'বিজয়' শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।
বিজয়
আনন্দের মধ্যেও অমলের চোখ জলে ভরে উঠেছে। অমলের ইচ্ছে করছে তার দলের সব খেলোয়াড়দেরকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে। তাদের ক্রিকেটের দলটাকে মানসিকভাবে তৈরি করা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সবকিছুর পেছনে রয়েছে তা অক্লান্ত পরিশ্রম। অমল জানতো ভালো কোনোকিছুই সহজে লাভ করা যায় না। সেই পরিশ্রমের ফলই হাতে পেয়েছে তারা। প্রায় বছর পাঁচেক আগের কথা, তাদের গ্রামের প্রায় দুই গ্রামের পরের এক খেলোয়াড়কে তাদের গ্রামের হয়ে খেলার জন্য ভাড়া করতে যায়। কিন্তু সেই খেলোয়াড় খেলতে তো আসেই না, বরং অনেক বেশি টাকা চেয়ে নানান কথা বলে অমলকে অপমান করে। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা আর ভেতরের আত্ম-সম্মানবোধ তাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেয়। অমল মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে একদিন সে এমন একটা দল তৈরি করবে যা দেখে চারপাশের এলাকার সবাই বিস্মিত হয়ে যাবে। তখন সে বাড়িতে কিছু না বলে চলে যায় ঢাকায়। পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয় বিকেএসপিতে। এ খবর জেনে পরিবারে সবাই ভীষণ খুশি হয়। একসময় খেলাটা সে শেখে পাকাপোক্তভাবে।
তারপর সে গ্রামে ফিরে আসে। শুরু করে গ্রাম থেকে খেলোয়াড় নির্বাচন। কৃষক, জেলে, ভ্যানচালক, মুদি দোকানদার এ রকম বিশজন মানুষকে বেছে বের করে ট্রেনিং দিতে শুরু করে অমল। শত অসুবিধা মোকাবিলা করে ট্রেনিং নেয় সে ছেলেগুলো। নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে শুনতে হয় মানুষের নানান সমালোচনা। তবুও তারা তাদের শেখা বন্ধ করে না। নিজেদের কাজের পাশাপাশি তারা একেক জন একেক বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠার চেষ্টা করে। কেউ ব্যাট করে, কেউ বল। আবার মাঝে মাঝে আশে পাশে এলাকার ছেলেদের সাথে ম্যাচ খেলে। এত পরিশ্রম করার সত্ত্বেও কোন না কোন কারণে তারা হেরে যায়। এরপর লোকের মুখে শুনতে হয় নানান সমালোচনা। কিন্তু অমলরা থেমে যায় না। তারা নতুন উদ্যামে আবার প্র্যাকটিস শুরু করে। এবার অমলের জীবনে একটি বিশেষ সুযোগ আসে। সে খেলার সুযোগ পায় সেই খেলোয়াড়ের বিপক্ষে যাকে বছর পাঁচেক আগে সে ভাড়া করতে গিয়ে অপমানিত হয়েছিল। এবার সে জান প্রাণ দিয়ে খেলবে বলে প্রতিজ্ঞা করে, আর দলের সবাইকে সে ঘটনা খুলে বলে। সবার মধ্যেই এক ধরনের জেদ তৈরি হয় ম্যাচ জেতার। আজ সেই জেদই বিজয়ী হয়ে অমলের চোখ থেকে আনন্দের অশ্রু পড়ছে।
Very inspirational story
ردحذف