ভূমিকা : আধুনিক উৎপাদন বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার 'বিজ্ঞাপন' একটি জনপ্রিয় ধারা। পণ্যসেবা কিংবা কোনো নতুন ধারণা প্রচার মাধ্যম ব্যবজাত করে জনসাধারণকে জানানোর ব্যবস্থাই বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন বিশেষ একধরনের শিল্প, সাহিত্য ও চিত্রায়ণ, আর সবকিছু মিলে বিচিত্র এক সংস্কৃতি। বিজ্ঞাপনের বৈচিত্র্য, ব্যাপকতা ও প্রচার মাধ্যমের বুহুত্বও লক্ষণীয়। ভোগ্যপণ্য - সমৃদ্ধ আধুনিক জীবনযাত্রায় বিজ্ঞাপনের আছে বিশিষ্ট ভূমিকা।
বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব ও উপযোগিতা : যে কোনো মানুষ - সে শিশু, যুবক, বৃদ্ধ, যেই হোক না কেন, তার প্রাত্যাহিক জীবনে ব্যবহার্য বস্তুর সঙ্গে বিজ্ঞাপনের আত্নিক যোগ যেন ফুলের গভীরে ডুবে থাকা সৌরভ। বিজ্ঞাপন ব্যক্তিকে বস্তুর গুণ, মান, ব্যবহার প্রণালী, স্থায়ীত্ব প্রভৃতি ব্যবহার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে। বিজ্ঞাপন অনভ্যস্ত দ্রব্য ব্যবহারের মানসিকতা তৈরি করে রুচির পরিবর্তন ঘটায়; একই ধরনের বস্তু থেকে নিজের পছন্দটি বেছে নিতে সাহায্য করে। বাজারে কোন নতুন সামগ্রী এলেই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই সে সম্পর্কে জানতে পারে মানুষ। বিজ্ঞাপন প্রচার মাধ্যমগুলোর মোটা অর্থ আসে বিজ্ঞাপন থেকে। বিজ্ঞাপনের উপর অনেকের জীবিকা নির্ভরশীল। বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যম হিসেবে দেয়ালে লিখে, হ্যান্ডবিল-লিফলেট ছাপিয়ে, পোস্টার সেঁটে, হোডিং ফেস্টুন তৈরি করে বেশ কিছু লোক জীবিকা অর্জন করে। পত্র-পত্রিকার বিজ্ঞাপন বিভাগে ও বেতার টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন কার্যক্রম রূপায়ণে অনেকে থাকে কর্মরত। যে বিজ্ঞাপনই প্রচারিত হোক, তার জয় বহন করতে হয় বিজ্ঞাপন দাতাকে।
বিজ্ঞাপনের আদি মাধ্যম : শিক্ষাসভ্যতা, জ্ঞানবিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মানুষের রুচি ও তার শিল্পবোধ পাল্টায়, আর এ পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে বিজ্ঞাপন প্রকাশ মাধ্যম, আকৃতি, প্রকৃতি ও শিল্পশৈলীর ওপর। হাঁক-ডাক করে প্রচার করা ছিল বিজ্ঞাপনের আদিকালের মাধ্যম। হাট-বাজারে, পথে ঘাটে, যানবাহনে খালি গলায় বা চোঙা ফুঁকে পণ্যসামগ্রীর গুনাবলি প্রচার করা হতো। এখনও ঐ রীতির প্রচলন আছে, তবে মাইক্রোফোনর সাহায্যে বা রেকর্ড করা ক্যাসেট বাজিয়ে বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। সুরেলা বাকবিন্যাস, চটুল কথার ফুলকরি, নাটকীয়তার চমৎকারিত্ব-এ জাতীয় প্রচারকৌশল বিজ্ঞাপনের আকর্ষণীয় দিক।
বিজ্ঞাপন ও বিবিধ মাধ্যম : হ্যান্ডবিল, লিফলেট, দেয়াল লিখন, পোস্টার হোডিং, ফেস্টুন প্রভৃতির মাধ্যমেও বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। হাটে-বাজারে,রাস্তার মোড়ে, গলিতে, জনবহুল লোকালয়ে, পার্কে, খেলার মাঠে এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রায়শ চোখে পড়ে। রঙের বৈচিত্র্য ও গাঢ়তা, হস্তাক্ষরের নানা কৃৎকৌশল, ভাষার প্রয়োগকৃতিত্ব, চিত্রায়ণের শিল্প চাতুর্য এ শ্রেণির বিজ্ঞাপনের বৈশিষ্ট্য। জনসাধারণের নিত্য আনাগোনার অবকাশে এগুলো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
পত্রপত্রিকার বিজ্ঞাপন : খবরে কাগজ ও সাময়িক পত্রে বিজ্ঞাপন বিশিষ্ট স্থান করে নিয়েছে। খবর পড়ার ফাঁপে ফাঁকে পাঠক বিজ্ঞাপনের ওপর চোখ বুলিয়ে নেয়। তা ছাড়া প্রয়োজনানুযায়ী পাঠক বিশেষ বিশেষ বিজ্ঞাপনের প্রতি আকৃষ্ট হন। পত্র-পত্রিকা খুলেই চোখে পড়ে যে বিজ্ঞাপনগুলো, তা হলো- কর্মখালি, বিবাহ্যোগ্য পাত্র-পাত্রী, খেলাধুলা, যাত্রা, সিনেমা, থিয়েটার প্রদর্শনী, মেলা উৎসব, পুঁথিপত্র, লটারি, শেয়ার বাজার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা প্রভৃতি। রঙিন ক্রোড়পত্রগুলো বিজ্ঞাপনকে আরো দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে।
বেতার ও টেলিভিশন বিজ্ঞাপন : বেতার ও টেলিভিশন শ্রেষ্ঠ গন্যমাধ্যম। এই দুইপ্রচার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা সর্বাধিক। আর সেজন্য এ মাধ্যমগুলোর বিজ্ঞাপন প্রচারের ব্যাপক চাহিদাও রমরমা। ছড়ায়, গানে, কবিতায় ও ভাষ্যে বিজ্ঞাপনগুলো খুবই আকর্ষণীয়। টেলিভিশনে দৃশ্যপট দৃষ্টিগ্রাহ্য হওয়ায় তা আরও হৃদয়গ্রাহী।
শিল্প ও সাহিত্য : বিজ্ঞাপন বাণিজ্যিক শিল্পের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। গ্রাফিক শিল্পকাজও এর সঙ্গে যুক্ত। এ নিয়ে শিল্প জগতে পরীক্ষা-নিরিক্ষার অন্ত নেই। বিজ্ঞাপনের সংক্ষিপ্ত পরিসরে সাহিত্যের প্রকাশও ক্ষেত্রবিশেষ দেখা যায়। বিজ্ঞাপন ক্রোড়পত্রের গল্প, কবিতা, ছড়া প্রকাশিত হয়।
উপসংহার : বিজ্ঞাপনের সঙ্গে সাহিত্য, শিল্পকলা ও সংস্কৃতি আংশিকভাবে জড়িত। বহুমানুষের জীবিকা নির্ভর করায়, প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত সামগ্রীর প্রচারে প্রত্যক্ষভাবে যোগসূত্র রচনা করায়, এ শিল্পটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন শিল্পের যে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে নির্মাণে বিজ্ঞাপনদাতাকে সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। নিছক প্রচরণা হলেও তা যেন হয় দেশি সংস্কৃতি নির্ভর ও রুচিশীল ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।