেনদেনই ঘটনা কিন্তু প্রত্যেকটি ঘটনা লেনদেন নয়।
লেনদেনের ধারণা বিশ্লেষণ করলে নিম্নোক্ত প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা
যায় :
১) অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য : লেনদেনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
হলো ঘটনাকে অবশ্যই অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য হতে হবে নতুবা উক্ত ঘটনা লেনদেন
হবেনা। যেমন : ব্যবসায়ের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ অর্থের অঙ্কে পরিমাপযোগ্য না
কিন্তু আগুনে পণ্য বিনষ্ট ২০,০০০ ব্যবসায়ের জন্য বিরাট ক্ষতি যা অর্থের অঙ্কে
পরিমাপযোগ্য।
২) আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন : কোনো ঘটনা দ্বারা যদি ব্যবসায়ের আর্থিক
অবস্থার পরিবর্তন সাধিত হয়, তবেই উক্ত ঘটনা লেনদেন হিসেবে বিবেচিত হবে। যেমন :
৫,০০০ টাকার অফিস সরঞ্জাম ক্রয়।এখানে সরঞ্জাম ক্রয়ের ফলে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ
বৃদ্ধির পাশাপাশি নগদ অর্থ হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ এই ঘটনা দ্বারা প্রতিষ্ঠানের
আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন সাধিত, তাই এটি লেনদেন। কিন্তু আসবাবপত্র ক্রয়ের
ফরমায়েশ প্রদান কেবলমাত্র একটি ঘটনা কারণ উক্ত ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের আর্থিক
অবস্থার পরিবর্তন সাধিত হয়নি।
৩) দ্বৈত স্বত্বা : প্রতিটি লেনদেন দুটি পক্ষ অবশ্যই থাকতে হবে। একপক্ষ
সুবিধাগ্রহণকারী আর অপর পক্ষ সুবিধা প্রদানকারী। যেমন : কর্মচারীর বেতন প্রদান
৩,০০০। এখানে একপক্ষ বেতন হিসাব অন্যপক্ষ নগদান হিসাব।
৪) স্বয়ং সম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্র : লেনদেনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
হলো প্রতিটি লেনদেন স্বয়ং সম্পূর্ণ ও স্বতন্ত্র। অর্থাৎ একটি আরেকটি থেকে
সম্পূর্ণ আলাদা। যেমন-৭,০০০টাকার পণ্য ক্রয় করা হল ও উক্ত টাকা ৭দিন পর প্রদান
করা হলো। এখানে একটি ধারে ক্রয় আর ৭ দিন পর দেনা পরিশোধ আরেকটি লেনদেন।
৫) দৃশ্যমানতা : লেনদেন দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উভয়ই হতে পারে। যেমন :
আসবাবপত্র ক্রয় ৩০০০ টাকা দৃশ্যমান লেনদেন আবার আসবাবপত্রের অবচয় ১০০০ টাকা
একটি অদৃশ্যমান লেনদেন।
৬) ঐতিহাসিক ঘটনা : যেসকল লেনদেন পূর্বে ঘটে গেছে সেগুলোকে ঐতিহাসিক
ঘটনা বলা হয়।ঐতিহাসিক ঘটনাকে লেনদেন বলা হয়। আবার ভবিষ্যতে ঘটতে পারে এমন সব
ঘটনা ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন সাধন করলে সেসকল ঘটনা অবশ্যই লেনদেন
বলে বিবেচিত হবে। যেমন- অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি, বাট্টা সঞ্চিতি।
(খ)
যে সকল ঘটনা লেনদেন তা কারণ সহ ব্যাখ্যা করা হলো :
তারিখ | লেনদেন কিনা |
হিসাব সমীকরণের ভিত্তিতে লেনদেনের কারণসহ ব্যাখ্যা দেয়া হলো |
---|---|---|
২০২০ জুন-১ |
লেনদেন | মূলধন আনয়নের ফলে নগদ ও আসবাবপত্র বাবদ সম্পদ (A) বৃদ্ধি এবং মালিকানাস্বত্ত্ব (E) বৃদ্ধি পেয়েছে। |
জুন-৯ | লেনদেন | ভাড়া পরিশোধের ফলে ভাড়া বাবদ মালিকানাস্বত্ত্ব (E) হ্রাস ও নগদ বাবদ সম্পদ (A) হ্রাস পেয়েছে। |
জুন-২০ | লেনদেন | ধারে ক্রয়ের ফলে ক্রয় বাবদ মালিকানাস্বত্ত্ব (E) হ্রাস ও পাওনাদার বাবদ দায় (L) বৃদ্ধি পেয়েছে। |
জুন-২৩ | লেনদেন | পাওনাদারকে পরিশোধের ফলে নগদান বাবদ সম্পদ (A) হ্রাস ও পাওনাদার বাদা দায় (L) হ্রাস পেয়েছে। |
(গ)
(ঘ)
অধ্যায় ০৬
জাবেদা
অ্যাসাইনমেন্ট :
সহায়ক তথ্য
শামস ব্রাদার্স এর ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের কিছু লেনদেন তুলে ধরা হলো :
জানু ১ : নগদ ৩০,০০০ টাকা, ৪০,০০০ টাকা ব্যাংক জমা ও ১৫,০০০ টাকার পণ্য
নিয়ে ব্যবসায় আরম্ভ করল।
জানু ৫ : পণ্য বিক্রয় ২০,০০০ টাকা, যার ৪০% নগদে।
জানু ৭ : ব্যাংক হতে উত্তোলন করা হলো ১২,০০০ টাকা।
জানু ১০ : প্রচারণা বাবদ ব্যয় ৮,০০০ টাকা।
নমুনা সমাধান
(ক) জাবেদার ধারণা ও গুরুত্ব :
জাবেদার ধারণা : লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে আমাদেরকে যতটক সল্পর
লেনদেনের বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ করতে হয়। লেনদেনের এই বিবরণ প্রাথমিকভাবে প্রথম
জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। লেনদেনের ডেবিট ও ক্রেডিট পক্ষ বিশ্লেষণ করে
তারিখের ক্রমানুসারে ব্যাখ্যা সহকারে জাবেদাতে লিখে রাখা হয় পরবর্তী সময়ে
হিসাবের পাকা বই খতিয়ান প্রস্তুতের ক্ষেত্রে জাবেদা সহায়ক বই হিসেবে কাজ করে।
যার কারণেই জাবেদাকে হিসাবের প্রাথমিক বই বলা হয়। জাবেদা বই সংরক্ষণ
বাধ্যতামলক নয় কিন্তু হিসাব তৈরির সুবিধার্থে জাবেদা প্রয়ােজন। জাবেদায়
লিপিবদ্ধ থাকার কারণে হিসাবে লেনদেন বাদ পড়ার সম্ভাবনা বহুলাংশে হ্রাস
পায়।
জাবেদার গুরুত্ব : প্রতিষ্ঠানের হিসাবের বই নির্ভুল ও স্বচ্ছ হওয়া
অত্যাবশ্যক। এই হিসাবের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফলাফল ও সার্বিক আর্থিক
অবস্থা নিরূপণ করা হয়। হিসাববিজ্ঞানের মুখ্য এই উদ্দেশ্য অর্জনে জাবেদা কীভাবে
সহায়ক ভূমিকা পালন করে, তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলাে :
১. লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ : প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য লেনদেন সংঘঠিত হয়। এই
লেনদেন সংঘঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব না - ও হতে
পারে। জাবেদায় লেনদেন লিপিবদ্ধ থাকলে পরবর্তীতে খতিয়ানে অন্তর্ভুক্তকরণে
কোনাে অসুবিধা হয় না।
২. লেনদেনের মােট সংখ্যা ও পরিমাণ জানা : খতিয়ান হতে নির্দিষ্ট
দিনে, সপ্তাহে বা মাসে কয়টি লেনদেন সংঘঠিত হয়েছে তা জানা সম্ভব নয়। জাবেদায়
লেনদেন তারিখের ক্রমানুসারে লিখা হয় বলে নির্দিষ্ট তারিখে, সপ্তাহে বা মাসে
মােট কয়টি লেনদেন ঘটেছে তা সহজেই জানা যায়। মােট কত টাকার লেনদেন বিভিন্ন
সময়ে হয়েছে, তা -ও জাবেদা থেকে জানা সম্ভব।
৩. দ্বৈত সত্তার প্রয়ােগ নিশ্চিত : দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী
লেনদেন সংশ্লিষ্ট ডেবিট ও ক্রেডিট পক্ষ একত্রে জাবেদায় লিখা হয় ফলে জাবেদা
হতে দ্বৈত সত্তার প্রয়ােগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
৪. লেনদেনের ব্যাখ্যা : লেনদেন সম্পর্কিত কোন সন্দেহ বা প্রশ্ন দেখা
দিলে জাবেদা হতে তার ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব। কারণ জাবেদা বইতে লেনদেন
লিপিবদ্ধের পাশাপাশি লেনদেন সংঘটিত হওয়ার কারণ ও ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়।
৫. ভুল - ত্রুটি হ্রাস : লেনদেন খতিয়ানে অন্তর্ভুক্তির পূর্বে জাবেদায়
লিখা হলে হিসাবে ভুল ত্রুটি ও খতিয়ানে বাদ পড়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
৬. ভবিষ্যৎসূত্র : জাবেদায় লেনদেনসমূহকে তারিখের ক্রমানুসারে
সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে লিখে রাখা হয়। ভবিষ্যৎ যেকোনাে প্রয়ােজনে জাবেদা দলিল
প্রমাণস্বরূপ ব্যবহার করা যায়।
৭. পাকা বহির সহায়ক : জাবেদা খতিয়ানের সহায়ক বইস্বরূপ কাজ করে
বিধায়, খতিয়ান প্রস্তুত সহজ, পরিচ্ছন্ন ও নির্ভুল হয়।
(খ) বিশেষ জাবেদার শ্রেণিবিভাগকরণ :
ব্যবসায়ের প্রায় সমস্ত লেনদেনই নিচে উল্লেখিত কোনাে একটি বিশেষ জাবেদায় লিখা
হয়।
১. ক্রয় জাবেদা : ক্রয় জাবেদায় প্রতিষ্ঠানের সকল বাকিতে পণ্য
ক্রয় লিপিবদ্ধ করা হয়।
২. বিক্রয় জাবেদা : বিক্রয় জাবেদায় প্রতিষ্ঠানের সকল বাকিতে পণ্য
বিক্রয় লিপিবদ্ধ করা হয়।
৩. ক্রয় ফেরত জাবেদা : বাকিতে ক্রয়কৃত পণ্য ফেরত দেওয়া হলে কয় ফেরত
জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়।
৪. বিক্রয় ফেরত জাবেদা : বাকিতে বিক্রয়কৃত পণ্য ফেরত পাওয়া গেলে
বিক্রয় ফেরত জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়।
৫. নগদ প্রাপ্তি জাবেদা : যে সকল লেনদেনের দ্বারা নগদ প্রাপ্তি ঘটে (নগদ
পণ্য বিক্রয়সহ), তা নগদ প্রাপ্তি জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়।
৬. নগদ প্রদান জাবেদা : যে সকল লেনদেনের দ্বারা নগদ প্রদান ঘটে (নগদ
পণ্য ক্রয়সহ), তা নগদ প্রদান জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়।
(গ) প্রকৃত জাবেদার শ্রেণিবিভাগকরণ :
সাধারণ জাবেদা ও প্রকৃত জাবেদা একই অর্থবােধক। যে সকল লেনদেন বিশেষ জাবেদায়
অন্তর্ভুক্ত হয় না সে সকল লেনদেন প্রকৃত জাবেদায় অন্তর্ভুক্ত হয়।
১. সংশােধনী জাবেদা লেনদেন লিপিবদ্ধকরণে কোনাে ভুল সংঘটিত হলে হিসাবে কাটা -
হেঁড়া করে ঠিক করা যায় না। জাবেদা দাখিলার মাধ্যমে উক্ত ভুল সংশােধন করতে
হয়। ভুল সংশােধনের জন্য যে জাবেদা দাখিলা প্রদান করা হয় তা -ই সংশােধনী
জাবেদা।
২. সমন্বয় জাবেদা : আর্থিক ফলাফল নিরূপণের জন্য আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত
করা হয়। আর্থিক বিবরণী প্রত্যুতের সময় বকেয়া বা অগ্রিম খরচ, প্রাপ্য অথবা
অগ্রিম প্রাপ্ত আয়, অবচয় বা অবলােপন, কুঋণ সঞ্চিতি ইত্যাদি লেনদেনের প্রাথমিক
হিসাব বইতে অন্তর্ভুক্তির জন্য যে জাবেদা প্রস্তুত করা হয়, তাই সমন্বয়
জাবেদা।
৩. সমাপনী জাবেদা : কোন নির্দিষ্ট বছরের মুনাফা জাতীয় আয় ও ব্যয়
পরবর্তী বছরের হিসাবে কোনাে প্রভাব ফেলবে না। তাই আর্থিক বিবরণী প্রতুতের সময়
মুনাফা জাতীয় আয় ও ব্যয় হিসাবসমূহ বন্ধ করে দিতে হয়। হিসাব অধ্যায়ে আমরা
জেনেছি, আয় হিসাব ক্রেডিট ও ব্যয় হিসাব ডেবিট উদ্বৃত্ত প্রকাশ করে। মুনাফা
জাতীয় আয় ও ব্যয় হিসাব বন্ধ করার জন্য আয় হিসাব ডেবিট ও ব্যয় হিসাব
ক্রেডিট করতে হবে। তাছাড়া সমাপনী জাবেদার মাধ্যমে উত্তোলন হিসাবও বন্ধ করা
হয়।
৪. প্রারম্ভিক জাবেদা : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান একটি চলমান প্রক্রিয়া।
বিগত বছরের হিসাবকালের শেষ দিনের সম্পদ, দায় ও মালিকানা স্বত্বের পরিমাণ
পরবর্তী বছরের শুরুতে হিসাবে নিয়ে আসার জন্য প্রারম্ভিক দাখিলা প্রদান করা
হয়।
৫. অন্যান্য জাবেদা : বিশেষ জাবেদার লেনদেনসমূহ এবং প্রকৃত জাবেদার
উল্লিখিত চার ধরনের লেনদেন ছাড়াও ব্যবসায়ে কতিপয় লেনদেন সম্পন্ন হয়, যেমন
ধারে সম্পত্তি ক্রয় - বিক্রয়, বাট্টা প্রদান ও বাট্টা প্রাপ্তি, পণ্য বিতরণ
প্রভৃতি। এসব লেনদেনও প্রকৃত জাবেদায় লিপিবদ্ধ হয়।
(ঘ) লেনদেনসমূহের জাবেদাভুক্তকরণ :
আরো দেখুন :
১ম সপ্তাহের নমুনা সমাধান :